(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন নতুন ১৩টি কর অঞ্চলে চলছে কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়া। নবগঠিত কর অঞ্চলগুলোতে ছয়টি ক্যাটাগরিতে ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডে নিয়োগের জন্য ইতোমধ্যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। কর অঞ্চলগুলোর আওতায় সার্কেল অফিসগুলোতে দুই শতাধিক কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের দাবি, কমন পদ নিয়োগ বিধিমালা ২০১৯ অনুসারে ‘প্রধান সহকারী’ পদটি পদায়নযোগ্য। এ পদে কোনোভাবেই সরাসরি নিয়োগ দেওয়া যাবে না। তারা বলছেন, কাস্টমস বিভাগেও নবসৃষ্ট কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট (উত্তর) ও কাস্টমস রিস্ক ম্যানেজমেন্টের অফিস আদেশে প্রধান সহকারী পদটির জন্য ‘কমন নিয়োগ বিধিমালা’ অনুসরণ করা হয়েছে। তাহলে কর অফিসের জন্য কেন ‘কর বিভাগ নিয়োগ বিধিমালা ২০১৬’ প্রযোজ্য হবে।
প্রধান সহকারী ছাড়া অন্যান্য পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ‘কমন পদ নিয়োগ বিধিমালা ২০১৯’ অনুসরণ করা হচ্ছে। প্রধান সহকারী পদে নিয়োগের জন্য ‘এনবিআরের কর বিভাগ নিয়োগ বিধিমালা ২০১৬’ অনুসরণ করা হচ্ছে, যেখানে সরাসরি নিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এখানেই তৈরি হয়েছে অসন্তোষ
তারা বলেন, কর বিভাগে নবসৃষ্ট কর অঞ্চলগুলো অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে। ছাড়পত্রে প্রধান সহকারী পদটিতে সরাসরি নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কমন পদ নিয়োগ বিধিমালা-২০১৯ অনুযায়ী, প্রধান সহকারী পদটি শতভাগ পদোন্নতিযোগ্য। এতে আমরা যারা নিচের পদে কর্মরত আছি, তারা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কারণ, প্রধান সহকারী পদ ‘কমন পদ’ নয়। এনবিআর চাইলে আমরা যারা পদোন্নতির যোগ্য, তাদের অভিজ্ঞতার কথা বিবেচনা করে আমাদের পদোন্নতি দিয়ে নিয়োগ দিতে পারে। এত দিন কর বিভাগে কাজ করার পর এটুকু আমরা চাইতেই পারি। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এ দাবি মানা উচিত। আমাদের দাবি কি অযৌক্তিক? কর্মরত কর্মচারী থেকে কর অঞ্চলে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, বিষয়টি এমনও নয়। দাবি না মানলে আমরা এটি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টেও যেতে পারি।
উদাহরণ টেনে তারা বলছেন, সিলেট ও চট্টগ্রামের কর অঞ্চল ‘কমন পদ নিয়োগ বিধিমালা-২০১৯’ অনুসরণ করে প্রধান সহকারী ও উচ্চমান সহকারী পদের জন্য নিয়োগ ও পদোন্নতি কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। একই বিভাগে আলাদা নিয়ম হবে কেন? এ ছাড়া কর বিভাগ নিয়োগ বিধিমালা-২০১৬ এর ক্রমিক নং-৯, ১০, ১৬, ২২ ও ২৩ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী নিয়োগ ও পদোন্নতি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। আসলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চাইলে সমস্যার সমাধান করতে পারে। কিন্তু তারা সেটি চাচ্ছেন না।
এ বিষয়ে জানতে কর প্রশাসন বিভাগের সদস্য, প্রথম সচিবসহ বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে, নাম প্রকাশ না করে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা (সদস্য) বলেন, কর্মচারীরা শুধু শুধু ভয় পাচ্ছেন। আমরা তো পুরোনো অফিসে নিয়োগ দিচ্ছি না। নতুন কর অঞ্চলে সবই নতুন, সেখানে প্রতিটি পদেই নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তারা যে কমন পদ বিধিমালার কথা বলছেন, সেটি মানতে আমরা বাধ্য নই। কারণ, এনবিআরের নিজস্ব কর বিধিমালা রয়েছে। কেন আমরা কমন বিধিমালা অনুসরণ করব? যাদের নিজস্ব বিধিমালা নেই, তারা ওই বিধিমালা অনুসরণ করবে। তাদের দাবি যৌক্তিক নয়।
এ ছাড়া নতুন অফিসে যারা নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন তারা সবাই নতুন। সেখানে তো পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থী নেই। তাহলে কি আমরা প্রধান সহকারী পদ খালি রাখব? এটি কোনো যুক্তির কথা হলো না— বলেন ওই কর্মকর্তা।
