স্টাফ রিপোর্টার (দিনাজপুর২৪.কম) আগামী সপ্তাহের মধ্যে পাওয়া যাবে দিনাজপুর জেলার ঐহিত্যবাহী লোভনীয় টসটসে লিচু। দিনাজপুরের লিচু সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। লিচু খেতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জামাই বাবুরা ভীড় করছেন দিনাজপুরে। একটি লিচু মুখে দিলেই হারিয়ে যায় মন। দিনাজপুরের লিচুতে ধরেছে রঙ। সাত দিনের মধ্যে গাছ থেকে নামানো শুরু হবে এই ফল। বাগানের মালিকরা বলছেন, মুকুলের তুলনায় ফল হয়েছে কম। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দাবি মুকুলের তুলনায় ফলন কম হলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।
সারা দেশের মধ্যে দিনাজপুরের লিচু সবচেয়ে সুস্বাদু ও সমৃদ্ধ। মাদ্রাজি, বোম্বাই, বেদানা, চায়না-১ থেকে তিন, কাঁঠালি, হাড়িয়াসহ বেশ কয়েক জাতের লিচু উৎপাদন হয় এখানে। জেলা সদর, চিরিরবন্দর, পার্বতীপুর, বিরল, বোচাগঞ্জ, বীরগঞ্জ, খানসামা, ফুলবাড়ী ও বিরামপুরসহ ১৩ উপজেলাতেই কমবেশি লিচুর বাগান রয়েছে। ৫ হাজার ৪শ ৮০ হেক্টর জমি জুড়ে রয়েছে লিচু বাগান। বাগানিদের অপেক্ষা আর মাত্র কয়েক দিনের। পরিপক্ক হলেই শুরু হবে লিচু নামানো।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৫ হাজার ৫’শ হেক্টর জমির লিচুর বাগানে এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩০ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ৩০ হাজার মেট্রিক টন লিচু। দিনাজপুরে যেসব স্থানে লিচু চাষ হয় তার মধ্যে সদর উপজেলার মাসিমপুর ও বিরল উপজেলার মাধববাটী উল্লেখযোগ্য।
দিনাজপুর সদরের মাহুতপাড়ার কাশুয়াপাড়া এলাকার প্রায় আড়াইশ এর মধ্যে ৮৫টি লিচু গাছের বাগানি মফিজ উদ্দিনি বলেন, এবার ফলন ভালো হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বাগানের মাদ্রাজি জাতের লিচু ভাঙ্গতে শুরু করবো। আর বোম্বাই আরও ২৫দিন পর ভাঙ্গা শুরু হবে। দাম ভালো পাবেন বলে আশাবাদী তিনি। তবে বাজারে যে সমস্ত লিচু পাওয়া যাচ্ছে, তা কেমিক্যাল মিশিয়ে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এছাড়াও সদর উপজেলার মাসিমপুর এলাকার তরিকুল ইসলাম, পার্বতীপুর উপজেলার যশাই হাটের বাবলুসহ বিভিন্ন এলাকার লিচু চাষীরা জানান, দিনাজপুরের বাগানগুলোর গাছে গাছে মাদ্রাজী, বোম্বাই, কাঁঠালি, চায়না, চায়না থ্রি আর বেদানা লিচুতে ভরে গেছে। থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা সবুজ রংয়ের লিচু অপেক্ষায় আছে জ্যৈষ্ঠ মাসের। মে মাসের শেষে বা জুনের প্রথম সপ্তাহে লিচু পাকতে শুরু করবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে গাছ থেকে লিচু বাজারে উঠতে শুরু করবে বলে জানান তিনি।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মঞ্জুরুল হক দিনাজপুর২৪.কমকে বলেন, আগামী এক সপ্তাহ পর বাগান থেকে লিচু পাড়তে শুরু করবে বাগানিরা। এবার জেলায় ৫ হাজার ৫শ হেক্টর জমির বাগান থেকে লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩০ হাজার মেট্রিক টন। প্রত্যেক বছর দিনাজপুর জেলায় সাড়ে ৪শ থেকে ৫০০ কোটি টাকার বেশি লিচু বেচাকেনা হয় বলে জানান তিনি।
এদিকে শহরের গোর এ শহীদ বড় ময়দানের দক্ষিণ প্রান্তে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সেরা স্বাদের রসালো লিচুসহ মৌসুমি ফল প্রদর্শনী বিক্রয়ের বাজার উদ্বোধনের আগেই লিচু বেচা-কেনা শুরু হয়ে গেছে। এছাড়াও দিনাজপুর কোতয়ালী থানার পাশে, বাহাদুর বাজারে এবং স্টেশনরোডে বিক্রি হচ্ছে রসালো টসটসে লিচু।