প্রতিনিধি ৭ অক্টোবর ২০২২ , ১১:৪৬:২২ প্রিন্ট সংস্করণ
(দিনাজপুর২৪.কম) সাম্প্রতিক সময়ে অস্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশের খাদ্যপণ্যের বাজার। গেল কয়েক সপ্তাহ ধরেই চড়া দরে বিক্রি হচ্ছে মাছ-মাংস ও সবজিসহ প্রায় সবধরনের পণ্য। নতুন করে চিনির কেজিতে ৬ টাকা এবং দেশি ও আমদানি করা আদার কেজিতে ১৫-২০ টাকা বৃদ্ধির খবরে বাজার হয়ে উঠেছে আরও নিয়ন্ত্রণহীন। তবে অস্থিতিশীল বাজারে পাম তেল লিটারে ৮ টাকা ও বোতলজাত সয়াবিনের লিটারে ১৪ টাকা কমা জনসাধারণের জন্য স্বস্তির খবরই বটে। তেল ছাড়া বাকি সব পণ্যের উচ্চমূল্য নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষকে বেশ বেকায়দায় ফেলেছে।
রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত দুই সপ্তাহের মতো অপরিবর্তিত দামে মাছ, মাংস, সবজি ও মুদি পণ্য চড়ামূল্যে বিক্রি চলছে। বর্তমানের প্রতি কেজি করলা-বেগুন ৮০, পটোল-ভেন্ডি- শসা ৬০, টমেটো ১৪০, গাজর ১২০-১৩০, পেঁপে-আলু ৩০ ও বরবটি ৬০-৭০ টাকা করে বিক্রি করছেন সবজি ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, প্রতিনিয়ত পণ্যের দাম বাড়ছে। যে পণ্যের মূল্য একবার বাড়ছে তার মূল্য কমার কোনো নিয়ম এখনো তৈরি হয়নি। মুদি পণ্যগুলোর মধ্যে কিছু কিছুর মূল্য কোম্পানির গাড়ি এলেই বেড়ে যায়। মাঝেমধ্যে যদি কোনো পণ্যের দাম কমে তা বাজারে আসার বেলায়ও গড়িমসি হয়। এতে করে ব্যবসায়ী ও ক্রেতার মধ্যে প্রায় বাকবিতণ্ডা চলে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাঁঠালবাগান, পলাশী, তেজতুরী ও কাওরানবাজর ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
পণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে স্বীকার করে কাঁঠালবাগান বাজারের সবজি ব্যবসায়ী সাইফুল বলেন, এখন বাজারে সবকিছুর দাম বেশি। গত ৩ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বাজারে সবধরনের সবজির দাম চওড়া রয়েছে। গত মাসের ৭০ টাকায় বিক্রি হওয়া করলা গিয়ে ঠেকেছে ৮০ টাকায়। সবজির দাম নিয়ে প্রায় ক্রেতাদের সঙ্গে ঝগড়া করতে হয়।
চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৪-৭৫, আটাশ ৫০-৫৪, স্বর্ণা ৫৫, নাজিরশাইল ৮০-৮৮ ও পোলাওর চাল ১২৫-১২৭ টাকা।
কাওরানবাজারের মক্কা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মাসুম বলেন, গত কয়েক দিন ধরে চালের দাম দম ধরে রয়েছে, বাড়ছেও না কমছেও না। তবে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রায় সবধরনের চালের দাম কিছু কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে এই ব্যবসায়ী আশা করেন।
মসলাজাত পণ্যের মধ্যে ২০ টাকা বেড়ে ১৭০ টাকার আদা বিক্রি হচ্ছে ১৯০-২০০ টাকায়। আদা ছাড়া প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৩৫-৪৫ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা কেজি দরে।
তেজতুরী বাজারের আদা-রসুন বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, দুই থেকে তিন সপ্তাহ ধরে পাইকারিতে ১০ টাকার বেশি বেড়েছে আদার দাম। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় খুচরা বাজারেও বেড়েছে। তবে আদার কোনো ঘাটতি নেই বলে জানান তিনি।
এদিকে মাছের বাজারেও একই অবস্থা দেখা গিয়েছে। অন্তত তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সবধরনের মাছের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতি কেজির তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ১৯০-২১০, পাঙ্গাশ ১৮০-১৯০, বড় রুই ৩৬০, বিগ-হেড মাছ ২২০ ও কালবাউশ ২৮০ টাকা। তবে নিষিদ্ধের জন্য ইলিশের দাম স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে। এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৫-১৬শ, ৮-৯শ গ্রামেরটা ১ হাজার ২শ টাকা এবং আধা কেজি থেকে ৬শ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা করে।
মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, অনেক দিন ধরে প্রায় সবধরনের মাছের দাম বেশি। তবে এর মধ্যে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ হওয়ায় তার দাম অনেকটা বেড়েছে।
এ ছাড়া মুরগি ও ডিমের বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগের মতো প্রতি কেজি বয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০, লেয়ার মুরগি ৩০০ এবং সোনালি মুরগি ৩২০ ও দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা। মুরগির দামের মতো অপরিবর্তিত দামে ফার্মের মুরগির লাল ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে। প্রতি ডজন ফর্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৬-১৫০, সাদা ডিম ১৩৫ ও হাঁসের ডিম ২১০ টাকা।
ডিম ও মুরগির বাজার নিয়ে জানাতে চাইলে পলাশী বাজারের চিকেন হাউজের বিক্রেতা টিপু বলেন, কাপ্তান বাজারের ডিম ও মুরগি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে ডিম ও মুরগির দাম চওড়া। তাদের কথার বাইরে কোনো কথা বলা যায় না। কাপ্তান বাজারের ব্যবসায়ীরা যেভাবে দাম নির্ধারণ করে দেন, সেভাবে মাল কিনতে অস্বীকৃতি জানালে ওইদিন আর মাল পাওয়া যায় না। আমরা খুচরা ব্যবসায়ীরা তাদের কাছে জিম্মি। -অনলাইন ডেস্ক