(দিনাজপুর২৪.কম) সরকারবিরোধীদের বিক্ষোভ ও সহিংসতার মুখে শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাক্ষে ইতিমধ্যে তার পরিবার নিয়ে রাজধানী কলম্বোর বাসভবন ছেড়েছেন। এরপর তিনি দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিঙ্কোমালি শহরে একটি নৌঘাঁটিতে সপরিবার আশ্রয় নেন। কিন্তু তাও রেহাই মিলল না তার। ওই নৌঘাঁটিও ঘিরে রেখেছেন বিক্ষোভকারীরা। রাজধানী কলম্বো থেকে ওই নৌঘাঁটির দূরত্ব প্রায় ২৭০ কিলোমিটার। সেখানেও বিক্ষোভ চলছে।
গতকাল তুমুল বিক্ষোভের মুখে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হন মাহিন্দা রাজাপাক্ষে। তবে তাতেও জনরোষ কমেনি। সোমবার রাতে হাজারো বিক্ষোভকারী রাজাপাক্ষের বাসভবনের মূল ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েন। রাজাপাক্ষের বাসভবন প্রাঙ্গণে কমপক্ষে ১০টি পেট্রলবোমা ছোড়া হয়। বিক্ষোভকারী মাহিন্দা রাজাপাক্ষের ‘টেম্পল ট্রিজ’ নামক বাসভবনের মূল দোতলা ভবনে হামলার চেষ্টা করেন। তখন সেখানে থাকা পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাতে আটকা পড়েন। পরে আজ মঙ্গলবার ভোরের আলো ফোটার আগেই সেনা পাহারায় কলম্বোর সরকারি বাসভবন ছাড়েন মাহিন্দা রাজাপাক্ষে।
শ্রীলঙ্কার সংবাদমাধ্যম ডেইলি মিরর আজ মঙ্গলবার সকালে রাজাপাক্ষের বাসভবনের সামনে একটি হেলিকপ্টার অপেক্ষা করার ভিডিও প্রকাশ করেছে। ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, কয়েকজনকে বিমানবাহিনীর ওই হেলিকপ্টারে ওঠানো হচ্ছে। তারা মাহিন্দা রাজাপাক্ষের পরিবারের সদস্য বলে মনে করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, মাহিন্দা রাজাপাক্ষে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিঙ্কোমালি শহরে একটি নৌঘাঁটিতে সপরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু তাও বিক্ষোভকারীদের হাত থেকে রেহাই পাননি তিনি। ওই নৌ ঘাঁটিও ঘিরে রেখেছেন বিক্ষোভকারীরা।
করোনার ধাক্কার পাশাপাশি সরকারের কিছু ভুল সিদ্ধান্তে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক দুর্দশার মুখে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। কয়েক মাস ধরে খাবার, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকটে পড়েছে দেশটি। ব্যাপকভাবে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, চলছে বিদ্যুৎ-বিভ্রাট। এ পরিস্থিতিতে সরকার পতনের দাবিতে এক মাসের বেশি সময় ধরে দেশটিতে বিক্ষোভ চলছে।
অচলাবস্থা নিরসনে শুক্রবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে মাহিন্দা রাজাপক্ষকে পদত্যাগ করতে বলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাক্ষে। কিন্তু এরপরও বিক্ষোভ থামেনি।
ওদিকে, গতকাল সকালে দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে কয়েকটি বাসে প্রধানমন্ত্রীর হাজারো সমর্থক তার সরকারি বাসভবনের কাছে জড়ো হন। তখন মাহিন্দা রাজাপাক্ষে প্রায় তিন হাজার সমর্থকের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। তিনি তাদের ‘জাতির স্বার্থ রক্ষার’ প্রতিশ্রুতি দেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর সমর্থকেরা সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালান এবং তাদের তাঁবু ছিঁড়ে ফেলেন। এ সময় সরকারবিরোধী বিভিন্ন ব্যানার ও প্ল্যাকার্ডে আগুন ধরিয়ে দেন তারা। এতে আরও ক্ষেপে যায় বিক্ষোভকারী জনতা।
সংঘর্ষ থামাতে কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। তাৎক্ষণিকভাবে রাজধানী কলম্বোতে কারফিউ জারি করা হয়। পরে দেশজুড়ে কারফিউ জারি করা হয়। গণবিক্ষোভের মুখে একপর্যায়ে পদত্যাগ করেন মাহিন্দা।
