প্রতিনিধি ২১ আগস্ট ২০২২ , ৬:১০:৫৩ প্রিন্ট সংস্করণ
(দিনাজপুর২৪.কম) রাজধানীর উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের ফ্লাইওভারের গার্ডার চাপায় প্রাইভেট কারে থাকা পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগে ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন চিফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত।
নিহত আইয়ুব হোসেন রুবেলের প্রথম স্ত্রী শাহিদা খানম আজ রোববার এ মামলার আবেদন করেন।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ শেষে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাদীপক্ষের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস বিশ্বাস।
আসামিরা হলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (আইএফএসসিওএন ইঞ্জিনিয়ারিং) ইফতেখার হোসেন ও হেড অব অপারেশনস আজহারুল ইসলাম মিঠু, সিজিজিসি’র প্রকিউরমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল ইসলাম, সেফটি ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকার আলী শাহ, ক্রেন চালক আলামিন হোসেন ওরফে হৃদয়, হেলপার রাকিব হোসেন, তোফাজ্জল হোসেন তুষার, রুহুল আমীন মৃধা, রুবেল ও আফরোজ মিয়া।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ১৫ আগস্ট উত্তরা পশ্চিম থানার প্যারাডাউস টাওয়ারের সামনে আশুলিয়াগামী ঢাকা ময়মনসিংহ সেক্টর-৩-এর ৩ নম্বর রোডে প্রাইভেটকারের ওপর বিআরটিএ প্রকল্পের অধীনে কর্মরত ৫০ টন ওজনের গার্ডার বক্স পড়ে গাড়িতে থাকা আইয়ুব হোসেন রুবেল ওরফে নুর ইসলাম রুবেলসহ পাঁচজনের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে।
বিআরটিএ প্রজেক্টের চাইনিজ প্রতিষ্ঠান সিজিজিসি, ওয়ার্ক অর্ডারের মাধ্যমে একটি ক্রেন সরবরাহ করার জন্য আইএফএসসিওএন ইঞ্জিনিয়ারিং দায়িত্ব দিলে ওই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইফতেখার হোসেন ও হেড অব অপারেশনস আজহারুল ইসলাম মিঠু এবং রুহুল আমীন ও মঞ্জুরুল ইসলামের মাধ্যমে পরস্পর যোগসাজসে অযোগ্য ড্রাইভার ও হেলপার সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করেছে। চাইনিজ ঠিকাদানি প্রতিষ্ঠান সিজিজিসি’র প্রকিউরমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন মঞ্জরুল ইসলাম, যা যাচাই-বাছাই না করেই অবৈধ সুবিধা গ্রহণ করার ইচ্ছায় জাতীয় পর্যায়ের প্রজেক্টে অদক্ষ জনবল নিয়োগের মাধ্যমে চরম অবহেলা ও ঝুঁকিপূর্ণ নির্মাণকাজ চালানোর মাধ্যমে তাৎক্ষণিক ত্রাইসিস মোকাবিলার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে এতগুলো প্রাণ সংহারে সহযোগিতা করেছে।
প্রতিষ্ঠানের সেফটি ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকার আলী শাহ দায়িত্বকালীন হেলথ সেফটি অ্যান্ড ইনভাইরোমেন্টের ওপর কোনো জ্ঞান না থাকায় সেফটির জন্য অর্থাৎ ক্রেন চালানোর প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা বলয় তৈরি করার যা যা প্রয়োজন, তার যথার্থ পদক্ষেপ কখনোই গ্রহণ করেননি। চরম অবহেরা করে প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দীর্ঘদিন ধরে সুবিধা ভোগ করে চলেছেন, যার ফলশ্রুতিতে পাঁচজন মারা গেছে।
ক্রেনচালক আলামিন নিজের দায়িত্ব পালন না করে হেলপার রাকিবকে দিয়ে ক্রেন পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে বেআইনিভাবে কাজ পরিচালনা করে যাচ্ছিলেন। ঘটনার সময় আলামিন রাকিব মৃত্যু পরিস্থিতি জেনেও কোনোভাবে সহযোগিতা না করেই স্থান ত্যাগ করে পালিয়ে যান।
আসামিদের চরম অবহেলা, গাফিলতি ও অদক্ষ, অযোগ্য জনবল নিয়োগের মাধ্যমে অবৈধ সুবিধা গ্রহণের কারণে পাঁচজন মারা যায় বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
উল্লেখ্য, ১৫ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর উত্তরার জসিমউদ্দীন রোডে র্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেম (বিআরটি) প্রকল্পের ফ্লাইওভারের গার্ডার চাপায় প্রাইভেট কারে থাকা পাঁচযাত্রী নিহত হয়। তারা হলো মো. রুবেল (৫০), ঝর্ণা আক্তার (২৮), জান্নাত (৬), জাকিয়া (২) ও ফাইজ। তবে ভাগ্যক্রম বেঁচে যান নবদম্পতি হৃদয় ও রিয়া।
ওইদিন দিবাগত রাতেই নিহত ফাহিমা আক্তার ও ঝর্ণা আক্তারের ভাই আফরান মণ্ডল বাবু উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করেন। অবহেলার কারণে এ ঘটনা ঘটায় ক্রেনের চালক, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত অজ্ঞাত ব্যক্তিদের মামলায় আসামি করা হয়। পরে এ মামলায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার হয়ে মেয়াদে রিমান্ডে রয়েছে। -অনলাইন ডেস্ক