প্রতিনিধি ৩১ মার্চ ২০২২ , ৬:১৯:৫৫ প্রিন্ট সংস্করণ
(দিনাজপুর২৪.কম) সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে ‘অর্থ পাচার’ করে যুক্তরাষ্ট্রে তিনতলা একটি বাড়ি কেনার অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের উপপরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান বৃহস্পতিবার কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ এ মামলা দায়ের করেন।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন উপপরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক।
মামলায় ‘অর্থ পাচার ও বাড়ি কিনতে সহযোগিতা’ করার অভিযোগে সিনহার ছোট ভাই অনন্ত কুমার সিনহাকেও আসামি করা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়, সাবেক বিচারপতি সিনহার ছোট ভাই অনন্ত কুমার সিনহা যুক্তরাষ্ট্রে একজন ডেন্টিস্ট হিসেবে কর্মরত। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটি ব্যাংক থেকে ৩০ বছরের জন্য ১ লাখ ৮৭ হাজার ৫০ ডলার ঋণ নিয়ে ১ লাখ ৪৫ হাজার ডলার দিয়ে এর আগে সেখানে একটি বাড়ি কিনেছেন। পরে ২০১৮ সালের ১২ জুনে ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার নগদ অর্থ পরিশোধ করে অনন্ত কুমার আরেকটি বাড়ি কেনেন।
আরও বলা হয়েছে, অনন্ত কুমার সিনহার নামে নিউজার্সির প্যাটারসনের ভ্যালি ন্যাশনাল ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২০১৮ সালের ৫ মার্চ থেকে একই বছরের ২০ জুন পর্যন্ত মোট ২ লাখ ৫৬ হাজার ৪৬৮ ডলার জমা হয়। এই অর্থ ইন্দোনেশিয়া ও কানাডা হয়ে একটি গ্রুপের মাধ্যমে সেখানে জমা হয়েছে। ওই বাড়িটি কেনার জন্য অনন্ত কুমার ১ লাখ ৫৭ হাজার ৯০ ডলারের নগদ চেক সংগ্রহ করতে তার বড় ভাই এস কে সিনহাকে নিয়ে ভ্যালি ন্যাশনাল ব্যাংকে আসেন এবং এস কে সিনহা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানান, আমেরিকার প্যাটারসন এলাকায় বাড়ি ক্রয়ের জন্য বন্ধুর কাছ থেকে তিনি ফান্ড পেয়েছেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে এসকে সিনহা বাংলাদেশে প্রধান বিচারপতি থাকাকালে বিভিন্নভাবে অবৈধ টাকা অর্জন করে তা হুন্ডিসহ বিভিন্ন কায়দায় আমেরিকায় পাচার করে তার ছোট ভাইয়ের অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করেন এবং তা দিয়েই ১৭৯, জ্যাপার স্ট্রিট, প্যাটারসন নিউজার্সি ০৭৫২২ তে বাড়ি কেনেন।
বাড়িটি ছোট ভাই অনন্ত কুমার সিনহার নামে হলেও ‘পরোক্ষভাবে’ এস কে সিনহার বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন- ২০১২ এর ৪(২) ও (৩) ধারা ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এর আগে গত বছরের ৯ নভেম্বর ফারমার্স ব্যাংক (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) থেকে চার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ ও পাচারের দায়ে দুদকের এক মামলায় এসকে সিনহাকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত।
এ ছাড়া গত বছরের ৭ অক্টোবর ঢাকার উত্তরায় ‘বেআইনিভাবে’ প্লট বরাদ্দ নিয়ে ‘অবৈধ অর্থের মাধ্যমে’ সেখানে নয়তলা ভবন করার অভিযোগে এস কে সিনহার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করে দুদক। এ মামলাটি তদন্ত এখনো শেষ হয়নি।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং কিছু পর্যবেক্ষণের কারণে ‘তোপের মুখে’ ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে ছুটিতে যান তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। পরে বিদেশ থেকেই তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।
দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে আসা বিচারপতি সিনহা যুক্তরাষ্ট্রে বসেই ২০১৮ সালে একটি বই প্রকাশ করেন। তাতে তিনি দাবি করেন, তাকে ‘পদত্যাগে বাধ্য করে নির্বাসনে’ পাঠানো হয়েছে।
ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছিলেন এস কে সিনহা। নিউজার্সিতে ছোট ভাই অনন্ত কুমার সিনহার নামে কেনা একটি বাড়িতেই সে সময় তিনি থাকছিলেন।
পরে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে খবর আসে সিনহা যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডায় গিয়ে সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন।
বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ পাওয়ার কথা সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। বাকি বিষয়গুলো নিয়ে পরে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। -অনলাইন ডেস্ক