(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) লালমনিরহাট ও নাটোরের দুই আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি থেকে ১০ জনের পুড়ে যাওয়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে লালমনিরহাটে এক আওয়ামী লীগ নেতার পুড়ে যাওয়া বাড়ি থেকে ছয়জনের এবং নাটোরের সংসদ সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম শিমুলের বাসভবন থেকে অগ্নিদগ্ধ চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আমাদের লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি জানান, সোমবার (৫ আগস্ট) দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল বাসার চার তলার একটি কক্ষ থেকে ছয়টি মরদেহ উদ্ধার করে। সম্পূর্ণ পুড়ে যাওয়ায় মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে মরদেহগুলো আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বলে দাবি করছেন নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের পরিবার। জানা যায়, গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রাজপথে নেমে আসেন শিক্ষার্থীসহ আমজনতা। সরকারপ্রধানের দেশত্যাগের খবরে উল্লাস করেন জনতা। মিষ্টি বিতরণের হিড়িক পড়ে যায় জেলাজুড়ে। এ সময় গোটা জেলায় বিজয় মিছিল বের করেন তারা। সেই সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সব সংসদ সদস্য ও নেতাদের বাসা বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন দুর্বৃত্তরা।
এছাড়াও লালমনিরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেনের বাসা, লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসনের ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমানের বাসা, যুগ্ম সম্পাদক সাখওয়াত হোসেন সুমন খানের বাসা ও সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, জেলা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি বিলাশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হয়। বিকেলের দিকে বাড়িটি পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। তবে সেসময় বাড়িতে ওই আওয়ামী লীগ নেতা ও তার পরিবারের কেউ ছিলেন না।
গতকাল শহরের মিশনমোড়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়া ৬ শিক্ষার্থী বিকেল থেকে নিখোঁজ ছিলেন বলে জানা গেছে। আন্দোলন শেষে মিশনমোড় থেকে কয়েক হাজার আন্দোলনকারী একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি থানা রোডের শহীদ মিনার এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় কিছু দুর্বৃত্তরা বাড়িটিতে আগুন দেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। নিখোঁজদের পরিবার সেনাসদস্যদের সহায়তায় রাতে বাড়িটিতে গিয়ে মরদেহগুলো দেখতে পায়। পরিবারের ধারণা, লাশগুলো তাদের নিখোঁজ সন্তানদের হতে পারে। ৬ শিক্ষার্থীর পরিবারের মধ্যে রাজিবুল করিম সরকারের বাবা রেজাউল করিম বলেন, রাত থেকে আ.লীগ নেতা সুমন খানের বাড়ির নিচে ছিলাম। পুড়ে যাওয়া দেহ ও কাপড়, জুতাসহ অনেক কিছু দেখে আমার ছেলেকে চিনতে পেরেছি। তিনি আরও বলেন, টয়লেটের ভেতরে ৬ জনকে সম্ভবত আগেই আটকে রাখা হয়েছিল। পরে অগ্নিকাণ্ডে তারা পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
লালমনিরহাট ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন অফিসার শহিদুর রহমান জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে শোনার পরেই সুমন খানের বাসা থেকে ছয়জনের পুড়ে যাওয়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলো লালমনিহাট সদর থানায় জমা দেওয়া হয়েছে। তারা ডিএনএ টেস্ট করে তাদের পরিচয় শনাক্ত করে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করবে।
অন্যদিকে নাটোরের সংসদ সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম শিমুলের বাসভবন জান্নাতি প্যালেস থেকে অগ্নিদগ্ধ চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সকালে শহরের কান্দিভিটুয়া এলাকায় সংসদ সদস্য শিমুলের বাড়িতে সাধারণ মানুষ মরদেহ দেখতে পায়।
নিহতরা হলেন- শহরের তালতলা হাফরাস্তা এলাকার মো. বকুলের ছেলে এইচএসসি পরীক্ষার্থী সিয়াম, উপশহর এলাকার দেলোয়ার হোসেন খানের ছেলে মিকদাদ হোসেন খান, উত্তর বড়গাছা এলাকার মো. আব্দুল মজিদের ছেলে শরিফুল ইসলাম মোহন এবং শহরের মল্লিকহাটি এলাকার ফজের আলীর ছেলে ইয়াসিন আলী।
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবরে নাটোরের সড়কে নেমে আসে হাজার হাজারো উৎসুক জনতা। হাতে লাঠিসোটা ও জাতীয় পতাকা নিয়ে সড়কে নেমে উল্লাস ও মিছিল শুরু করেন তারা। এসময় শহরের প্রতিটি সড়ক ও রাস্তাঘাট ভরে যায়। একে অপরকে মিষ্টি খাওয়াতে দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা। একপর্যায়ে বিকেল ৪টার দিকে শত শত বিক্ষুব্ধ জনতা শহরের কান্দিভিটুয়া এলাকায় এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের জান্নাতি প্যালেস বাড়িতে আগুন দেয়। এসময় চারজন লুটপাটের উদ্দেশ্যে জান্নাতি প্যালেসে প্রবেশ করে। পরে আগুনের কারণে বের হতে না পেরে ভেতরে আটকা পড়ে চারজনের মৃত্যু হয়।
এতে মুহূর্তে ডুপ্লেক্সের তিনতলার পুরো বাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। কয়েক ঘণ্টা ধরে জ্বলতে থাকে পুরো বাড়ি। এসময় বাড়ির ভেতরে সকল কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। মঙ্গলবার সকালে সাধারণ মানুষ পুড়ে যাওয়া বাড়িতে গিয়ে চারটি মরদেহ দেখতে পায়। তবে নিহতের উদ্ধার করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দেখা যায়নি। -নিউজ ডেস্ক