কিন্তু এরপর সোমবার রাতে শ্রীলংকায় সরকার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষের জের ধরে ক্ষুব্ধ জনতা কারফিউ অমান্য করে পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাক্ষে এবং সরকার দলীয় কয়েকজন সংসদ সদস্য, প্রাদেশিক রাজনীতিবিদদের বাড়িঘর, দোকান এবং ব্যবসায় আগুন ধরিয়ে দেয়।
সরকারবিরোধী বিক্ষোভে সহিংসতায় ৭ জন নিহত এবং ২০০ জনেরও বেশি আহত হওয়ার পর আজ শ্রীলঙ্কায় সেনাবাহিনী ও পুলিশকে ওয়ারেন্ট ছাড়াই মানুষকে আটক করার জরুরি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
আজ প্রধানমন্ত্রীর ছোট ভাই রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপাক্ষের সরকার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই মানুষকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য সেনাবাহিনী এবং পুলিশকে ব্যাপক ক্ষমতা দিয়েছে।
এর ফলে সেনাবাহিনী কাউকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার আগে ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত আটকে রাখতে পারবে। ব্যক্তিগত যানবাহনসহ ব্যক্তিগত সম্পত্তি তল্লাশি করতে পারবে। মঙ্গলবার একটি গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, ‘পুলিশ অফিসারদের হাতে গ্রেপ্তার যে কোন ব্যক্তিকে নিকটস্থ থানায় নিয়ে যাওয়া হবে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও কাউকে গ্রেপ্তারের ২৪ ঘন্টার মধ্যে থানায় নিয়ে যাবে’।
তবে কিছু রাজনীতি বিশ্লেষক জরুরি ব্যবস্থার অপব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
কলম্বো ভিত্তিক সেন্টার ফর পলিসি অল্টারনেটিভস নামের থিঙ্ক ট্যাঙ্কের ভাবানি ফনসেকা বলেছেন, ‘যেখানে জরুরি অবস্থা এবং কারফিউ উভয়ই রয়েছে এমন পরিস্থিতিতে নিয়মগুলোর অপব্যবহার হবে না তা নিশ্চিত করার জন্য কে নজরদারি করতে পারবে?’
গত শুক্রবার থেকে শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। বিক্ষোভের লাগাম টানতে এরপর জারি করা হয় কারফিউ। গতকাল প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে দাড়ান মাহিন্দা রাজাপাক্ষে। এরপরও ক্ষোভ কমেনি মানুষের।
করোনার ধাক্কার পাশাপাশি সরকারের কিছু ভুল সিদ্ধান্তে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক দুর্দশার মুখে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। কয়েক মাস ধরে খাবার, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকটে পড়েছে দেশটি। ব্যাপকভাবে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, চলছে বিদ্যুৎ-বিভ্রাট। এ পরিস্থিতিতে সরকার পতনের দাবিতে এক মাসের বেশি সময় ধরে দেশটিতে বিক্ষোভ চলছে।
অচলাবস্থা নিরসনে শুক্রবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে মাহিন্দা রাজাপক্ষকে পদত্যাগ করতে বলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাক্ষে। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া সম্পর্কে মাহিন্দা রাজাপাক্ষের ছোট ভাই। এক যুগ আগে শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতাকামী তামিল টাইগারদের দমন করে দেশটিতে রাজাপাক্ষে পরিবারের আধিপত্য তৈরি করেছিলেন মাহিন্দা রাজাপাক্ষে।
রাজাপাক্ষেদের উত্থান শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে নতুন যুগের সূচনা করেছিল। কিন্তু আর্থিক সংকট শ্রীলঙ্কাবাসীকে রাজাপাক্ষেদের বিরুদ্ধে পথে নামিয়ে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাক্ষের সরকারে শুধু তার নিজের পরিবারের সাত সদস্য ছিলেন। গোতাবায়ার ভাই মাহিন্দা রাজাপাক্ষে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। -অনলাইন ডেস্ক