• Top News

    জোর পাবে আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী, আজ শীর্ষ বৈঠক

      প্রতিনিধি ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৯:৪১:০৫ প্রিন্ট সংস্করণ

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দরে পৌঁছলে ভারতের রেল ও টেক্সটাইল প্রতিমন্ত্রী দর্শনা বিক্রম জারদোশ ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। পিআইডি

    (দিনাজপুর২৪.কম) চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি পৌঁছেছেন। গতকাল সোমবার নয়াদিল্লিতে পৌঁছলে ভারত তাকে লাল গালিচা অভ্যর্থনা জানায়। সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ভারতের রেল ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী দর্শনা বিক্রম এবং ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ ইমরান অভ্যর্থনা জানান। শেখ হাসিনার সম্মানে বিমানবন্দরে লাল গালিচা বিছানোর পাশাপাশি স্বাগতিক দেশের একটি সাংস্কৃতিক দল স্বাগত নৃত্য ও বাদ্যযন্ত্র পরিবেশন করে। এর আগে সকাল ১০টা ১৭ মিনিটে তার ফ্লাইট ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায়।

    এদিকে তিন বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চার দিনের নয়াদিল্লি সফর ‘বাংলাদেশ-ভারতের বহুমুখী সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে’ বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী। সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় তিনি এই আশা প্রকাশ করেন। টুইটে তিনি বলেন, ‘নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রীয় সফরে আসা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রেলওয়ে ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী দর্শনা বিক্রম জারদোশ উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। এ সফর দুই দেশের মধ্যে বহুমুখী সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।

    এদিকে আজ সফরের দ্বিতীয় দিন নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠক হবে শেখ হাসিনার। সূত্র জানায়, বৈঠকে দুই দেশের বিদ্যমান ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার বার্তা থাকবে। দুই দেশের সরকারপ্রধানের শীর্ষ বৈঠকে সম্পর্কের সব ইস্যু আবারও পর্যালোচনা করবে ঢাকা ও নয়াদিল্লি। বৈঠকে পানি বণ্টন ও তিস্তাচুক্তির প্রয়োজনীয়তার বার্তা দেবে ঢাকা। আশ্রিত মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য একটি ‘বড় বোঝা’। তাই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। একই সঙ্গে ভারত এ সমস্যা সমাধানে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মনে ঢাকা। বৈঠকে এ বিষয়ে বার্তা দেবেন শেখ হাসিনা।

    এ ছাড়া শীর্ষ বৈঠকে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধপরবর্তী বাস্তবতায় জ্বালানি সংকট নিরসনে কীভাবে একসঙ্গে কাজ করা যায়, সে প্রসঙ্গেও কথা বলবেন দুই প্রধানমন্ত্রী। দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি যেমন- দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, জনযোগাযোগ, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, নদীর অববাহিকাভিত্তিক পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত সুরক্ষা, নিরাপত্তা সহযোগিতা, মাদক চোরাচালান ও মানবপাচার রোধ প্রভৃতি গুরুত্ব পাবে। জানা গেছে, মেরিটাইম সিকিউরিটির জন্য ভারত থেকে রাডার ক্রয় নিয়েও কথা হবে। উপ-আঞ্চলিক এনার্জি হাব গঠন নিয়ে কথা হবে। আর সেটি হলো- বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটানকে নিয়ে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। এর নেতৃত্বে রয়েছে ভারত। বাংলাদেশ নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনতে চায়। একই সঙ্গে এই অঞ্চলে জ্বালানি নিরাপত্তা কানেক্টিভিটি বিষয়টি নিয়ে যৌথভাবে কাজ করতে চায় বাংলাদেশ। এ জন্য ভারতের ভূমি ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানে যাতায়াত চায় বাংলাদেশ। এর সঙ্গে বাংলাদেশ ‘এন্টি ডাম্পিং’ নীতি নিয়েও কথা বলবে।

    দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষ বৈঠকের পর তাদের উপস্থিতিতে বেশ কয়েকটি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক সই হবে। এগুলো পানি ব্যবস্থাপনা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, রেলওয়ে, আইন, তথ্য ও সম্প্রচার, প্রভৃতি ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্পর্কিত। অনুষ্ঠান শেষে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করবেন।

    দিল্লি সফরের প্রথম দিন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। এ বিষয়ে টুইট করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও। তিনি লেখেন- ‘আজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পেরে আমি আনন্দিত। আমাদের নেতৃত্ব স্তরের যোগাযোগের উষ্ণতা ও পুনরাবৃত্তি ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীর অংশীদারত্বের একটি সাক্ষ্য।’ বিপরীতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করকে আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি ও সহায়তার নতুন যুগ সৃষ্টির কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ভারত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। একই বছরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির বাংলাদেশ সফরের যে আবর্তন, তা প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরের মাধ্যমে পূর্ণতা পেল বলে জানিয়েছেন জয়শঙ্কর। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, ‘কেবল বাংলাদেশ ও ভারত নয়, পুরো অঞ্চলের কানেক্টিভিটিতে গুরুত্ব দিতে হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধপরবর্তী পরিস্থিতিতে এ ছাড়া উপায় নেই। অবকাঠামোগত কানেক্টিভিটি তো আছেই; এখন মানুষে মানুষে কানেক্টিভিটি, এনার্জি কানেক্টিভিটি, প্রযুক্তিগত কানেক্টিভিটি বাড়াতে হবে। ভারত থেকে আমরা বিদ্যুৎ আনছি। এখন নেপাল এবং ভুটানের সঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির কানেক্টিভিটি তৈরি করতে হবে। আমাদের বন্দর ব্যবহারে সবাইকে সুযোগ দিতে হবে। বিবিআইএনকে সক্রিয় করতে হবে।’ পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে আগামীকাল (মঙ্গলবার) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে ভালো কিছু হবে। তবে আজ প্রধানমন্ত্রী পানি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, বন্দর অবকাঠামো ও বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা করেছেন।

    পররাষ্ট্র সচিব জানান, পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দরগা জিয়ারত করেন। তিনি সেখানে কিছু সময় অতিবাহিত এবং ফাতিহা পাঠ ও মোনাজাত করেন। প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সচিব কেএম সাখাওয়াত মুন সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে নফল নামাজ আদায় ও মোনাজাতকালে দেশ, জাতি এবং মুসলিম উম্মাহর উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেন।

    তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী পরে নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দরগার বিভিন্ন অংশে যান। ভারতে সুফি সংস্কৃতির অন্যতম পবিত্র স্থান এই দরগাটি প্রায় ৭০০ বছরের পুরনো। বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকা-ের পর ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দিল্লিতে অবস্থানকালে শেখ হাসিনা নিয়মিত নিজামউদ্দিন দরগায় জিয়ারতে যেতেন। সেখান থেকে ফেরার পর বৈঠক করেন ভারতের আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানির সঙ্গে। তার পর প্রধামন্ত্রীর সম্মানে বাংলাদেশ হাইকমিশনের দেওয়া নৈশভোজে যোগ দেন শেখ হাসিনা। -নিউজ ডেস্ক

    মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।

    আরও খবর

    Sponsered content