(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন আমাদের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষ্য। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে এবং বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থকে সামনে রেখে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজনীতি এবং রাষ্ট্র বিনির্মাণ করব। শুক্রবার মানিক মিয়া এভিনিউয়ে দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেন। তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক নতুন সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে আমাদেরকে সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠার সকল সম্ভাবনার অবসান ঘটাতে হবে। নতুন দলের সদ্য দায়িত্ব গ্রহণকারী নাহিদ বলেন, ‘আমরা মনে করি, ২৪’র জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক (দ্বিতীয় বারের মতো প্রজাতন্ত্র) প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের সূচনা করেছে। নবগঠিত দলের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় নাগরিক পার্টি-জেএনপি হবে একটি গণতান্ত্রিক, সমতাভিত্তিক ও জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী একটি রাজনৈতিক দল।
নাহিদ বলেন, ২০২৪‘র জুলাই ছাত্র-জনতার বিপুল আত্মত্যাগের মাধ্যমে এক অভূতপূর্ব গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ দেড় দশক ধরে জেঁকে বসা ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটিয়েছে। কিন্তু, আমাদেরকে স্মরণ রাখতে হবে— হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে অর্জিত এই নতুন স্বাধীনতা কেবল একটি সরকার পতন করে আরেকটি সরকার বসানোর জন্যই ঘটেনি। তিনি বলেন, জনগণ বরং রাষ্ট্রের আস্টেপিস্টে জেঁকে বসা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপের মাধ্যমে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আকাঙ্খা থেকে এই অভ্যুত্থানে সাড়া দিয়েছিল— যেন জনগণের অধিকারভিত্তিক এবং মর্যাদাভিত্তিক একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়। সে লক্ষ্য নিয়ে আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিচ্ছি।
নাহিদ বলেন, আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক-এ জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষায় শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। ভেঙে পড়া রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় গড়ে তোলা ও তাদের গণতান্ত্রিক চরিত্র রক্ষা করা হবে আমাদের রাজনৈতিক অগ্রাধিকার। এর মধ্যে দিয়ে কেবল আমরা একটি পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে আবির্ভুত হতে পারব।
তিনি বলেন, আমরা এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ চাই, যেখানে সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে বিভেদের বদলে ঐক্য, প্রতিশোধের বদলে ন্যায়বিচার এবং পরিবারতন্ত্রের বদলে মেধা ও যোগ্যতার মানদণ্ড প্রতিষ্ঠা হবে। আমাদের রাজনীতিতে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কোনো স্থান হবে না।
নাহিদ বলেন, আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক-এ সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বরকে মূলধারায় তুলে আনা হবে। রাষ্ট্রে প্রতিটি নাগরিককে সমান গুরুত্ব প্রদান ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। আমরা একটি ন্যায্যতা ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় আমাদের সংকল্প আবারও পুনর্ব্যক্ত করতে চাই।
তিনি বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ২৪’র জুলাই গণঅভ্যুত্থান কেবল একটি ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধেই বিজয় নয়, এটি আমাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণেরও শপথ। চলুন আমরা একসঙ্গে হাত হাত রেখে আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলি— যেখানে প্রতিটি নাগরিকের কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনি হবে, সেখানে ন্যায় প্রতিষ্ঠা মানুষের অধিকারের সংগ্রামই রাজনীতির অন্যতম লক্ষ্য, সেখানে সাম্য ও মানবিক মর্যাদা হবে রাষ্ট্রের ভিত্তি। এখনই হবে নতুন স্বপ্ন দেখার নতুন পথ চলার এবং একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার।
নাহিদ বলেন, আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক অধরা কোনো স্বপ্ন নয়, এটিই আমাদের আজকের দিনের সামনের বাংলাদেশের প্রতিজ্ঞা।
এর আগে আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক কমিটি(জেএনসি) ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের(এডিএসএম) নেতারা একত্রিত হয়ে নাহিদ ইসলামকে আহ্বায়ক ও আখতার হোসেনকে সদস্য সচিব করে দল গঠন করেন।
অনুষ্ঠানে দলের একটি আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়, যা সারা দেশ থেকে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটায়।
সম্মেলনে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও আরিফুল ইসলাম আদিবকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এবং তাসনিম জারা ও নাহিদা সারোয়ারকে সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব করা হয়।
এছাড়া হাসনাত আবদুল্লাহকে দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান সংগঠক এবং সারজিস আলমকে উত্তরাঞ্চলের প্রধান সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পেয়েছেন নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সমন্বয়কের দায়িত্ব পেয়েছেন আবদুল হান্নান মাসুদ।
আজ বিকল ৪টা ২০ মিনিটে পবিত্র কোরআন, গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়।
এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের সম্মানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় শাহাদাত বরণকারী শহীদ ইসমাইল হোসেন রাব্বীর বোন মীম আক্তার আনুষ্ঠানিকভাবে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের নাম ঘোষণা করেন।
পরে সদস্য সচিব আখতার হোসেন আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদের নেতৃত্বের নাম ঘোষণা করেন। কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্যান্য শূন্য পদের নেতাদের নাম শিগগিরই ঘোষণা করা হবে বলে জানান আখতার হোসেন।
এর আগে সামান্তা শারমিন, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, নুসরাত তাবাসসুম, আবদুল হান্নান মাসউদসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রনেতা বক্তব্য দেন। -নিউজ ডেস্ক