সোমবার , ৬ মে ২০২৪ | ২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. আইন আদালত
  3. আর্ন্তজাতিক
  4. এক্সক্লুসিভ
  5. কৃষি ও কৃষাণ
  6. ক্যাম্পাস
  7. ক্রিকেট
  8. গল্প-সাহিত্য
  9. চাকুরি
  10. জাতীয়
  11. জেলার খবর
  12. টালিউড
  13. টেনিস
  14. তথ্য-প্রযুক্তি
  15. ধর্ম ও ইসলাম

শতভাগ বিদ্যুতায়নের বাংলাদেশ যখন লোডশেডিংয়ের কবলে

প্রতিবেদক
admin
মে ৬, ২০২৪ ৬:১২ পূর্বাহ্ণ

মো. শাহ্ আলম নূর আকাশ, সম্পাদক (দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) শহরজুড়ে আলোর রোশনাই। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নামে শহরে। কিন্তু আঁধার ছুঁতে পারে না নগর মহানগরকে। রঙিন আলোয় সবসময় ঝলমল করে আমাদের শহরগুলো। তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে তেতাল্লিশ পেরিয়ে চুয়াল্লিশ ছোঁয়। তবুও শীতাপত কক্ষে বড় আরামদায়ক জীবন কতিপয় মানুষের। অন্যদিকে পাগলা ঘোড়ার মতো তেজি গরমে গ্রাম তখন ডুবে থাকে অন্ধকারে। গ্রামেগঞ্জে এখন আর বিদ্যুৎ যায় না। আসে মাঝে মাঝে। বিদ্যুৎ বিভাগ ষোল হাজার চারশো সাতাত্তর মেগাওয়াট উৎপাদনের তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বলে আমরা সফল! এছাড়া দেশজুড়ে শতভাগ বিদ্যুতায়নের সফলতার গল্পও শুনি আমরা। কিন্তু কথা হলো, বিদ্যুতের আওতায় আসা, আর বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ পাওয়া এক নয়। শহরের বাইরে প্রায় সব গ্রামাঞ্চলে দিনে দশঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হয়।

একটা কথা প্রায়ই বলা হয়, বিএনপি সরকারের আমলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ছিল চার হাজার মেগাওয়াট। আর এখন আমাদের সক্ষমতা ২৭ হাজার মেগাওয়াট! কিন্তু একটা কথা আলোচনায় আসে না, তখন চার হাজার মেগাওয়াটের বিপরীতে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল কত। আর এখন সাতাশ হাজার মেগাওয়াটের বিপরীতে চাহিদা কতখানি। তাহলেই লোডশেডিংয়ের হিসাবটা বের হয়ে আসতো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেই হিসাব কোথাও সংরক্ষিত নেই। আরও একটা বিষয়, বিএনপি সরকারের আমলে দেশের মাত্র ৪৭ শতাংশ মানুষের বিদ্যুতায়নের আওতায় ছিল। তা বেড়ে এখন শতভাগ মানুষ বিদ্যুতায়নের আওতায়। অবশ্যই এটি স্বস্তির খবর। কিন্তু কথা হলো বিদ্যুতের লাইন থাকা, সংযোগ থাকা—এক জিনিস। আর বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারা আরেক জিনিস। প্রান্তের জনপদের মানুষগুলো কি বিদ্যুৎ পাচ্ছেন? এর উত্তর কোথায়।

হ্যাঁ, বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের আমলে বিদ্যুৎখাতে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। বিদ্যুতের বদলে মানুষকে খাম্বা দেওয়া হয়েছে। সরকারের বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেছেনও। কিন্তু এখন কী হচ্ছে? কেন মানুষ এখন লোডশেডিংয়ের যাঁতাকলে পিষ্ট। গলদটা কোথায়। খোঁজাটা কি জরুরি নয়?

বিদ্যুতের আওতায় আসা, আর বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ পাওয়া এক নয়। শহরের বাইরে প্রায় সব গ্রামাঞ্চলে দিনে দশঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হয়।

আচ্ছা, লোডশেডিংয়ের আলাপ থাক। মানুষ এখন আগের তুলনায় ফ্যান এসি ব্যবহার করছেন বেশি। কলকারখানার ব্যবহার বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। ফলে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়েছে। বিদ্যুৎ তো আর এমন জিনিস না, উৎপাদনের পর মজুদ করে রাখা যায়। পরে আবার প্রয়োজন মতো ব্যবহার করা যাবে!

