প্রতিনিধি ২৯ মার্চ ২০২২ , ৯:০৮:২৪ প্রিন্ট সংস্করণ
মাহবুবুল হক খান (দিনাজপুর২৪.কম) দিনাজপুরে বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী তাবলীগ জামাতের জেলা ইজতেমা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। দিনাজপুর শহরের পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত পূণর্ভবা নদীর চরে কাঞ্চন সেতুর দক্ষিণে এই ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে ২ এপ্রিল শনিবার জোহরের নামাজের পূর্বে আখেরী মুনাজাতের মাধ্যমে জেলা এজতেমা শেষ হবে। এজতেমায় আগত মুসল্লিদের জন্য প্যান্ডেল তৈরীর কাজ মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) বেলা ১২টা পর্যন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তাবলীগ জামাতের সাথীরা স্বেচ্ছাশ্রমে এজতেমার প্যান্ডেল তৈরীসহ অন্যান্য সব কাজ করেছেন।
দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলাসহ আশপাশের অন্যান্য জেলা-উপজেলা হতে আগত তাবলীগ জামাতের সাথীদের নিয়ে এই ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। শুক্রবার ইজতেমা প্যান্ডেলে জুমার নামাজ আদায় করা হবে। এটি জেলার সর্ববৃহৎ জুমার নামাজের জামাত হবে বলে জানিয়েছেন তাবলীগ জামাতের কয়েকজন মুরব্বি। ইজতেমায় বিদেশ হতে আগত একটি বা দুইটি জামাত অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে।
দিনাজপুর তাবলীগ জামাতের আমীরে ফায়সাল (দায়িত্বশীল) আলহাজ্ব মোঃ মেহেরুল ইসলাম জানান, ঢাকার কাকরাইল থেকে তাবলীগ জামাতের মুরব্বিদের মধ্যে কয়েকজন এই এজমেতায় আসার কথা রয়েছে। তবে কে কে আসবেন এ ব্যাপারে এখনো কিছু বলা যাবে না। ঢাকার কাকরাইলের কয়েকজন মুরব্বিসহ স্থানীয় মুরব্বিরা ইজমেতায় মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বয়ান (আলোচনা) করবেন।
আলহাজ্ব মোঃ মেহেরুল ইসলাম আরো জানান, মানুষকে দ্বীনের পথে উদ্বুদ্ধ করতে, আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীর দিকে রুজু করতে, কিভাবে মানুষকে আখেরাতমূখী করা যায়, আখেরাতের জিন্দেগী বা মৃত্যুর পরবর্তি জীবন কেমন হবে, মানুষের মাঝে হক তথা সঠিক পথ কবুল করার যোগ্যতা তৈরী এ সব বিষয়ে এই ইজতেমায় বয়ান (আলোচনা) করবেন তাবলীগ জামাতের মুরব্বিরা।
মোঃ জাহাঙ্গীর আলম নামে তাবলীগ জামাতের একজন মুরব্বি জানান, ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের জন্য নদীর চরে খোলায় জায়গায় প্যান্ডেল তৈরীর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বুধবারের মধ্যে সব কাজ শেষ হয়েছে। কত লোক আসবে তা বলা যাবে না। তবে যে প্যান্ডেল তৈরী করা হয়েছে প্রয়োজন হলে তার বাইরে প্যান্ডেল তৈরীর জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি রাখা আছে। তৈরী প্যান্ডেলে ২৫/৩০ হাজার মুসল্লি অবস্থান করতে পারবেন বলে জানান তিনি।
এদিকে ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের জন্য এরই মধ্যে অজু-গোসলের পানি সরবরাহের জন্য ২০টি টিউবওয়েল, একটি সাবমারসেবল পাম্প, ৩টি মটর স্থাপন করা হবে। লাইটিংয়ের জন্য বৈদ্যতিক জেনারেটর বসানো হবে। এছাড়া নিরাপদ স্যানিটেশনের জন্য দুই শতাধিক টয়লেট তৈরা করা হয়েছে। বিদেশী মেহনান ও তাবলীগ জামাতের বৃদ্ধ সাথীদের জন্য মাঠের দক্ষিণ পাশে খাস কামরা (বিশেষ কক্ষ) তৈরী করা হয়েছে। এই খাস কামরায় আগত বিদেশী মেহমান ও তাবলীগ জামাতের বৃদ্ধ সাথীরা থাকবেন বলে তাবলীগ জামাতের জিম্মাদাররা (দায়িত্বশীল) জানিয়েছেন।
ইজতেমায় প্যান্ডেল তৈরী, টয়লেট নির্মাণ, নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য টিউবওয়েল স্থাপন, বিদ্যুৎ সংযোগসহ অন্যান্য বিভাগের জন্য আলাদা আলাদা জিম্মাদার (দায়িত্বশীল) নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। আর এসব স্থাপনের সব ধরনের খরচ তাবলীগ জামাতের সার্থীরা নিজ উদ্যোগে করেছেন। কারো নিকট থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা নেয়া হয়নি। একমাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশি ও সওয়াবের আশায় সবাই স্বেচ্ছায় এসব কাজ করেছেন তাবলীগ জামাতের সাথীরা।
এদিকে ইজতেমা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ইজমেতা মাঠে অবস্থানের জন্য আগত মুসল্লিদের জন্য চাটাইসহ অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে ইজতেমা মাঠের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে পাশে দোকানীরা তাদের দোকান সাজিয়েছেন। টুপি, তসবিহ, জায়নামাজ, মেছওয়াকসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রির জন্য দোকানীরা এরই মধ্যে তাদের দোকান তৈরী করেছেন।
দিনাজপুর তাবলীগ জামাতের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আলহাজ¦ মোঃ মেহেরুল ইসলাম ও হাবিপ্রবির শিক্ষক ড. আব্দুল হাকিম আমীরে ফায়সাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও ১০জন শুরা সদস্য রয়েছেন। মূলত তারাই পুরো দিনাজপুর জেলার তাবলীগ জামাতের কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৭ সালের ৩১ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রথশবারের মত দিনাজপুরে ৩দিনব্যাপী তাবলীগ জামাতের জেলা ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।