মাহতাব উদ্দিন আল মাহমুদ (দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় ২ মাসেও মজুরি পাননি অতি দরিদ্রদের জন্য ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসুচি প্রকল্পের ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের প্রথম পর্যায়ের ১ হাজার ২৪৯ জন শ্রমিকরা। এ উপজেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ইউজিপি প্রকল্পের আওতায় ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচির কাজ প্রায় ২ মাস আগে শেষ হলেও উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে ১ হাজার ২৪৯ শ্রমিক ৪০ দিন কাজ করে এখনো মজুরির টাকা পাননি। এতে কষ্ট করে দিন পার করছেন শ্রমিকরা। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইও) কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রনালয়ের ্অধিনে ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের ৪০ দিনের অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন
কর্মসুচির প্রথম পর্যায়ের কাজ গত ১১ নভেম্বর শনিবার ২০২৩ইং তারিখ কাজের উদ্বোধন করা হয়।কাজের উদ্বোধন করেন প্রকল্পের সভাপতি ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রফিকুল ইসলাম ।এ উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে ৩৬টি প্রকল্পে দৈনিক ৪’শ টাকা করে ১ হাজার ২৪৯ জন শ্রমিক কাজ করেছে। উপজেলার সিংড়া ইউনিয়নের মোঃ আনসার আলী নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, দিন করি দিন খাই। কিন্তু কাজ করে যদি মজুরি না পাই তাহলে কি হইলো? কাজ শেষ হবার পরে থেকে প্রচন্ড শীতে কাজ করিতে পারি নাই বেশ কয়েকদিন। অনেক কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছি।’
মোছাঃ খাইরন নেছা নামে এক নারী শ্রমিক বলেন, আমরা গরিব মানুষ। দিনের আয় দিয়ে কষ্ট করে সাংসার চালাই। প্রায় ২ মাস ধরে কষ্ট করে কাজ করে এক টাকাও মজুরি পাই নাই। এদিকে ঠান্ডায় কয়েক দিন কাজে যেতে পারি না। টাকার অভাবে শীতের কাপড় কিনতে পারি নাই। আশায় ছিলাম কাজ করছি টাকা পাব, কিন্তু টাকাই পাই নাই। শীতের কাপড়ও কিনতে পারি নাই। মানুষের কাছে টাকা ধার দেনা করে নিয়ে চাল ডাল কিনে ভাত খাচ্ছি। মানুষ টাকা পাবে, কিন্তু কাজের টাকা পাচ্ছি না। তাই মানুষের ধারের টাকা দিবার পারছি না। এছাড়াও এনজিও‘র কিস্তির টাকাও শোধ করতে পারছিনা। আর কতদিন পরে যে টাকা দেবে, অফিসাররাই ভালো জানেন।
মুনসুর আলী নামে এক শ্রমিক বলেন, আমারা দিনমজুর আমাদের প্রথম ২০ দিন কাজ করে অর্ধেক টাকা দেওয়ার কথা ছিল । কিন্তু টানা ৪০ দিন কাজ করেও আমাদের এক টাকাও মজুরি দেয়নি। কি কষ্ট করে যে সংসার চালাতে হচ্ছে। এনজিও থেকে লোন নিয়ে একটা গরু কিনেছি। কিন্তু এনজিওর কিস্তি দিছি মানুষের কাছে সুদে টাকা নিয়ে। আমরা শ্রমিকরা কাজ করছি আমাদের মজুরিগুলো দ্রুত দেওয়া হলে আমাদের খুব উপকার হবে।
কর্মসৃজন প্রকল্পের সিংড়া ইউনিয়নের শ্রমিকদের সর্দার বলেন, শ্রমিকরা প্রায়ই ফোন করে জানতে চান কোন দিন টাকা দেবে। তাদের চাপে ফোনেই ধরি না। ইউএনও স্যার ও পিআইও স্যারদের কাছে গিয়ে বার বার বলি স্যার শ্রমিকদের মজুরি কবে দেবেন। স্যারেরা বলেন, তোমাদের বিল করে পাঠিয়েছি বিল আসলে দিয়ে দেওয়া হবে। কবে নাগাদ বিল পাব স্যারেরাও সঠিক করে কয় না। উপজেলার সিংড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক মোঃ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, শ্রমিকরা মজুরি না পেয়ে খুব কষ্টে আছেন। তারা গরিব মানুষ, দিন আনে দিন খায়। আমরা চেষ্টা করছি। মন্ত্রণালয় থেকে বিলটা আটকে আছে। বিলটা ছাড়লে শ্রমিকরা বিল পেয়ে যাবেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ আজিজুর রহমান বলেন, শ্রমিকদের বিল দেওয়ার প্রয়োজনীয় কাগজ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। আশা করি শিগগিরই তারা বিল পেয়ে যাবেন। কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকদের মজুরি দ্রুত পাওয়ার বিষয়ে কাগজপত্র সময় মতো মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করি শিগগিরই শ্রমিকেরা তাদের নির্ধারিত মজুরি পাবেন।