(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা বাড়লেও তা বিপিএম ৬ অনুযায়ী ১৯ দশমিক ৫৩ বিলিয়নে অবস্থান করছে। যা একসময় ৪৮ বিলিয়নের ডলারে উঠেছিল। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে (আইএমএফ) সরবরাহের জন্য নেট ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভ (এনআইআর) বা ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ হিসাবে মাত্র ১৩ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার। এমন পরিস্থিতিতে আইএমএফ চলতি জুনেই রিজার্ভ সংরক্ষণের মাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে ১৪ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। তাহলে নির্ধারিত লক্ষ্যের চেয়ে রিজার্ভ ঘাটতি ১ দশমিক ৫২ বিলিয়ন। এই লক্ষ্য পূরণ না হলে ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ঋণের তৃতীয় কিস্তির ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার আইএমএফের ২৪ জুন বোর্ডে ছাড় না পেতে পারে এমন অনিশ্চয়তা ঘনীভূত হয়েছে। আর অনিশ্চয়তা কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি বন্ধ করে উল্টো রিজার্ভ বাড়াতে ডলার কেনাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট রিজার্ভ ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। বিপিএম ৬ হিসাবে ১৯ দশমিক ৫৩ বিলয়ন। সেখান থেকে চলতি দায় বাবদ ৫ দশমিক ২৪ বিলিয়ন বাদ দিলে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার। যা আইএমএফের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্য ১৪ দশমিক ৮০ বিলিয়ন থেকে প্রায় ১ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার কম।
গত ৬ জুন পর্যন্ত রিজার্ভের তথ্য আইএমএফকে সরবরাহ করা হয়েছে। তাদের লক্ষ্যের তুলনায় প্রায় দুই বিলিয়ন ঘাটতি ছিল। এরমধ্যে বিদেশ থেকে ঋণ এসেছে। বিশ্বব্যাংকের ৫০০ মিলিয়নসহ আরও ৯০০ মিলিয়ন ঋণে ঘাটতি কমে যাবে। আর চলতি জুনে মাত্র ৪০ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। সোয়্যাপর মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ডলার কেনায় আইএমএফের আপত্তি থাকায় বাজার থেকে সরাসরি ডলার কেনা চলমান রয়েছে। নতুন করে ঋণের ৯০০ মিলিয়ন যোগ হলে রিজার্ভ ১৪ বিলিয়ন পার হতে পারে। তবুও ঘাটতি পূরণ হবে না বলে ধারণা। তবে যেকোনো মূল্যে তৃতীয় কিস্তি পেতে রিজার্ভ বাড়াতে বদ্ধপরিকর কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
অর্থ মন্ত্রনালয় সূত্র জানায়, আইএমএফ ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের শর্ত হিসাবে চলতি জুনে রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। যা পুরণে ঘাটতি দেড় বিলিয়নের বেশি। সবশেষে আগামী ২২ জুন রিজার্ভের হালনাগাদ তথ্য পাঠাবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর লক্ষ্য পূরণ না হলেও ঋণের তৃতীয় কিস্তি বাবাদ ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার ২৪ জুন বোর্ড অনুমোদন পাওয়া নিয়ে ঝামেলা হতে পারে।
এ বিষয় বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, রিজার্ভের নতুন লক্ষ্যমাত্রা ১৪ দশমিক ৮০ বিলিয়ন হলেও তার পূরণ করা কঠিন। কারণ, দেশের রিজার্ভে বৈদেশিক মুদ্রা যেসব উৎস থেকে আসে ও ব্যয় হয়, সেখানে ভারসাম্য নেই। ফলে রিজার্ভ ধরে রাখা যাচ্ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে আইএমএফের অন্যান্য শর্ত পূরণে অগ্রগতি থাকায় ঋণে ইতিবাচক মনোভাব দেখাতে পারে বোর্ড।
অর্থমন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে রিজার্ভ লক্ষ্যমাত্রা ১৪ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার এবং ডিসেম্বর শেষে ১৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ২০২৫ সালের মার্চ শেষে ১৬ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার এবং একই বছর জুনে তা ১৯ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। অথচ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভের লক্ষ্য ছিল ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১ সালের আগস্ট মাসে মোট রিজার্ভের রেকর্ড ছিল ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলয়ন ডলার। যা কমতে মাত্র ৩৪ মাসে এসে নেমেছে ২৪ বিলিয়নের ঘরে। আর ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আইএমএফের বাঁধা সত্ত্বেও রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থবছরের ৯ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৩ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন। এবং ২০২১-২২ বছরে ছিল ৭ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার। এই তিন অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ৩০ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে।
অপরদিকে আইএমএফের আপত্তির মুখে চলতি অর্থবছরে সোয়াপ পদ্ধতিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ৪ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আইএমএফের ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭৬ দশমিক ২৭ মিলিয়ন ডলার এসেছে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। আর দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে প্রায় ৬৮১ মিলিয়ন ডলারের আসে গত বচরের ডিসেম্বরে। আর তৃতীয় কিস্তি ছাড়ে বোর্ডে উঠতে যাচ্ছে আগামী ২৪ জুন। -নিউজ ডেস্ক