প্রতিনিধি ১ মে ২০২২ , ৪:১৫:২৫ প্রিন্ট সংস্করণ
(দিনাজপুর২৪.কম) নাজনীন আক্তার ১৯৮৯ সালে ২৮ বছর বয়সে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি হন। কয়েক বছরের মধ্যে তিনি সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে ওঠেন। কিন্তু পরিবার তাকে ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করায় তিনি হাসপাতালেই বসবাস করছেন। ঈদ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তার কাছ থেকে কোনো জবাব মেলেনি। ঈদ বিষয়ে তার কোনো অনুভূতিও নেই।
ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা মো. আফতাবুজ্জামান (৬২)। হাসপাতালের রেজিস্টার অনুযায়ী গত ১৯ বছর ধরে তিনি এই হাসপাতালে আছেন। ভর্তির পর ভালো হয়ে গেলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে তার ঠিকানায় ফেরত পাঠাতে পারেনি। কারণ ফেরত পাঠাতে গিয়ে তারা দেখেন তার ঠিকানা ছিল ভুয়া। ২০০৩ সাল থেকে আফতাবুজ্জামান সাধারণ ওয়ার্ডে অবস্থান করছেন। ঈদের কথা বলতেই কোনো উত্তর না দিয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকেন তিনি।
এ রকম আরও ২১ জন রোগী রয়েছেন যারা তাদের পরিবারের সঙ্গে থাকার জন্য যথেষ্ট ভালো ও সুস্থ। কিন্তু পরিবার তাদের ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করার কারণে তারা হাসপাতালেই দিন কাটান।
তাদের কিসের ঈদ আর উৎসব। প্রতিটি দিনই তাদের সমান- জানান হাসপাতালের পরিচালক ডা. রতন কুমার।
গত সপ্তাহে হাসপাতালে গেলে নাজনীন আক্তারের সঙ্গে দেখা হয়। তার বয়স ৬১ বছর। তিনি ২৮ বছর বয়সে ১৯৮৯ সালে এই মানসিক হাসপাতালে আসেন। কয়েক বছরের মধ্যে তার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। কিন্তু তার পরিবারের কেউ তাকে ফিরিয়ে নেয়নি। তিনি শারীরিকভাবে প্রচণ্ড দুর্বল ও অসুস্থ। কথা বলতেও কষ্ট হয়। অস্ফুট ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে আক্ষেপ ঝরে পড়ে নাজনীনের- ‘এই পৃথিবীতে আমার কোনো প্রয়োজন নেই। ঈদের কথা মনেও নেই।’
পাবনা মানসিক হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক ডা. রতন কুমার বলেন, এসব রোগীর ঈদ আনন্দ বলতে কিছু নেই। ঈদ মানেই তাদের কাছে একটু সেমাই, পায়েস ও ভালো খাওয়া। বরাদ্দ না থাকায় তাও ভালোভাবে দেওয়া সম্ভব হয় না। তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘পরিবার ছাড়া ঈদ কেমন হয় তা আপনারা ভালোই জানেন।’
তিনি জানান, তারা রোগীদের ভুয়া ঠিকানায় ফেরত পাঠাতে পারেন না, তাই দীর্ঘমেয়াদি রোগীরা অতিরিক্ত বোঝা হয়ে আছে।
ডা. রতন মনে করেন, সরকারের উচিত এই রোগীদের জন্য পাবনা মানসিক হাসপাতালের মধ্যে একটি আশ্রয়কেন্দ্র বা নিবাস খোলা, যাতে তারা সেখানে থাকতে পারেন। দীর্ঘদিনের পুরোনো রোগী হাসপাতালে অবস্থান করার কারণে নতুন রোগীদের যে শয্যা প্রয়োজন তা দেওয়া সম্ভব হয় না। খালি বিছানা না থাকায় তারা নতুনদের ভর্তি করতে পারেন না।
পরিচালক জানান, পাবনা মানসিক হাসপাতালের প্রতি রোগীর খাদ্য বাবদ দৈনিক বরাদ্দ ১২৫ টাকা। এই টাকার শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাট-ট্যাক্স বাদ দিলে দাঁড়ায় ১০৬ টাকা ২৫ পয়সা। এর মধ্যে ঠিকাদারের লাভ, অফিস খরচ ও অন্যান্য ব্যয় বাদে একজন মানসিক রোগীর পেছনে তিন বেলা খাদ্য বাবদ প্রতিদিন খরচ করা হয় মূলত ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। এই টাকায় এমনিতেই মানসিক রোগীদের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই ঈদেও তেমন ভালো খাদ্য জোটে না রোগীদের। অনলাইন ডেস্ক
[প্রতিবেদনটিতে রোগীদের নামগুলো বদলে ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে]