(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) জয়পুরহাট সদর উপজেলার পাঁচুর চক মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র (১৬) হত্যা মামলার ২১ বছর পর রায় ঘোষণা করা হয়েছে। রায়ে ১১ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে জয়পুরহাটের অতিরিক্ত দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক আব্বাস উদ্দীন এ রায় দেন। বিষয়টি আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) উদয় সিংহ দিনাজপুর টোয়েন্টিফোরকে নিশ্চিত করেছেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- জয়পুরহাট শহরের দেওয়ান পাড়া মহল্লার মৃত ইউনুস আলী দেওয়ানের ছেলে বেদারুল ইসলাম ওরফে বেদীন, শান্তিনগর মহল্লার শাজাহান মৃধার ছেলে সরোয়ার রওশন ওরফে সুমন, আরাফাত নগর মহল্লার মোসলেম উদ্দীনের ছেলে মশিউর রহমান এরশাদ ওরফে বাবু, দক্ষিণ দেওয়ানপাড়া মহল্লার মোহাম্মদ আলীর ছেলে মনোয়ার হোসেন ওরফে মনছুর, তেঘরবিশা মহল্লার মৃত কাবেজ উদ্দিনের ছেলে নজরুল ইসলাম, দেওয়ান পাড়া মহল্লার আজিজ মাস্টারের ছেলে রানা, দেবীপুর কাজীপাড়া মহল্লার মৃত মকবুল হোসেনের ছেলে শাহী, দক্ষিণ দেওয়ানপাড়া মহল্লার ওয়ারেছ আলীর ছেলে টুটুল, দেবীপুর মন্ডলপাড়ার রফিকুল ইসলামের ছেলে সুজন, দেবীপুর কাজীপাড়ার নূর হোসেনের ছেলে রহিম ও নওগাঁর ধামইরহাট ধুরইল গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে ডাবলু।
তাদের মধ্যে আজ আদালতে পাঁচজন উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন- সরোয়ার রওশন, মশিউর রহমান এরশাদ, মনোয়ার হোসেন, রানা ও শাহী। অন্য ছয়জন বেদারুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, টুটুল, সুজন, রহিম ও ডাবলুকে পলাতক দেখানো হয়েছে।
আদালত ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সালের ২৮ জুন বিকেলে জয়পুরহাট শহরের প্রামাণিকপাড়ার ফজলুর রহমানের ছেলে মোয়াজ্জেম হোসেন বাড়ি থেকে বের হয়। সেদিন আসামিরা মোয়াজ্জেমকে চিত্রা সিনেমা হল এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যান। এরপর ভিটি এলাকায় একটি কবরস্থানের পাশে আসামিরা মোয়াজ্জেমকে ধারালো অস্ত্র ও লাঠি দিয়ে আঘাত করে গুরুতর আহত করেন। পরে জামালগঞ্জ রোডের একটি আম গাছের নিচে অচেতন অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যান। এরপর ঘটনার দিন রাতে হাসপাতালে মোয়াজ্জেম মারা যায়।
সেদিন রাতে লোকের মুখে পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন মোয়াজ্জেমকে স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে। তার পায়ের রগ কাটা, দুই পায়ের হাঁটুর নিচসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম ছিল। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওইদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে মোয়াজ্জেম মারা যায়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহবুব আলম। তদন্তে তিনি হত্যাকাণ্ডে ১৪ জন জড়িত থাকার বিষয়ে সত্যতা খুঁজে পান। পরে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। ১৪ জনের মধ্যে ৩ জন আগেই মারা যান। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে আজ আদালত রায় ঘোষণা করেন।
আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) উদয় সিংহ বলেন, সাড়ে ২১ বছর আগে সদর উপজেলার এক স্কুলছাত্রকে পায়ের রগ কেটে দেওয়াসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করা হয়। ওই ঘটনায় ছাত্রের বাবা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছিলেন। মামলার দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত আজ রায় দেন। রায়ে ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন বিচারক। ১১ জনের মধ্যে ৫ জন হাজতি ছিলেন এবং তারা কোর্টে উপস্থিত ছিলেন। পরে পুলিশ পাহারায় তাদের হাজতে পাঠানো হয়েছে। এই রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট।
আসামিপক্ষের আইনজীবী নন্দকিশোর আগরওয়ালা বলেন, এই রায়ে আমরা ক্ষুব্ধ হয়েছি। মহামান্য হাইকোর্টে আপিল করা হবে। -নিউজ ডেস্ক