(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) রাজধানীর শাহজাদপুরের বীরউত্তম রফিকুল ইসলাম এভিনিউর মজুমদার ভিলায় অবস্থিত আবাসিক হোটেল সৌদিয়ায় অগ্নিকাণ্ডে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। পুড়ে গেছে ভবনটির একটি বড় অংশ। এই ঘটনার পর বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। হোটেল ভবনটি নির্মাণের সময় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। হোটেলটিতে ছিল না কোনো ধরনের ফায়ার সেফটি ব্যবস্থাও। ঘটনার পর হোটেল মালিক পলাতক রয়েছেন। পাওয়া যাচ্ছে না কোনো কর্মচারীকেও।
সোমবার (৩ মার্চ) দুপুরে ওই ভবনটিতে আগুন লাগলে প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে ভবনটির ছয় তলা থেকে চারজনের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।
বিকেলে হোটেল সৌদিয়ার আশপাশে থাকা দোকানদার, পথচারী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভবনটিতে আগুন লাগার সময় তারা কোনো চিৎকার-চেঁচামেচি শুনতে পাননি। ফলে ভবনটিতে কয়েকজন আটকা পড়লেও তাদের বের করে আনার চেষ্টা করা সম্ভব হয়নি।
শাহজাহান মিয়া নামে একজন পথচারী বলেন, তিনি আগুন দেখতে পেয়েছেন। তবে কাউকে চিৎকার-চেঁচামেচি করতে শোনেননি। আগুন লাগার প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।
এদিকে ফায়ার সার্ভিসের সূত্র বলছে, ভবন ও হোটেল মালিককে ফায়ার সেফটির বিষয়ে বারবার নোটিশ করার পরও তারা কোনো ধরনের জবাব দেননি। ফলে আজকের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় চারজনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে মনে করছেন ফায়ার সার্ভিস সংশ্লিষ্টরা।
ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা জোনের সহকারী পরিচালক কাজী নজমুজ্জামান জানিয়েছেন, ভবনটি নির্মাণের জন্য রাজউকের কোনো অনুমোদন ছিল না। এছাড়া ফায়ার সেফটি কোনো ধরনের ব্যবস্থাও ছিল না। পাশাপাশি রুমগুলো ছিল খুব সংকীর্ণ। ছাদে ওঠার সিঁড়ির দেয়ালে থাকা জানালা ও দরজা ছিল বন্ধ। ফলে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
ভবনটির নিচ তলায় থাকা মুন্নি এন্টারপ্রাইজে গাড়িচালক ইব্রাহিম বলছিলেন, আগুনটা ঠিক দুপুর ১২টার পরপরই লাগে। তবে আমরা নিচে থাকলেও বুঝতে পারিনি। উপরে যে কেউ আগুনে আটকে পড়েছে আমরা সেটাও জানতে পারিনি। কারণ কেউ চেঁচামেচি বা চিৎকারও করেনি।
তিনি জানান, আগুন লাগার পর ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে প্রচুর ধোঁয়া বের হতে থাকে। পথচারীরা দেখতে পেয়ে চিৎকার শুরু করে। এরপর তিনিসহ পাশে থাকা অন্য দুটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীরা বেরিয়ে আসেন। এরপর তারা ফায়ার সার্ভিসের খবর দেন। ফায়ার সার্ভিস এসে ভবনটির সংকীর্ণ সিঁড়ি দিয়ে উঠতে না পারায় দক্ষিণ দিকে ভবনের তৃতীয় তলার দেয়াল কেটে ভেতরে ঢুকে এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে তারা ভবনটির চিলেকোঠা থেকে তিনজন এবং হোটেলটির বাথরুমের সামনে থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার করে বলে জানতে পারেন তিনি।
ইব্রাহীম জানান, ভবনটিতে আগুন লাগার পর মালিক তানভীর ও অন্য কর্মচারীরা ঘটনাস্থলে ছিলেন। কিন্তু আগুন নেভানোর পরপরই তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ভবনটির মালিক জহুরুল ইসলাম বিদেশে থাকেন। তার ভাই তানভীর ভবনটিতে ‘হোটেল সৌদিয়া’ নামে আবাসিক হোটেল খুলে ব্যবসা করেন।
আশপাশের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভবনটির ভেতরে থাকা একটি বিউটি পার্লার থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে পুলিশ বলছে, বিউটি পার্লারটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। সেটির মালিক এক নারী। সাইনবোর্ডে তার ফোন নম্বর থাকলেও তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ছেলেকে বিদায় দিতে এসে লাশ হলেন বাবা!
হোটেলটি থেকে যে চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে তার মধ্যে একজনের পরিচয় মিলেছে। তিনি হোটেলটিতে গেস্ট হিসেবে উঠেছিলেন। ছেলে প্রবাসে যাবে, তাকে বিদায় দিতে গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছিলেন ওই ব্যক্তি। পুলিশ ও ঢাকা মেডিকেল সূত্রে জানা গেছে, হোটেলটিতে সোমবার সকাল আটটায় ওঠেন পিরোজপুরের মিরন জম্মাদার (৬০)।
নিহতের স্বজনরা জানিয়েছেন, মিরনের ছেলে মুবিন জমাদ্দার আগামীকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার একটি ফ্লাইটে সৌদি আরবে যাবেন। বিমানবন্দর যাতায়াতের সুবিধার্থে মিরন হোটেলটিতে ওঠেন। অন্যদিকে ছেলে ওঠেন হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের পাশে থাকা একটি হোটেলে।
সোমবার সকালে মিরন তার বোনের স্বামী হিরন তালুকদারের সাথে ঢাকায় আসেন। তারা একই হোটেলে ওঠেন। এরপর তারা সকালে বাইরের একটি রেস্তোরাঁয় নাস্তা করেন। পরে মিরন হোটেলে চলে যান। দুপুরের দিকে মিরন তার বোনের স্বামীকে কল করে বলেন, হোটেলে আগুন লেগেছে এবং তিনি ধোঁয়ার কারণে কিছু দেখতে পাচ্ছেন না। এর কিছুক্ষণ পর মিরনের ফোন কলটি কেটে যায়। এরপর থেকে তার সাথে আর ফোনে যোগাযোগ করতে পারেননি হিরন। মিরন হোটেলটির চার তলার ৪০২ নম্বর রুমে উঠেছিলেন।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, হোটেলটির ছয়তলার চিলেকোঠা থেকে তিনজন এবং বাথরুমের সামনে থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি তিনজনের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। বাকিরাও হোটেলে গেস্ট হিসেবে উঠেছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ডিএমপির গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেছুর রহমান জানান, তারা ভবন থেকে চারজনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন। এর মধ্যে একজনের পরিচয় পেয়েছেন। বাকি তিনজনের পরিচয় এখনো জানতে পারেননি। তাদের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। -নিউজ ডেস্ক