• Top News

    ইসি এখন কী করবে

      প্রতিনিধি ১ আগস্ট ২০২২ , ২:৩৪:৫১ প্রিন্ট সংস্করণ

    (দিনাজপুর২৪.কম) আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি করতে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের আয়োজন করেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রোববার জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে এ আয়োজন। গত ১৭ জুলাই থেকে শুরু হয় এ সংলাপ।
    ইসির ডাকা সাড়া দিয়ে সংলাপে ২৮টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে নিজের মতামত ও প্রস্তাব তুলে ধরেছে। তবে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি, বাসদ, মুসলিম লীগ (বিএমল), কল্যাণ পার্টি, জেএসডি, এলডিপি, ইসলামী আন্দোলন, সিপিবি ও বিজেপিসহ ৯টি দল ইসির এ  সংলাপ বর্জন করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও জাতীয় পার্টি (জেপি) সংলাপের জন্য পরবর্তী পর্যায়ে সময় চেয়েছে। ইসির তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে এ পর্যন্ত তিনশরও বেশি প্রস্তাব পেয়েছে কমিশন। এসব প্রস্তাবে ইভিএম, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার, ভোটারদের আস্থা অর্জনসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্থাব রয়েছে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে ২০টি রাজনৈতিক দল। অন্যদিকে বিদ্যমান নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তনের পক্ষে মত দিয়েছে ১৮ দল।
    সংলাপে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ইভিএমের বিপক্ষে মত দিয়ে বলেছেন, সব বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহ অনেকগুলো যৌক্তিক কারণে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। জনগণের বড় অংশ ইভিএমকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে গ্রহণ করতে পারছে না। ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশনের অতি উৎসাহের মধ্যে ক্ষমতাসীনদের তল্পিবাহক হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায় বলে মন্তব্য করেছে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। দলটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, ইভিএমের পক্ষে ইসির ভূমিকা ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে জনগণকে সন্দিহান করে তুলেছে। ইভিএমের বিরুদ্ধে মত দিয়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বলেছে, ভোটারদের মধ্যে ইভিএমের বিষয়ে গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি না করে ইভিএম চাপিয়ে দিলে সিদ্ধান্তটি একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এসব দলের মধ্যে রয়েছে প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টিও। এ ছাড়া নানা শঙ্কার কথা জানিয়ে ইভিএমের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, জাতীয় পার্টি, খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, মুসলিম লীগ, খেলাফত মজলিস, ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরাম, ইসলামী ফ্রন্ট, জাকের পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)। তবে এর মধ্যে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ও জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন শর্তসাপেক্ষে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছে। তারা বলছে, ইভিএম ব্যবহার করতে হলে পেপার অডিট ট্রেইল সংযুক্তি করতে হবে। এ ছাড়া অর্ধেক আসনে ইভিএম চেয়েছে তরিকত ফেডারেশন।
    অন্যদিকে বিদ্যমান নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তনের পক্ষে মত দিয়েছে ৭০ শতাংশ দল। এর মধ্যে চারটি দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা বা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের সুপারিশ করেছে। ভোটের সময় স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসনসহ কয়েক মন্ত্রণালয় ইসির অধীনে নিয়ে আসার প্রস্তাব দিয়েছে ১৩টি দল। চারটি দল নিবন্ধিত দলগুলোর সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের সুপারিশ করেছে। এমনকি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শরিক রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন ওয়ার্কার্স পার্টি, দিলীপ বড়ুয়ার সাম্যবাদী দল ও তরিকত ফেডারেশনও বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন চেয়েছে। তারা ভোটের সময় স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও স্থানীয় সরকার বিভাগ ইসির হাতে রাখার প্রস্তাব দিয়েছে। অন্যদিকে বিদ্যমান নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তন চায় জাতীয় পার্টিও। তবে নির্বাচন কমিশনে বিদ্যমান সরকার ব্যবস্থা নিয়ে কোনো আলোচনা করতে চায় না দলটি।
