(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়ার শেষ দিন ছিল আজ শুক্রবার (৩১ মে)। এদিন সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ১১টি ফ্লাইটে দুই হাজারের বেশি যাত্রী মালয়েশিয়ায় গেছেন। এখনো একটি ফ্লাইট বাকি আছে৷ সেটি রাত ১১টার দিকে যাওয়ার কথা। তবে এর বাইরেও কয়েক হাজার কর্মীর মালয়েশিয়া যাওয়ার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়েছে। অনেকে দালালদের মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছেন। অনেকে তাদের শেষ সম্বলটুকু দিয়েও বিদেশে যেতে না পেরে চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছেন।
শুক্রবার রাত ৯টার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেবব্রত ঘোষ ঢাকা মেইলকে বলেন, এখন পর্যন্ত ১১টা ফ্লাইট ছেড়ে গেছে৷ এর মধ্যে সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় একটা বিমানের ফ্লাইটও গেছে। এছাড়া বিভিন্ন এয়ারলাইন্স প্রায় দুই হাজার যাত্রীকে মালয়েশিয়ায় নিয়ে গেছে। এই তালিকায় কতজন বাংলাদেশি কর্মী হিসেবে দেশটিতে গেছেন তা এই মুহূর্তে বলা মুশকিল।
এই কর্মকর্তা জানান, মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য ১০টি ফ্লাইটের ব্যবস্থা থাকলেও পরে আরও দুটি বাড়ানো হয়। সব শেষটা এখনো যায়নি।
প্রবাসী কল্যাণ সূত্র জানায়, মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের আরও একটি ফ্লাইট আছে। সেটিই সর্বশেষ ফ্লাইট। এই ফ্লাইট যারা ধরতে পারবেন না তাদের আর দেশটিতে শ্রমিক হিসেবে যাওয়ার সুযোগ হবে না।
জানা গেছে, সকাল থেকে বিমানবন্দরে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য কয়েক হাজার কর্মী ভিড় করে। তবে তাদের বেশিরভাগেরই টিকিট ছিল না। ফলে যাদের আগেই টিকিট বুকিং ছিল তারা যেতে পেরেছেন। আর বঞ্চিত হয়েছেন কয়েক হাজার।
সূত্র জানায়, সকাল থেকে ১০টি নির্ধারিত ফ্লাইট ছিল। পরে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণাল অনুরোধ করে মালয়েশিয়াগামী বাড়তি একটি ফ্লাইটের ব্যবস্থা করতে। তাদের অনুরোধে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় একটি বিশেষ ফ্লাইট পাঠায়েছে। বিজি ৩০৮২ ফ্লাইটে ২৭১ জন মালয়েশিয়া গেছেন বলে জানিয়েছেন বিমানের ব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. আল মাসদ খান।
অনিয়মের ঘটনায় চার বছর বন্ধ থাকার পর ২০২২ সালে বাংলাদেশিদের জন্য আবার মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলে। তখন আবারও চক্র গঠন করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে গত মার্চে মালয়েশিয়া জানায়, দেশটি আপাতত আর শ্রমিক নেবে না। যারা অনুমোদন পেয়েছেন, ভিসা পেয়েছেন, তাদের ৩১ মের (শুক্রবার) মধ্যে মালয়েশিয়ায় ঢুকতে হবে।
এদিকে ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে (রিক্রুটিং এজেন্সি) টাকা দেওয়া বহু মানুষ এখন বিপদে পড়েছেন। সময় আর হাতে না থাকায় উড়োজাহাজের টিকিট ছাড়াই তারা বিমানবন্দরে এসে ভিড় করেন। তবে শেষ পর্যন্ত হাজারও মানুষের কোনো গতি হয়নি। হতাশা ও দুশ্চিন্তা মুষড়ে পড়া শ্রমিকদের অনেকেই নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে এখনো বিমানবন্দরেই অপেক্ষা করছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালে অগ্রগতি পরিদর্শনে গিয়ে মালয়েশিয়ার টিকিট সংকট নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান। তিনি বলেন, ‘বিমান ভাড়ার বিষয়টা সাপ্লায়ার এবং বিমানের ব্যাপার। যারা এটার সঙ্গে জড়িত, তারা ডেডলাইনের এক মাস আগে জানত। কিন্তু এটা নিয়ে রিক্রুটিং এজেন্সি বা অন্য যারা সাপ্লায়ার আছে, তারা ব্যবস্থা নেয়নি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘এখন বিমান প্রতিদিন মালয়েশিয়ায় তিন থেকে চারটা করে ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। গতকাল (বুধবার) মালয়েশিয়ার কিছু লোক ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ায় একটা এয়ার কম্বোডিয়ার একটা এয়ারক্রাফট দিয়ে একটি চার্টাড ফ্লাইট পরিচালনার পারমিশন চেয়েছে, সেদিনই আমরা তাদের পারমিশন দিয়ে দিয়েছি। এটা এফিশিয়েন্ট আমরা মনে করি।’
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের ধারণা ছিল মালয়েশিয়া শেষ পর্যন্ত সময় বাড়াবে। কিন্তু দেশটি সময় আর না বাড়ানোর কারণে এই বিপাকে পড়তে হয়েছে। তবে যারা ইতোমধ্যে মালয়েশিয়ায় চলে গেছেন তাদের যেন কোনো সমস্যা না হয় সে ব্যাপারে মন্ত্রণালয় চেষ্টা করছে বলে সূত্রে জানা গেছে। -নিউজ ডেক্স