প্রতিনিধি ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ , ৫:০২:১০ প্রিন্ট সংস্করণ
(দিনাজপুর২৪.কম) নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনায় করা মামলায় নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার ঘোষনগর ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামে গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে। পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে গত ৫ জানুয়ারি পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মামলা দায়েরের পর থেকে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
নির্বাচনের দিন ঘোষনগর ইউনিয়নের দুটি কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় পরদিন ৬ জানুয়ারি পত্নীতলা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রিমন দত্ত বাদী হয়ে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারজানা পারভীন ও তার স্বামী মতিউর রহমানসহ ১১৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত দুই থেকে আড়াই হাজার জনকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলায় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারজানা পারভীনসহ এ পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি পোড়ানোর ওই এক মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে এক মাস ধরে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে ঘোষনগর ইউিনিয়নের কমলাবাড়ী, আমেদাপুর, গবরাকুড়ি, জামগ্রাম ফকিরপাড়া ও কুলিবাড়ি গ্রাম। বন্ধ রয়েছে ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান। এছাড়া বাড়িতে পুরুষ না থাকায় মাঠে বোরো ধানের চারা লাগাতে পারছে না অধিকাংশ পরিবার। এমন পরিস্থিতিতে ঘোষনগর ইউনিয়নের ওই পাঁচটি গ্রামের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
এদিকে, সহিংসতার ঘটনায় স্থগিত হয়ে যাওয়া ঘোষনগর ইউনিয়নের কমলাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ঘোষনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পুনরায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) কেন্দ্র দুটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গ্রেপ্তার আতঙ্কের কারণে অধিকাংশ ভোটারদের কেন্দ্রে আনাকে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা।
সাধারণত সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জমজমাট থাকে মাতাজীহাট-ফতেপুর সড়কের কমলাবাড়ী মোড়। ওই মোড়টিই নির্বাচনের দিনের সহিংসতার ঘটনাস্থল। কিন্তু কমলাবাড়ী মোড় মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, চারটি মার্কেটের প্রায় ৩০টি আধাপাকা দোকানের সবগুলো বন্ধ। রাস্তাতেও কোনো লোকজন নেই। জমজমাট মোড়টিতে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। ওই মোড় থেকে ২০-৩০ হাত দূরেই রাস্তার ওপর পোড়া অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়, একটি পুলিশ ভ্যান ও পুলিশের রিকুইজিশন করা একটি মাইক্রোবাস। কমলাবাড়ী মোড় থেকে পূর্ব দিকে আধাকিলোমিটার দূরে কমলাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ঘোষনগর ইউপির সাত নম্বর ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্র এটি। স্কুলের পাশেই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারজানা পারভীনের বাড়ি। বাড়িটির একাংশে পোড়া টিন, কাঠ ও মালামাল পড়ে আছে।
কমলাবাড়ী গ্রামের ভেতরে গিয়ে দেখা মিলল কয়েকজন নারী ও শিশুর। তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে ভয়ে কেউ কথা বলতে রাজি হলেন না। সবার চোখে-মুখে ছিল ভীতি। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে শিউলী খাতুন (৪৫) বলেন, হামার পুরুষ (স্বামী) কমলাবাড়ি মোড়ে সাইকেলের ম্যাকারির কাজ করে। মারামারির পর থেকে গ্রেপ্তারের ভয়ে বাড়িত আসে না। ১৬ বছরের ব্যাটা (ছেলে) সেও পালায়ে পালায়ে থাকে। আয়-রোজগার সব বন্ধ হয়ে গেছে। এক মাস ধরে কিভাবে দিন য্যাচ্ছে আল্লাই তা জানে।
কমলাবাড়ী মোড় মার্কেটের দোকানদার আব্দুস সামাদকে দোকান খুলে কিছু পণ্যসামগ্রী নিয়ে যেতে দেখা যায়। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারের ভয়ে নিজের দোকান থেকেই চোরের মতন জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছি। অথচ আগে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এসব দোকান খোলা থাকত। এগুলো মূলত মুদি ও খাবারের দোকান। কিন্তু নির্বাচনের দিনের সহিংসতার ঘটনার পর ভয়ে কেউ দোকান খুলছেন না। যখন-তখন পুলিশ গ্রামে আসতেছে। জমিতে ধান লাগানোর সময় মাঠ থেকে আমেদাপুর, গবরাকুড়ি ও জামগ্রাম থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে পুলিশ। পুনরায় ভোটের দিন ঘোষণা হওয়ার পর পুলিশের আনাগোনা আরও বেড়ে গেছে।
৫ জানুয়ারি ভোটের ফলাফল ঘোষণা না করেই ঘোষনগর ইউনিয়নের কমলাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ঘোষনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণা না করেই কেন্দ্র ত্যাগ করার চেষ্টা করে। এ সময় কেন্দ্র দুটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা পুলিশের সহযোগিতায় কেন্দ্র ত্যাগের চেষ্টা করলে কমলাবাড়ি মোড়ে কেন্দ্রের আশপাশে থাকা কয়েক হাজার মানুষ তাদের পথরোধ করেন। এসময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। উত্তেজিত জনতা একটি পুলিশ ভ্যান ও রিকুইজিশন করা একটি মাইক্রোবাসে আগুন ধরিয়ে দেয়।
পত্নীতলা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাবিবুর রহমান বলেন, পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এজহারভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এছাড়া তদন্তে পাওয়া তথ্যানুসারে, এ ঘটনায় আরও যারা সম্পৃক্ত থাকতে পারেন বলে মনে হয় তাদেরকেও চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় নিরীহ কাউকে হয়রানি করা হবে না।-অনলাইন ডেস্ক