    ইসিতে দেওয়া উল্লেখ্যযোগ্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- সংসদ নির্বাচন দুই বা তিন ধাপে করাসহ প্রতি কেন্দ্রে সেনা মোতায়ন, সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার, নির্বাচনি ব্যয় ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ ও জাতীয় সংসদের আসন সংখ্যা বৃদ্ধি। প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে সংসদে প্রতিনিধিত্ব, তফসিল ঘোষণার পর সংসদ ভেঙে দেওয়া, ইভিএম ব্যবহার না করা, নির্বাচনকালে নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা, নির্বাচনি প্রচারণায় প্রত্যেক আসনে সব প্রার্থীদের এক মঞ্চে সভা করা, জনগণের আস্থা তৈরি ও ইসিকে দায়িত্ব পালনে মেরুদণ্ড শক্ত করা, দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও হয়রানিমূলক আচরণ বন্ধ করা, স্বল্প সংখ্যক আসনে ইভিএম ব্যবহার, ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা, প্রার্থীদের জামানত বাড়ানো, বিনামূল্যে ভোটার তালিকা সরবরাহ, প্রতি কেন্দ্রে পাঁচজন করে সামরিক বাহিনীর সদস্য নিয়োগ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন, স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন ইসির অধীনে ন্যস্ত করা, সব আসনে ব্যালট পেপার ব্যবহার, ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাহীন দলের নিবন্ধন বাতিল, ভোটের তিন মাস আগে সংসদ বিলুপ্ত করা, ‘না’ ভোট চালু, দলের সব কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রাখার বাধ্যবাধকতা বিলুপ্ত করা ইত্যাদি।
    ইসি কমিশনার রাশিদা সুলতানা বলেন, এ সংলাপ থেকে আমাদের অনেক অর্জন হয়েছে বলে আমি মনে করি। কারণ আমরা অনেক কিছুই জানতাম তাই সবার মতামত নিলাম। এ সংলাপ ভবিষ্যতে আমাদের কাজের সহায়ক হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে আমরা অনেকগুলো প্রস্তাব পেয়েছি দুয়েকদিনের মধ্যে সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখব। এখানে কিছু কমন প্রস্তাব আছে সেগুলো বাদ দিয়ে একটা শর্ট লিস্ট তৈরি করে পরবর্তী সময়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
    বিএনপির না আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করতে চাই। বিএনপিকে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম, তারা আসেনি। এলে ভালো হতো। এখনও অনেক সময় আছে, আমরা আবারও তাদের আনার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করব। নিশ্চয় তারা আমাদের ডাকে সাড়া দেবে।
    সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, এই সংলাপ কমিশনের একটা নরমাল অ্যাক্টিভিটিস। এটাকে এত গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। এখানে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছিল না। তবে এ সংলাপের মাধ্যমে পাবলিক সেন্টিমেন্ট তৈরি হয়েছে। এই সংলাপ থেকে বড় কোনো পরিবর্তন হবে বলে আমি মনে করি না।
    তিনি বলেন, আমরা যখন দায়িত্বে ছিলাম তখন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সুনির্দিষ্ট কিছু এজেন্ডা নিয়ে আমরা সংলাপ করেছি। কিন্তু বর্তমান কমিশন যেহেতু এজেন্ডা ছাড়া উন্মুক্ত আলোচনা করেছে তাতে দল ও জনগণের মধ্যে একটা প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। কতটা পূরণ করতে পারব জানি না। অনেক দল সংলাপে অংশগ্রহণ করেনি। আর যারা এসেছে তারা অনেকগুলো প্রস্তাব দিয়েছে যা সংবিধান রিলেটেড। সংবিধান সংশোধন ছাড়া এগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এখানে শুধু ইভিএমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে ইসি। তবে আমার জানা মতে ইসির কাছে যে ইভিএম আছে তা দিয়ে নির্বাচন করা সম্ভব নয়।
    দলগুলোর অংশগ্রহণ না করা প্রসঙ্গে সাবেক এই কমিশনার বলেন, যারা দোটানার মধ্যে আছে এবং এই নির্বাচন ব্যবস্থার পক্ষে তারাই সংলাপে অংশ নিয়েছে। আর যারা অংশগ্রহণ করেনি আমি মনে করি তাদের সিদ্ধান্তও ঠিক আছে, কারণ যে দাবিতে তারা অংশগ্রহণ করেনি এটা ইসির বিষয় না। তাদের দাবি নিরপেক্ষ সরকার- তারা কিন্তু তাদের সেই দাবি জানিয়েছে। তাদের না আসাটাও সংলাপের অংশ। -সূত্র : সময়ের আলো
    মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।

    আরও খবর

    Sponsered content