(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসনের আবহাওয়া তৈরি করতে সর্বশেষ লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘সবাইকে বলছি, আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করব। কিন্তু আমাদের গায়ে যদি লাঠির আঘাত পড়তে থাকে তাহলে কতদিন শান্তিপূর্ণ থাকব। প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ একসাথে চালাতে হবে। না হলে আরও অনেক হাবিবুর রশিদ হাবিবদের কারাগার যেতে হবে, প্রতিকার পাওয়া যাবে না।’
শনিবার (৪ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। হাবিবুর রশিদ হাবিব মুক্তি পরিষদের উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা মামলা’ প্রত্যাহার এবং বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাবিবুর রশিদ হাবিবের বিরুদ্ধে ‘হয়রানিমূলক মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
রিজভী বলেন, ‘হাইকোর্টে আওয়ামী লীগ, পুলিশ আওয়ামী লীগ, প্রশাসনের ডিসি-এসপিরা ছাত্রলীগ। এরকম একটা পরিবেশে মানুষের দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কোনো ন্যায়বিচার নেই। মানুষ আদালতে যায় প্রতিকার পাওয়ার জন্য, সেটাও নেই।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দুদিন ধরেই বলছেন তাকে নাকি কিছু রাজনৈতিক দল উৎখাতের চেষ্টা করছে। আমার কথা হচ্ছে রাজনৈতিক দল উৎখাতে চেষ্টা করবে কেন? আপনি (শেখ হাসিনা) আপনার সরকার উৎখাত হোক এটা তো জনগণ চাচ্ছে। আর ক্ষমতায় আসা না আসা এটা কোনো রাজনৈতিক দলের ওপর নির্ভর করে না। এটা নির্ভর করে জনগণের ওপর। আপনি জনগণের মালিকানা কেড়ে নিয়েছেন, ভোটার অধিকার কেড়ে নিয়েছেন, বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছেন। আপনার ক্ষমতা চলে যাক এটা কিন্তু জনগণ চায়।’
রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন ৭৯,৭৮ সাল থেকে গণতন্ত্র নাকি ধ্বংস করা হয়েছে। ওনি নাকি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেছে। আমরা গণতন্ত্র, রাষ্ট্র, সরকারের আভিধানিক অর্থ জানি। পলিটিক্যাল সায়েন্স ও ডিকশনারিতে এর অর্থ আছে। কিন্তু শেখ হাসিনার যে কথাবার্তা চিন্তাধারা সেটা জানতে হলে তার জন্য আলাদা একটা ডিকশনারি বা পলিটিকাল সায়েন্স ডিপার্টমেন্ট খুলতে হবে।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘শেখ হাসিনার গণতন্ত্রের নমুনা হলো কক্সবাজারের কুখ্যাত বিখ্যাত ব্যক্তি বদি, সে প্রকাশ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান নুর আলমকে পিস্তল দেখিয়েছে যে, কেন সে আবার উপজেলা নির্বাচন করবে। সরিষাবাড়ীতে আওয়ামী লীগের যিনি প্রার্থী তিনি বলেছেন, তার বিরুদ্ধে কোনো প্রার্থী দাঁড়াতে পারবে না। বরিশালের হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, তার মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে যে থাকবে তার নাকি হাত-পা ভেঙে দেওয়া হবে। এই হচ্ছে শেখ হাসিনার গণতন্ত্রের নমুনা। এই গণতন্ত্র তিনি চালু করেছেন যখনই ক্ষমতা এসেছেন। এই গণতন্ত্র তিনি চালু করেছেন ৫ জানুয়ারি ২০১৪, ২০১৮ এবং ৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে। তার মত অনুযায়ী গণতন্ত্রের ব্যাখ্যা দিতে হবে। বাংলাদেশে জনগণের অধিকার বলে যে কথাটা আছে তিনি তা মুছে দিয়েছেন, নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন। কারণ তিনি যে দুঃশাসন চালাচ্ছেন তার বিরুদ্ধে যেন কেউ টু শব্দ করতে না পারে।’
রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনা উন্নয়নের কথা বলেন। একটা প্রবাদ আছে, অন্ধের হাতি দর্শন শেখ হাসিনার উন্নয়ন। মানুষ অভুক্ত, খেতে পারছে না, তারপরও শেখ হাসিনার উন্নয়নের কথা বলতে হবে। আলু, পেঁয়াজ, বোরো চাষ করার জন্য কৃষকরা ৫০০০ টাকা ঋণ নেয়, সেই ঋণ শোধ করতে না পারলে কৃষকদের জেলে যেতে হয়। আর হাজার হাজার কোটি টাকা যারা ঋণ নিয়েছে তারা হচ্ছে ক্ষমতার ঘনিষ্ঠ। তারা প্রকাশ্য আলোতে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং সরকারের পাশে থাকে তারা। এটা শেখ হাসিনার সুশাসনের একটি নমুনা।’
ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘১০ হাজার টাকার জন্য কৃষক যায় জেলে আর নিয়ম বহির্ভূত যে ১০ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে সে শেখ হাসিনার পাশে, এটাই হচ্ছে তার সুশাসন। এই কারণেই শেখ হাসিনা তার স্বৈরাচারী শাসন টিকিয়ে রাখতে চান। এই কারণে তিনি গণতন্ত্র বিরোধী দল বিএনপি সহ্য করতে পারেন না। এই কারণেই হাবিবুর রশিদ হাবিব, আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, হাবিবুন নবী খান সোহেলরা কারাগারে, সাইফুল ইসলাম নীরবরা কারাগারে।’ -নিউজ ডেস্ক