প্রতিনিধি ১ মার্চ ২০২২ , ১২:২১:৩২ প্রিন্ট সংস্করণ
(দিনাজপুর২৪.কম) এমন পাগলামি পুতিন করতেই পারেন না। প্রতিবারই হয়ত আপনি ভেবেছেন- এসব শুধুই ধাপ্পা; কিন্তু ঠিক সেটাই তিনি করেছেন।
আপনি ভেবেছেন- পুতিন কখনোই ক্রিমিয়া দখল করবেন না। তিনি সেটা করেছেন।
আপনি ভেবেছেন- ক্রিমিয়ায় যাই হোক, দনবাসে পুতিন যুদ্ধ শুরু করবেন না। তিনি সেটাই করেছেন।
ইউক্রেইনে পুতিন সত্যি সত্যি সামরিক অভিযান শুরু করে দেবেন- এটাও বিশ্বাস হয়নি আপনার। কিন্তু সেটাও তিনি করেছেন।
মস্কোয় বিবিসির সাংবাদিক স্টিভ রোজেনবার্গ এ ধাঁধার উপসংহার টানতে চেয়েছিলেন এভাবে- ‘তিনি কখনোই এটা করবেন না’ – এমন কথা অন্তত পুতিনের বেলায় বলা যাবে না।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিশ্চয় পারমাণবিক বোমার বোতাম চেপে দেবেন না। আসলেই তিনি সেটা করবেন? তিনি সেটা করতে পারেন না।
“কেউ যদি বাইরে থেকে এর মধ্যে নাক গলানোর কথা ভাব, সে তুমি যেই হও, এমন এক পরিণতি তোমাকে ভোগ করতে হবে, যা ইতিহাসে কেউ কখনও করেনি।”
পুতিনের ওই কথায় পারমাণবিক অস্ত্রেরই প্রচ্ছন্ন হুমকি দেখতে পাচ্ছেন রাশিয়ার নোভায়া গেজেটা পত্রিকার প্রধান সম্পাদক দিমিত্রি মুরাতভ, যিনি গতবছর শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন।
তিনি বলেন, “টেলিভিশনের ওই ভাষণে পুতিনকে ক্রেমলিনের কর্তা বলে মনে হয়নি, মনে হয়েছে তিনি বোধ হয় এই পৃথিবীটারই মালিক। নতুন গাড়ির মালিক যেভাবে আঙুলের ডগায় গাড়ির চাবির রিং ঘুরিয়ে সবাইকে দেখাতে চায়, পুতিনও সেভাবে পারমাণবিক বোমার বোতাম দেখালেন।
“তিনি বহুবার বহু জায়গায় বলেছেন, ‘রাশিয়া যদি না থাকে, তাহলে এই দুনিয়ার দরকারটা কী?’ সেসব কথায় কেউ গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু কোনো কিছু রাশিয়ার মন মত না হলে বাকি সব ধ্বংস হয়ে যাবে- এটা তো একটা হুমকি।”
গেলো, ২০১৮ সালে একটি তথ্যচিত্রে পুতিন বলেছিলেন, “কেউ যদি রাশিয়ার ওপর টেক্কা দিতে চায়, তার জবাব দেওয়ার বৈধ অধিকার আমাদের আছে। হ্যাঁ, হতে পারে সেটা এই মানবজাতি আর এই বিশ্বের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে। কিন্তু আমি তো রাশিয়ার নাগরিক এবং এ দেশের রাষ্ট্রপ্রধান।
চার বছর পর এখন চলছে ২০২২ সাল। ইউক্রেইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছেন পুতিন। কিন্তু ইউক্রেইনের সৈন্যরা প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। ক্রেমলিনকে অবাক করে দিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো অনেক বেশি একজোট হয়ে গেছে। তারা একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যাচ্ছে মস্কোর বিরুদ্ধে, যার লক্ষ্য রাশিয়াকে পুরো বিশ্ব থেকে আলাদা করে ফেলা, অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়া। আর সেটা যদি হয়, তাহলে পুতিনের বানানো রুশ কাঠামোই হুমকির মধ্যে পড়ে যাবে।
সব মিলিয়ে পুতিন এখন বেশ চাপের মধ্যে আছেন বলেই মনে করছেন মস্কোভিত্তিক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক পাভেল ফেলজেনহাওয়ার।
“তার হাতে বিকল্প আসলে খুব বেশি নেই। পশ্চিমারা যখন রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক সম্পদ জব্দের সিদ্ধান্ত কার্যকর করবে, রাশিয়ার আর্থিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার মত দশা হবে।
“তার হাতে একটা অস্ত্র এখনও আছে, সেটা হল ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া। তিনি হয়ত ভাবতে পারেন যে গ্যাস আটকে দিলে ইউরোপ রণে ভঙ্গ দেবে।
“আরেকটা বিকল্প হল, ব্রিটেন আর ডেনমার্কের মাঝামাঝি উত্তর সাগরে কোথাও একটা পারমাণবিক বোমা ফাটিয়ে দিয়ে পুতিন দেখতে পারেন, তার ফল কী হয়।”
এখন পুতিন যদি শেষ পথটাই নেন, অর্থাৎ পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন, তার ঘনিষ্ঠ মহলে কেউ কি নেই, যিনি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করতে পারেন, তাকে থামানোর চেষ্টা করতে পারেন?
আর রাশিয়া যদি হেরে যায়, কিংবা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ে, ক্রেমিলন তখন মরিয়া হয়ে ভয়ঙ্কর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে। এই ভয়টা থাকছেই। বিশেষ করে, ‘তিনি কখনোই এটা করবেন না’ – এমন আস্থা যদি পুতিনের বেলায় রাখা না যায়। -অনলাইন ডেস্ক