• Top News

    জিতে গেল তেঁতুলতলা মাঠ

      প্রতিনিধি ২৯ এপ্রিল ২০২২ , ১১:৪৭:৩৯ প্রিন্ট সংস্করণ

    (দিনাজপুর২৪.কম) ঢাকার কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে থানা ভবন না করে শিশুদের খেলার জন্যই রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাঠটি রক্ষায় গত কয়েক দিন ধরে এলাকাবাসীর পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের জোরালো আন্দোলন ও নানামুখী আলোচনার মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনার কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘তেঁতুলতলা মাঠের মালিকানা পুলিশের থাকলেও সেখানে থানা ভবনের নির্মাণকাজ না করতে পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাই মাঠ থাকবে সকলের জন্য উন্মুক্ত।’

    এদিকে তেঁতুলতলা মাঠে থানা ভবন হচ্ছে নাএই ঘোষণা শোনার পর আনন্দে মেতে ওঠে ওই মাঠে খেলাধুলা করা স্থানীয় শিশু-কিশোর ও এলাকাবাসী। তাদের আনন্দে শামিল হন মাঠটি রক্ষার আন্দোলনে সরব থাকা সংস্কৃতি ও অধিকারকর্মীরাও।

    তেঁতুলতলা মাঠে থানাভবন না হওয়ার সিদ্ধান্তের খবর গণমাধ্যমে আসার পরপরই মাঠটিতে জড়ো হতে থাকেন এলাকার বাসিন্দারা। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায় স্থানীয় শিশু-কিশোরদের। রায়হান, সজিব, আরিয়ান ও প্রিয়াংসুসহ বেশ কয়েকজন শিশু-কিশোরকে দেখা যায় মাঠে ক্রিকেট খেলতে। মাঠটির পাশেই বাসা ষাটোর্ধ্ব আছিয়া খাতুনের। মাঠে থানাভবন না হওয়ার সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ঈদের আগেই আমাদের ঈদের আনন্দ হচ্ছে। আমি ডায়াবেটিসের রোগী। এই এলাকাতে হাঁটার জন্যও কোনো খালি জায়গা নেই। এখন এই মাঠে এসে সকালে হাঁটতে পারব।’

    মাঠে থানাভবন না করার নির্দেশনা দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক সৈয়দা রত্না। তিনি বলেন, ‘শিশুদের সামাজিক বিকাশের জন্য এই মাঠ খুবই জরুরি। আমরা সেই দাবিতেই মাঠটি শিশুসহ সবার জন্য উন্মুক্ত রাখার কথা বলেছি। আমার বিশ্বাস ছিল আমাদের এই দাবির কথা প্রধানমন্ত্রীর কান পর্যন্ত পৌঁছালে তিনি মাঠের পক্ষে থাকবেন। অবশেষে তার কাছে আমাদের কথাগুলো পৌঁছেছে। তিনি মাঠ ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। পাশাপাশি আমার সংগঠন উদীচীসহ বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা এবং গণমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত সংবাদকর্মীরা সরব ছিলেন বলেই আমরা তেঁতুলতলা মাঠ ফিরে পেয়েছি। সবার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।’

    পুলিশ তাকে আটক করে ১৩ ঘণ্টা থানায় রাখার ঘটনা উল্লেখ করে রত্না বলেন, ‘আমার কারও প্রতি ক্ষোভ নেই। আমি সব ভুলে গিয়েছি। আমার সন্তানরা এই মাঠে খেলবেএটাই আমার আনন্দ।’

    জানা গেছে, কলাবাগানের তেঁতুলতলায় এক বিঘা জমি একজন বিহারির মালিকানায় ছিল। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তিনি আর দেশে ফেরেননি। সেই জায়গাটিতে স্থানীয় শিশু-কিশোররা খেলাধুলা করত এবং বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড হতো। সম্প্রতি সেই ফাঁকা জমিটি কলাবাগান থানার জন্য পুলিশকে বরাদ্দ দেয় ঢাকা জেলা প্রশাসন। এরপর গত ৩১ জানুয়ারি থেকে সেখানে এলাকাবাসীর সব কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেওয়া হয়। জায়গাটিতে কলাবাগান থানার স্থায়ী ভবন নির্মাণের জন্য গত রবিবার সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু হয়। মাঠে থানা নির্মাণের প্রতিবাদ করায় ওইদিন সৈয়দা রত্না ও তার ছেলে ঈসা আব্দুল্লাহ প্রিয়াংসুকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। প্রায় ১৩ ঘণ্টা পর রাতে মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশের সেদিনের আচরণে ক্ষুব্ধ বিভিন্ন সংগঠন, এলাকাবাসী ও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এরপর মাঠটি রক্ষার জন্য জোরালো আন্দোলন শুরু করেন। এর মধ্যে গত বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে দেখা করে কয়েকজন পরিবেশবাদী ও অধিকারকর্মী সেখানে থানাভবন না করে মাঠ হিসেবে ব্যবহার করতে দেওয়ার অনুরোধ জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপিও দেয় আন্দোলনকারীরা। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুনির্দিষ্ট কোনো আশ্বাস না দিলেও বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান।

    গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘তেঁতুলতলা মাঠের মালিকানা পুলিশের থাকলেও সেখানে থানাভবনের নির্মাণকাজ হচ্ছে না। প্রাচীর যতটুকু হয়েছে সেভাবেই থাকবে। আগে যেভাবে এলাকাবাসী জায়গাটি ব্যবহার করতেন এখনো সেভাবেই ব্যবহার করতে পারবেন। তবে প্রাচীর খুব বেশি হয়নি। যদি কোনো অসুবিধা হয়, আমরা তা দেখব।’

    স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘২০১৭ সালে আমরা ওই জায়গাটির জন্য আবেদন করেছিলাম। তবে খোঁজ নিয়ে দেখলাম ওই এলাকায় খেলার জায়গা নেই। প্রধানমন্ত্রীও পরামর্শ দিয়েছেন, যেহেতু খালি জায়গা নেই, বিনোদনের কিছু নেই, সেই জন্য তিনি বলেছেন পুলিশের জমি সেভাবে থাকুক। কোনো কনস্ট্রাকশন যেন না হয়। যেভাবে চলছে চলতে থাকুক। এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত। আগে যেভাবে ব্যবহার হতো সেভাবেই এলাকাবাসী ব্যবহার করবেন। কিন্তু জায়গাটি পুলিশের, পুলিশেরই থাকবে। রক্ষণাবেক্ষণ পুলিশ করবে।’

    কলাবাগান থানার স্থায়ী ভবন কোথায় হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা আমরা দেখব। ভবিষ্যতের কথা ভবিষ্যতে। এখন আপাতত কিছু হচ্ছে না। নির্মাণকাজ তো অবশ্যই বন্ধ থাকবে। খেলার মাঠের জন্য উপযোগী জায়গা সেটি নয়। যেভাবে ইউজ করা হচ্ছিল, সেই এলাকার লোক যেভাবে ইউজ করছে সেভাবেই থাকবে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে।’

    গতকাল দুপুরে তেঁতুলতলা মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় বক্তব্য দেন সৈয়দা রত্না এ ছাড়া এই জায়গাটিকে আধুনিক মাঠে রূপ দিতে নকশা করে দেওয়ার ঘোষণা দেন স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি মোবাশ্বের হোসেন। তিনি বলেন, ‘মাঠ উন্মুক্ত রাখার এ ঘোষণা এলাকাবাসী ও শিশু-কিশোরদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার।’

    রাতের আঁধারে মাঠে দেয়াল তৈরির সমালোচনা করে স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ‘সময়ের আগে ঠিকাদার যেভাবে তার কাজ শেষ করেছেন, তাতে বিনা টেন্ডারে কাজ পেতে পারেন।’

    এলাকাবাসী জানায়, বুধবার রাতে মাঠের সবটুকু অংশেই দেয়াল তুলে দেওয়া হয়। দেয়ালটি ভেঙে দেওয়ারও দাবি জানান কেউ কেউ। এদিকে মাঠের উন্নয়নে পাশে থাকবেন বলে ঘোষণা দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি এলাকায় এ রকম দুটি মাঠ দরকার। মাঠ থাকলে শিশুরা খেলতে পারবে। বৃদ্ধরা বসে কথা বলতে পারবে।’

    সংবাদ সম্মেলন শেষ করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘মাঠ না থাকলে আমাদের সন্তানেরা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য হয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হবে। এটা হতে দেওয়া যায় না।’

    পরে বিকেল থেকেই মাঠে দেখা যায় স্থানীয় শিশু-কিশোররা ক্রিকেট ও ফুটবল খেলতে। সবার মাঝে দেখা যায়, বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। -অনলাইন ডেস্ক

    মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।