• Top News

    ‘সরকারি নির্দেশ মানলে তো পেট চলবে না’

      প্রতিনিধি ২২ জানুয়ারি ২০২২ , ১০:২৭:৩০ প্রিন্ট সংস্করণ

    ছবি-সংগ্রহীত

    (দিনাজপুর২৪.কম) শুক্রবার বেলা বিকেল ৪টা রাজধানীর ফার্মগেট মোড়ে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছে আয়াত পরিবহনের একটি বাস। বাসে উঠে দেখা গেল প্রতিটি আসনেই যাত্রী। ফার্মগেটে যাদের ওঠানো হচ্ছে তাদের দাঁড়িয়ে নেয়া হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর বাসটি যখন বাংলামোটর এসে পৌঁছাল তখন বাসটিতে পা রাখার জায়গা নেই। তবুও যাত্রী তোলার জন্য পাঁচ মিনিটের বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকে বাসটি।

    এ সময়  যাত্রীরা প্রতিবাদ করলে তেড়ে আসেন বাসের চালকের সহকারী শাকিল। বাসে যত সিট তত যাত্রী নেয়ার কথা বলা হলেও কেন বেশি যাত্রী তোলা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে শাকিল বলেন, যেতে না চাইলে বাস থেকে নেমে যান। আপনার কাছে কৈফিয়ত দিতে পারব না। বাস ভর্তি না হওয়া পর্যন্ত যাত্রী তোলা হবে।

    এ সময় বাসের চালক ও সহকারীকে মাস্ক পড়তে দেখা যায়নি। বাসে থাকা যাত্রীদের মধ্যেও অনেকের মাস্ক ছিল না। মাস্ক ব্যবহার না কারণ জানতে চাইলে বাসটির চালক বলেন,  দিনে ৮-১০ ঘণ্টার বেশি সময় বাস চালাতে হয়। এত সময় মাস্ক পরে থাকা যায় না। যাত্রীরা না পরলে আমরা কি করব।

    নির্দেশনার পরও কেন অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যাত্রীরা নিজ থেকে উঠে। আমরাতো জোড় করে তুলছি না। আর আজকে বাস কম তাই যাত্রী বেশি মনে হচ্ছে।

    শুধু আয়াত পরিবহন নয় একই অবস্থা দেখা যায় লাব্বাইক, এম এম লাভলি, বলাকা, সায়মা, গাবতলি এক্সপ্রেস, অনাবিল, বিহঙ্গসহ বেশির ভাগ পরিবহনে। এসব বাসে ঠাসাঠাসি করে যাত্রী তোলা হয়েছে। বাসের বেশির ভাগ চালক অথবা সহকারীকে মাস্ক পরতে দেখা যায়নি। ছিল না স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা।

    রাজধানীর পল্টন, শাহবাগ, বাংলামোটর, ফার্মগেট সকাল থেকে ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ বাস  অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছে। বিকেল পাঁচটায় বাংলামোটর এলাকায় দেখা যায় লাব্বাইক পরিবহনের সবগুলোতে অতিরিক্ত যাত্রীতে ঠাসা। চালক-সহকারীর মুখে মাস্ক নেই। এই কোম্পানির একটি বাসের সহকারীর মঞ্জুর সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের ।

    তিনি বলেন, যাত্রাবাড়ী থেকে আসার সময় মাত্র ১০ জন যাত্রী পেয়েছি। মৌচাক আসার পর চাকরির পরীক্ষার্থীরা গাদাগাদি করে বাসে উঠেছে। আমাদের কিছু করার নেই। মুখে কেন মাস্ক নাই জানতে চাইলে তিনি বলেন, যাত্রীদের হুড়োহুড়িতে মাস্ক পড়ে গেছে।

    অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের কারণ জানতে চাইলে শাহবাগ মোড়ে গাবতলী এক্সপ্রেস পরিবহনের চালক বলেন, সকালে এক ট্রিপ দিয়ে ভাতের টাকা জোগাড় হয়নি। শুক্রবার যাত্রী কম। বিকেলে কিছু যাত্রী পেয়েছি। সরকারি নির্দেশ মানলেতো পেট চলবে না।

    মুখে মাস্ক না থাকার কারণ জানতে চাইলে বাসের এক যাত্রী বলেন, বাসে এত যাত্রী দম নিতে কষ্ট হয়। তাই মাস্ক খুলে পকেটে রেখে দিয়েছেন। একই বাসের সহকারী নজরুলের মুখেও মাস্ক ছিল না। তিনি বলেন, মাস্ক পরে কথা বললে যাত্রীরা শুনে না।

    গত ১৫ জানুয়ারি থেকে পরিবহনমালিকদের দাবি মেনে  ‘যত সিট তত যাত্রী’ নিয়ে বাস চলাচলের সিদ্ধান্ত দেয় সরকার। তবে কোনোভাবেই বাসে দাঁড়িয়ে যাত্রী বহন করা যাবে না বলে নির্দেশনা দেয়া হয়। বাসে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। গাড়ির চালক, সহকারী ও যাত্রীদের মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়। তবে এসবের কোনো কিছুই বেশির ভাগ পরিবহনগুলোতে মানতে দেখা যায়নি।

    এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, সকালে অফিস চলাকালে যাত্রীদের চাপ বেশি থাকে। যে পরিমাণ যাত্রী থাকে সে পরিমাণ গণপরিবহন নেই। যে কারণে আসনের চেয়ে বেশি যাত্রী পরিবহন করতে হয়। যাত্রীরাও বাধ্য হয়ে পরিবহনে উঠে পড়েন।

    তিনি বলেন, অতিরিক্ত যাত্রী যাতে পরিবহন করা না হয় সে জন্য সব মালিক ও শ্রমিকদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তদারকি করছে। -অনলাইন ডেস্ক

    মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।

    আরও খবর

    Sponsered content