অন্যদিকে, কর অঞ্চল-৬ ও নতুন কর অঞ্চল-২৪ এর অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা কমিশনার মো. লুৎফুল আজীম বলেন, ‘নতুন লোকবল নিয়োগ দিতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। এনবিআরের নির্দেশনা ও নিয়োগবিধি অনুসরণ করেই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।’
প্রায় একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন কর অঞ্চল-১২ এর কর কমিশনার মো. শাহাদৎ হোসেন শিকদার। যিনি নতুন কর অঞ্চল-২৫ এর কমিশনারের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
এ ছাড়া নতুন কর অঞ্চলের একাধিক কমিশনার বলেন, নিয়োগ দেওয়ার জন্য একটি নিয়োগ কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেহেতু এনবিআরের নিজস্ব কর বিভাগ নিয়োগ বিধিমালা-২০১৬ রয়েছে। কিছু পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে ওই বিধিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে। সেখানে কমন বিধিমালা প্রযোজ্য হবে না। কর্মচারীদের দাবি যদি মানতে হয় তাহলে প্রধান সহকারী পদটি খালি রাখতে হবে। সেটি তো আমরা পারব না। কারণ, এই মুহূর্তে অন্য কর অফিস থেকে কাউকে বদলি করে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ নেই। আমাদের তো অফিস চালাতে হবে। যারা দাবি করছেন তারা নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতি পাবেন।
কর্মচারীদের ক্ষোভের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ক্ষোভ থাকতেই পারে। কিন্তু সবসময় সব সমস্যার সমাধান হয় না। অনেকে আবার না বুঝে বিরোধিতা করছেন।’
কমন পদ নিয়োগ বিধিমালায় যা বলা আছে
২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত গেজেটে ‘কমন পদ নিয়োগ বিধিমালা-২০১৯’ এর ধারা- ৩ এর বিশেষ বিধানে বলা হয়েছে, নিয়োগ পদ্ধতি, সরাসরি নিয়োগ, পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ ও শিক্ষানবিশ সংক্রান্ত সাধারণ বিধানগুলো তপশিল ব্যতীত সব মন্ত্রণালয় বা বিভাগের কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালার বিধান অনুযায়ী নির্ধারিত হবে।
উপধারা-২ এ বলা হয়েছে, কোনো পদ পূরণের ক্ষেত্রে সরাসরি ও পদোন্নতির মাধ্যমে কোটা বিভাজনে কোনো ভগ্নাংশ হলে উভয় প্রকার কোটায় ভগ্নাংশ পূর্ণ সংখ্যা হিসেবে পদোন্নতির কোটার সঙ্গে যুক্ত হবে। পদগুলো হলো– সাঁটলিপিকার, সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর, নিম্নমান সহকারী তথা মুদ্রাক্ষরিক, প্লেইন পেপার কপিয়ার, ডুপ্লিকেটিং মেশিন অপারেটর, ডিসপাস রাইডার, দপ্তরি ও এমএলএস (অফিস সহকারী)। এসব পদের ৪০-৫০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। যদিও সেখানে শর্ত রয়েছে– নিচের পদ থেকে উপরের পদে পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলেই কেবল সরাসরি নিয়োগ দিতে পারবে কর্তৃপক্ষ।
তবে, প্রধান সহকারী পদটি সরকারি নিয়োগের বিধানে উল্লেখ করা হয়নি। বরং বিধিমালার তফসিল-১ এর বিধি ২ (খ) এর ১ নম্বর ক্রমিকে বলা হয়েছে, উচ্চমান সহকারী পদে বা সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে অন্যূন দুই বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকলে পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান সহকারী হতে পারবে।
যা আছে কর বিভাগের নিয়োগ বিধিমালায়
কর বিভাগ নিয়োগ বিধিমালা-২০১৬ এর তফসিল-১ এ প্রধান সহকারী পদে নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। তফসিলের ১৩নং কলামে বলা হয়েছে, প্রধান সহকারী পদে সরাসরি নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া যাবে, সেক্ষেত্রে উচ্চমান সহকারী পদে অন্তত পাঁচ বছর চাকরি করতে হবে। অন্যদিকে, পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সরাসরি নিয়োগেরও সুযোগ রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রার্থীর বয়স হতে হবে ৩০ বছর এবং যোগ্যতা হতে হবে কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রি, কম্পিউটার বেসিক ট্রেনিং কোর্সে উত্তীর্ণ এবং গৃহীত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। -নিউজ ডেস্ক