সুতরাং নানা কারণে মানুষকে লোডশেডিংয়ের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। মেনে নিলাম। কিন্তু একটা প্রশ্নের উত্তর কি কেউ দিতে পারবেন? পিডিবি কেন লোকশান এবং দেনার দায়ের মধ্যে পড়েছে? গণমাধ্যমের খবর বলছে, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র মালিকদের পাওনা দুই বছর ধরে শোধ করতে পারছে না বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-বিপিডিবি। এখন পর্যন্ত বকেয়া ছাড়িয়ে গেছে ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো। লোকশানও প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা।

এই প্রেক্ষাপটে নতুন খবর হলো বিদ্যুতের দাম বছরে চারবার বাড়িয়ে আগামী তিন বছরের মধ্যে বিদ্যুৎখাতে ভর্তুকি তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। আর এটা নাকি করা হচ্ছে আইএমএফ’র পরামর্শে। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যুতের দাম অল্প অল্প করে বাড়ানো হবে, যেন গ্রাহকরা ধাক্কা না খান। আচ্ছা, কতটুকু হলে পরে তাকে ধাক্কা বলে তা কি তারা ব্যাখ্যা করে বলবেন?

দ্রব্যমূল্যের আগুন দামে মানুষের এমনিতেই দিশেহারা অবস্থা। এরমধ্যে নতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়লে ধাক্কা কীভাবে লাগবে না, একটু বুঝতে চায় মন। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব বলছে—‘সরকার কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য বিদ্যুৎ ও অন্যান্য জ্বালানির দাম বাড়াতে যাচ্ছে।’

ক্যাব আরও বলছে, ‘সরকার অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করলে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হতো না।’ এখন অনিয়ম ও দুর্নীতি আছে কি না তা আমরা কী করে বলবো? কারণ নাগরিকের হাতে তো কোনো প্রমাণ থাকে না। নাগরিক কেবল পারে দাবি জানাতে। যাদের কাছে প্রমাণ থাকার কথা, কিংবা যারা বিষয়গুলো তদন্ত করার ক্ষমতা রাখে, তারা একটু খতিয়ে দেখুক। সেই দাবি জানাচ্ছি। জোরের সঙ্গে জানাচ্ছি।

বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র মালিকদের পাওনা দুই বছর ধরে শোধ করতে পারছে না বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-বিপিডিবি। এখন পর্যন্ত বকেয়া ছাড়িয়ে গেছে ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো। লোকশানও প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা।

এদিকে আবার তিন মাস পরপর অর্থাৎ বছরে চারবার বিদ্যুৎ বিল বাড়ানোর খবরে উদ্বিগ্ন উদ্যোক্তারা। ব্যবসায়ীদের মতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং হামাস-ইসরায়েল সংঘাতের কারণে এমনিতেই বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা যাচ্ছে।

অন্যদিকে দেশে ডলারের অতিমূল্য এবং অতিরিক্ত বিল দিয়েও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস বিদ্যুৎ না পাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। নতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়লে ব্যবসার খরচও বেড়ে যাবে। তাদের কথা অযৌক্তিক তা বলছি না। তবে ‘উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে’ তাদের এই কথাটা বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি।

উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া মানেই ভোক্তার ওপর চাপ বাড়া। এটা তো সবারই জানা, আমাদের ব্যবসায়ীরা নানান ছুতোয় এমনিতেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়, বিদ্যুতের দাম বাড়লে তারা তো সেরের ওপর সোয়া সের চাপিয়ে দেবে!

ভোক্তার তাহলে উপায় কী? একে তো দিনের পর দিন মিটার ভাড়া দিয়েও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না মানুষ। তার ওপর বিদ্যুতের দাম বাড়লে তার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ দুইরকম প্রভাবই পড়বে সাধারণ মানুষের জীবনে। মানুষ তাহলে যাবেন কোথায়।

প্লিজ মানুষের কথা একটু ভাবুন। মানুষ সেবা চায়, মানুষ জবাবদিহি চায়। দেশের মানুষ অল্পেই তুষ্ট। শুধু নিজেদের অনিয়ম অক্ষমতা আর দুর্নীতির চায় মানুষের ওপর চাপিয়ে দেবেন না দয়া করে। -সূত্র : গণমাধ্যম কর্মীর পাতা থেকে

সর্বশেষ - রাজনীতি