(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) রোজা শুরুর আগের দিন গতকাল সোমবার ঢাকার বাজারে শসার কেজি ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। শসার পাশাপাশি রমজানের পণ্য হিসেবে পরিচিত প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়েছে। লেবু, কাঁচামরিচ, বেগুন, আলু, ডাল, আপেল, কমলা, আঙুর, খেজুর, বেসন, ডাব ও ইসপগুলের মতো ইফতার সামগ্রীর দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে বেড়েছে দেশি-বিদেশি সব ধরনের ফলের দাম। এতে ব্যয় সামলাতে দিশেহারা মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তরা। ইফতারের প্লেটে এসব সামগ্রী কতটা উঠবে, তা নিয়ে তাদের চোখে-মুখে সংশয় দেখা দিয়েছে।
কারওয়ান বাজার, পল্টন, শ্যামবাজার, সূত্রাপুর, বাদামতলী ও নিউমার্কেট সবজি-ফল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত সপ্তাহে যে আনারস (প্রতিটি) বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকায়, গতকাল বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়। বেল গত সপ্তাহে ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। অন্য ধরনের বেল যা আগে ছিল ৫০ থেকে ৭০ টাকা, সেটি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকায়। গত সপ্তাহে পাকা পেঁপের দাম ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি; গতকাল বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায়। ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজির পেয়ারা গতকাল বিক্রি হয় ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। তরমুজ গত সপ্তাহে কেজি ৫০ টাকা করে বিক্রি হলেও এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। এ ছাড়া সফেদা ১০০ টাকা থেকে বেড়ে ১৫০ টাকা, সবরিকলা ডজন ৮০ থেকে ১০০ বিক্রি হলেও তা বেড়ে ১১০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া সাগরকলা, চম্পাকলা, বাংলা কলাসহ প্রতিটির দাম ডজনে ১০-২০ টাকা বেড়েছে। ফল ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম বৃদ্ধির কারণে ক্রেতাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে রোজা উপলক্ষে তাদের বিক্রি বেড়েছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, রোজার মাসে সব পেশাজীবী বাড়তি আয়ের চেষ্টায় থাকে এবং নিজের বাড়তি ব্যয়ের বোঝা অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়। ফলে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। তবে সংযমের মাসে যে যার অবস্থান থেকে সংযমী হলে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা কমে আসবে।
রোজার সময় বহুল প্রচলিত একটি পণ্য হলো ইসপগুলের ভুসি। এই ভুসির দাম কেজিতে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বেড়ে ১৮শ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় খেজুর কেজিপ্রতি ২০০ থেকে ৫০০ টাকা দাম বেড়েছে। মোটামুটি মানের খেজুরের কেজি ৩০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের খেজুরের কেজি ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা, ভালো মানের খেজুর ১৬শ থেকে ২ হাজার বা তারও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। মসুর ডালের কেজি ১২০ থেকে ১৪৫ টাকা, খেসারির কেজি ১২০ টাকা, মুগডালের কেজি ১৯০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। বেসনের কেজি ১০০ থেকে ১৩০ টাকা এবং অ্যাংকর ডালের কেজি এখন ৯০ টাকা। ৯০ থেকে ৯৫ টাকার ছোলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়।
বাদামতলিতে পাইকারি বাজারে খেজুর কিনতে আসা খুচরা ফল ব্যবসায়ী আফজাল বলেন, গত ৩০ বছর ধরে ফলের ব্যবসা করি। প্রতি বছরই রোজার সময় ফলের চাহিদা বেড়ে যায়। অন্তত পঞ্চম রোজা পর্যন্ত ধনী-গরিব সবাই চেষ্টা করে ইফতারে ফলের আইটেম রাখতে। চাহিদার কারণে দামও বেড়ে যায়। প্রতি বছর রোজার আগেই অল্প অল্প দাম বাড়তে থাকে। কিন্তু রোজার দুই-তিন দিন আগেই মূলত দাম হুট করে বাড়ে। তবে এ বছর রোজা শুরুর ১০ থেকে ১২ দিন আগেই এক লাফে পাইকারি বাজারে সব ধরনের ফলের দাম বেড়েছে। বাজার পরিস্থিতির বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, আমাদের দেশের একশ্রেণির মানুষ আনন্দে রোজা পালন করে। আর যাদের রোজগার কম বা নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ, তারা কষ্টে থাকে। আমি বলতে চাচ্ছি, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষ সবাই ভোক্তা। রোজার মাসকে উৎসব হিসেবে নেওয়ার কারণেই সবার ব্যয় বাড়ে। আর এজন্য যে যার পেশায় আয় বাড়ানোর চেষ্টা করে এবং নিজের বাড়তি ব্যয়ের বোঝা অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়। এতে ভোগ্যপণ্য থেকে শুরু করে অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়ে যায়। কিন্তু রোজা সংযমের মাস। তাই, ব্যবসায়ী এবং ভোক্তা যে যার অবস্থান থেকে সংযমী হতে হবে। আর ব্যবসায়ীরা যাতে বেশি দাম রাখতে না পারে, সেজন্য একসঙ্গে এক সপ্তাহ বা এক মাসের কেনাকাটা বন্ধ করতে হবে। -নিউজ ডেস্ক