• Top News

    সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে মিলছে না চিনি ও পাম অয়েল

      প্রতিনিধি ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৫:১১:৫৬ প্রিন্ট সংস্করণ

    সরকার চিনি ও পাম অয়েলের দাম কিছুটা কমিয়ে নির্ধারণ করে দিয়েছিল গত বৃহস্পতিবার। নতুন মূল্য অনুযায়ী গত রোববার থেকে এক কেজি খোলা চিনি বিক্রি হওয়ার কথা ৮৪ টাকা, প্যাকেটজাত এক কেজি চিনি ৮৯ টাকা এবং এক লিটার পাম অয়েল ১৩৩ টাকায়। অথচ গত দুই দিনে এ দামে কোনো বাজারে চিনি ও পাম অয়েল তেল বিক্রি হতে দেখা যায়নি। সরকার দাম বেঁধে দিলেও ব্যবসায়ীরা তা মানছেন না। খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল মালিকরা এখনও কম দামের চিনি ও তেল বাজারে ছাড়েনি-এ জন্য কম দামে বিক্রি করা যাচ্ছে না।
    ট্যারিফ কমিশন জানায়, খুচরা মূল্য ছাড়াও পাম অয়েল ও চিনির উৎপাদক এবং পাইকারি পর্যায়ের মূল্যও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রতি লিটার পাম অয়েল সুপারের মিলগেট পর্যায়ের মূল্য ১২৮ টাকা এবং পরিবেশক বা পাইকারি পর্যায়ের মূল্য ১৩০ টাকা।
    অন্যদিকে প্রতি কেজি খোলা চিনির মিলগেট মূল্য ৭৯ টাকা এবং পরিবেশক মূল্য ৮১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনির মিলগেট মূল্য ৮২ টাকা এবং পরিবেশক মূল্য ৮৪ টাকা। ট্যারিফ কমিশনের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, নতুন এ মূল্য গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে। তবে গত দুদিন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কোনো দোকানে নতুন এ দামের তেল-চিনি মেলেনি।
    বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এগুলো ব্যবসায়ীদের ছলচাতুরি। এ বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা যখন দাম বাড়ায় তখন তো সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদক, পাইকারি এবং খুচরা-সব পর্যায়ে দাম বেড়ে যায়। বরং অনেক ক্ষেত্রে দাম বাড়ানোর আগে বাজারে সরবরাহ কমিয়ে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে। অথচ ঠিক উল্টো চিত্র দেখা যায় সরকার যখন কোনো পণ্যের দাম কমানোর ঘোষণা দেয় তখন। সরকার দাম কমালে তখন আর সঙ্গে সঙ্গে বাজারে দাম কমানো হয় না। চিনি ও পাম অয়েলের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। আসলে আমাদের দেশের ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ীরা অসততার চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছেন। তাদের মধ্যে নীতি-নৈতিকতা বলতে কিছু নেই। সরকারও এ ব্যাপারে গা-ছাড়া ভাব দেখায়। যে দাম বেঁধে দেয়, সে দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে কি না সেটি তারা পর্যবেক্ষণ করে না। সরকারি সংস্থাগুলোর এ নির্লিপ্ততার জন্যও ব্যবসায়ীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছেন।’
    পাম অয়েলের দর লিটারে ১২ টাকা আর চিনিতে কেজিপ্রতি ছয় টাকা কমিয়ে সরকার গত রোববার থেকে কার্যকরের ঘোষণা দিলেও এদিন রাজধানীর বিভিন্ন দোকানে গিয়ে আগের দরেই পণ্য দুটি বিক্রি হতে দেখা যায়। পাম সুপার অয়েল আগের দাম ১৪৫ টাকা আর খোলা চিনি ৯০ ও প্যাকেটজাত চিনি ৯৫ টাকাতেই বিক্রি হয়। এ ছাড়া লাল চিনি প্রতি কেজি ১১৫-১২০ টাকায় বিক্রি করা হয়।
