(দিনাজপুর২৪.কম) দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে দেশের চা-বাগানগুলোয় অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু হয়েছে। এ সময় বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের অংশ হিসেবে আজ মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার কালিটি চা বাগানের শ্রমিকরা করেছেন ভুখা মিছিল।
অন্যদিকে সমস্যা সমাধানে মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) সকাল ১১ থেকে শ্রীমঙ্গল শ্রম দফতর কার্যালয়ে বাংলাদেশ শ্রম অধিদফতরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরীর সঙ্গে চা শ্রমিক নেতাদের আলোচনা চলমান রয়েছে।
বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সম্পাদক উত্তম কালোয়ার জানান, শ্রমিকরা এমনিতেই সামান্য মজুরি পান। অন্যদিকে জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে। তাহলে চা শ্রমিকদের অবস্থা কি হতে পারে? ঘরে চাল-ডাল নেই। উপোষ দিন কাটাতে হচ্ছে। এখন তো দুইহালি ডিমের দাম ১২০টাকা অথচ আমাদের মজুরি নিয়ে বাগান কর্তৃপক্ষ সময়ক্ষেপণ করছে।
মালতি গঞ্জু একজন স্থায়ী চা শ্রমিক। মৌলভীবাজার জেলার একটি চা বাগানে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস তার। বয়স ৪৫ এর কাছাকাছি। তার বাবা মা চা শ্রমিক ছিলেন। তিনি নিজেও এখন চা শ্রমিক। মালতি জানান, বংশপরম্পরায় তিনি চা পাতা তুলতে শিখেছেন। অফপিক সিজনে তিনি পাতা কিছু কম তুললেও পিক সিজনে তিনি ৩০-৪০কেজি কাচা চা পাতা তোলার সামর্থ্য রাখতেন। তবে এখন আর আগের মতো পারেন না।
তিনি জানান, বেশী চা পাতা না তুললে উপায় নাই কারণ আমার একমাত্র দৈনিক নগদ মজুরি ১২০ টাকায় আমার ছয়জনের পরিবার চলে।স্বামী মতিলাল কোথায়ও কাজ পেলে করেন নয়তো বেকার থাকেন।
মালতি বলেন, মজুরিটিই হলো আমাদের পরিবারের একমাত্র ভরসা। কোনমতে টেনেটুনে পরিবার চালাই। তিনি আরও বলেন, বড়ছেলে মিঠুনকে বিয়ে দিয়েছিলাম। তার বউ পাঁচমাসের গর্ভবতি। তার কতকিছু খেতে ইচ্ছে হয়। আমাকে বলেও আমি এনে দিতে পারি না। বড় মেয়েও বাড়িতেই থাকে। তারপর ছেলে লছমি অষ্টম ক্লাসে পড়ার পরে আর পড়াতে পারিনি টাকার অভাবে। আমার একটি গরু আছে। গরুসহ আমরা একই ঘরে থাকি। এরপর টিন ছিদ্র। কতবার পঞ্চায়েতকে জানিয়েছি ঘরটি মেরামত করতে। কিন্তু আজ পর্যন্ত মেরামত হয়নি। জানাতে জানাতে বর্ষাকাল শেষ হয়ে গেল। আজও বৃষ্টিতে ভিজতে হয়। কাজে সারাদিন চা পাতা তোলার সময় ভিজি ও বাড়িতে আসলে বৃষ্টিতে রাতেও ভিজি। টিনের ছাদে ছিদ্র। রাতে বৃষ্টি আসলে জেগে কাটাতে হয়।পরে দিনে কাজে গিয়েও ঘুম লাগে। কিন্তু প্রত্যেকদিন কি একজন তার বাড়িতে জায়গা দিবে? কিন্তু উপায় নেই কাজ করতেই হয়। তাই বৃষ্টির সময় অন্যের ঘরে গিয়ে ঘুমিয়েছিলাম।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মালতির পরিবারের জীবন আর চলছে না। সকাল-বিকেল পরিশ্রম করে ২৩ কেজি চা পাতা তুললে ১২০ টাকা মজুরি মেলে। অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে কাজে না গেলে সামান্য সেই অর্থও পান না।
আন্দোলনে কেন গেলেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি আন্দোলনে গিয়েছি জীবন সংগ্রামের জন্য না। বাচার জন্য। না খেয়ে যেন না মরি এজন্য আন্দোলনে গেছি। আন্দোলন থেকে এসে মাড়ভাত খেয়ে ঘুমিয়েছিলাম। উপোস থেকে আন্দোলন করেছিলাম।
বাংলাদেশ চা–শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) নিপেন পাল বলেন, আমাদের শ্রমিকেরা কী কঠিন অবস্থায় আছে, সেটি সরকার ও মালিকপক্ষকে অবশ্যই দেখতে হবে। চা–বাগানের শ্রমিকদের খাদ্যের অভাব, ভালো চিকিৎসার অভাব, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার অভাব। ঘরে ঘরে শ্রমিকদের কষ্ট। আমরা এর একটি ভালো সমাধান চাই। ২০২২ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশে এসে আমরা দাসত্বের জীবন কাটাতে চাই না।
আমরা এখন বাংলাদেশ শ্রম অধিদফতরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরীর সঙ্গে আলোচনা করছি। মিটিংয়ের পরেই বিস্তারিত জানা যাবে, যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, আমাদের শ্রমিকেরা কী কঠিন অবস্থায় আছে, সেটি সরকার ও মালিকপক্ষকে অবশ্যই দেখতে হবে। চা–বাগানের শ্রমিকদের খাদ্যের অভাব, ভালো চিকিৎসার অভাব, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার অভাব। ঘরে ঘরে শ্রমিকদের কষ্ট। আমরা এর একটি ভালো সমাধান চাই। ২০২২ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশে এসে আমরা দাসত্বের জীবন কাটাতে চাই না।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিভাগীয় শ্রম দফতর শ্রীমঙ্গলের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুর রহমান বলেন, মহাপরিচালক শ্রীমঙ্গলে এসে প্রথমে বাংলাদেশ চা–শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। পরে মালিকদের সঙ্গে মিটিং শুরু হবে।