প্রতিনিধি ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৯:০৪:০৭ প্রিন্ট সংস্করণ
(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত ভারত। চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আজ সোমবার দুপুরে নয়াদিল্লি পৌঁছাবেন প্রধানমন্ত্রী। ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, এ সফরে ছয় থেকে সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হতে পারে। এ সংখ্যা বাড়তেও পারে।
তবে নয়াদিল্লির সূত্রগুলো বলছে, গতকাল রবিবার বিকেলেও সম্ভাব্য চুক্তি ও এমওইউ চূড়ান্ত করতে আলোচনা চলছিল। আলোচনার মধ্যে দুই দেশ মিলে সামরিক সরঞ্জাম তৈরি করার বিষয়ে সমঝোতা স্মারকও ছিল। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে মূল গুরুত্ব পাবে আগামী দিনগুলোর, বিশেষ করে অন্তত পরবর্তী ২৫ বছরে সম্পর্কের রূপরেখা নিয়ে। গত বছর বাংলাদেশ ও ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্ণ করেছে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ও ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারত উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সেই লক্ষ্য পূরণের পাশাপাশি সম্পর্কের সব দিক ও সহযোগিতা যাতে এগিয়ে যায়, তা নিয়ে আলোচনা হবে এবারের সফরে।
ভারত এ বছর পালন করছে স্বাধীনতার ৭৫ বছর ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’। ভারত আগামী ২৫ বছরকে দেখছে ‘অমৃতপথ’ হিসেবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশ ও ভারতের সুসম্পর্ক বর্তমানে বিশেষ উচ্চতায় অবস্থান করছে। বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে স্থল ও সমুদ্রসীমানা নির্ধারণ সারা বিশ্বের সামনে সহযোগিতার ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় যেমন :
নিরাপত্তা, আন্তঃসংযোগ, বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, রেল ও নৌপথে যোগাযোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, প্রধানমন্ত্রী তিস্তাচুক্তির প্রসঙ্গ তুলবেন। তিনি ভারতকে দ্রুত চুক্তি স্বাক্ষরের আহ্বান জানাবেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহিরয়ার আলম বলেন, ভারত থেকে জ্বালানি তেল কিনতে পারে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে আলোচনা হতে পারে।
ভারতের মাধ্যমে রাশিয়ার তেল ক্রয়ের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তৃতীয় কোনো দেশের তেল ভারতের মাধ্যমে কেনার পরিকল্পনা এই মুহূর্তে নেই। তিনি বলেন, ‘ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করছি। তবে রাশিয়ার তেল নয়, আমরা ভারতের তেল নিতে পারি। ভারতের উত্তর-পূর্ব দিক থেকে একটি পাইপলাইন পার্বতীপুর দিয়ে করা হয়েছে। জ্বালানি ক্ষেত্রে অনেক সহযোগিতা হতে পারে। আলোচনার পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারব। ’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের অক্টোবরে সর্বশেষ ভারত সফর করেন। পরে কভিড মহামারির কারণে ২০২০ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী এক ভার্চুয়াল সামিটে অংশ নেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের সুবর্ণ জয়ন্তী এবং ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের লক্ষ্যে গত বছরের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং ডিসেম্বরে ভারতের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সফর করেন।
নির্বাচন নিয়ে আলোচনা নয়
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কোনো আলোচনা হবে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহিরয়ার আলম। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন অন্য কোনো রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানের সঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তু নয়।
দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একান্ত বৈঠক হবে কি না—এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যখনই অন্য কোনো দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে আলাপ করেন, তখন মোটামুটিভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে একান্ত আলোচনা হয়। ভারতের সঙ্গে সব সময় একান্ত আলোচনা হয়। আশা করব যে এবারও একান্ত আলোচনা হবে। ’
কাল শীর্ষ বৈঠক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেবেন। আগামীকাল মঙ্গলবার নয়াদিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে গার্ড অব অনারের মধ্য দিয়ে তাঁকে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানানো হবে। এরপর তিনি রাজঘাট গান্ধী সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা জানাবেন। পরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন হায়দরাবাদ হাউসে।
বৈঠক শেষে বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শেষে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী যৌথ বিবৃতি দেবেন।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন।
ভারতীয় শহীদদের উত্তরাধিকারীদের বৃত্তি
এবারের সফরে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে যেসব ভারতীয় সেনা সদস্য শহীদ হয়েছেন বা আহত হয়েছেন তাঁদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্টুডেন্ট স্কলারশিপ’ দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে স্কলারশিপ দেবেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতীয় সেনা সদস্যদের মহান আত্মত্যাগকে যথাযথ সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করা হবে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা
আগামী বুধবার বাংলাদেশ ও ভারতের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে একটি বিজনেস ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে বাংলাদেশের একটি উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল ভারত সফর করবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারত ও বাংলাদেশের মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এই ইভেন্টে উপস্থিত থাকবেন।
-অনলাইন ডেস্ক