    বাজারের চিত্র এমন হলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার দাবি, তাদের বেঁধে দেওয়া নতুন দরেই বিক্রি হচ্ছে পণ্য দুটি। তবে সরকারি সংস্থা টিসিবির দৈনন্দিন বাজারদরের তথ্যেই প্রমাণ হয় এ কর্মকর্তার দাবি অসার। কারওয়ান বাজারের এক দোকানি বলেন, ‘আমরা বেশি দাম দিয়ে কিনেছি, তাই সে দামেই বিক্রি করব। আমাদের কাছে এমন কোনো নির্দেশনা আসেনি।’
    রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ইউসুফ জেনারেল স্টোরের মালিক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘দাম সরকারিভাবে বাড়ানো হয়েছিল। আমরা সে অনুযায়ীই বিক্রি করছি। এখন আবার কমানোর কথা শুনছি। কমানোর সিদ্ধান্ত দিলেই কি সঙ্গে সঙ্গে কমিয়ে ফেলতে হবে? সিদ্ধান্ত নিছে কমার তা আস্তে আস্তে কমবে। আমরা কম দামের তেল-চিনি এখনও হাতে পাইনি।’
    দাম তো কমল না, আপনারা কী করলেন-এমন প্রশ্নে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমার জানা মতে আমাদের নির্ধারিত দামেই পাম অয়েল ও চিনি বিক্রি হচ্ছে। ভোক্তাদের সুবিধার্থে মন্ত্রণালয় দাম কমিয়ে নির্ধারণ করে দিয়েছে, যা আজ থেকে কার্যকর। বেঁধে দেওয়া নতুন দর অনুযায়ী খুচরায় চিনির দাম কেজিতে ছয় টাকা এবং পাম অয়েলের দাম লিটারে ১২ টাকার মতো কমেছে। তবে এ দামের বাইরে যদি কোনো ভোক্তা কেনাকাটা করে তাহলে সে আইন অনুযায়ী ভোক্তা অধিদফতরে অভিযোগ করবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ভোক্তা জরিমানার ২৫ শতাংশ ফেরত পাবে।’
    এ কর্মকর্তা দাম কমার দাবি করলেও সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির বাজারদরের হিসাবেই তার প্রমাণ মেলেনি। সংস্থাটি রোববার দৈনন্দিন যে বাজারদর উল্লেখ করেছে, তাতে দেখা যায়, রোববার ঢাকায় সুপার পাম অয়েলের দর ছিল লিটারে ১৪৫-১৫০ টাকা। টিসিবি রোববার ঢাকায় চিনির দর উল্লেখ করেছে ৮৮-৯০ টাকা।
    বাংলাদেশ পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী সমিতির নেতা হাশেম আলী বলেন, ‘সরকারি দামের চিনি আমাদের হাতে আসতে আরও দুই-তিন দিন সময় লাগবে। কারণ মিল থেকে এখনও কম দামের চিনি আমরা পাইনি। আগের রেটের চিনি তো আর আমরা কম দামে বিক্রি করতে পারি না। আশা করছি আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে কম দামের চিনি বাজারে চলে আসবে।’
    এদিকে সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম না মানায় বাজারে অভিযান জোরদার করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এ বিষয়ে ভোক্তা অধিদফতরের মহাপরিচালক এএইচএম শফিকুজ্জামান বলেন, ‘যখন কোনো পণ্যের মূল্য বাড়ে তখন তড়িৎ গতিতে সেটি বাস্তবায়ন হয়। বাড়ানোর ক্ষেত্রে কিন্তু কোনো শুক্র, শনিবার নেই অর্থাৎ যখন মন চায় দাম বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে যখন দাম কমে তখন কিন্তু সেটি বাস্তবায়ন করার গতি অনেক স্লো। তখন পুরনো স্টক আর ফুরায় না। তবে সরকার তেল এবং চিনির যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সে দামে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছে কি না সেটি আমরা তদারকি করতে অভিযান জোরদার করেছি।’ -নিউজ ডেস্ক
    মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।

    আরও খবর

    Sponsered content