শনিবার , ১৫ মার্চ ২০২৫ | ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. আইন আদালত
  3. আর্ন্তজাতিক
  4. এক্সক্লুসিভ
  5. কৃষি ও কৃষাণ
  6. ক্যাম্পাস
  7. ক্রিকেট
  8. গল্প-সাহিত্য
  9. চাকুরি
  10. জাতীয়
  11. জেলার খবর
  12. টালিউড
  13. টেনিস
  14. তথ্য-প্রযুক্তি
  15. ধর্ম ও ইসলাম

সংস্কারে সমর্থন গুতেরেসের

প্রতিবেদক
admin
মার্চ ১৫, ২০২৫ ৮:৫৩ পূর্বাহ্ণ

(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) বাংলাদেশে চলমান সংস্কার উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। গতকাল শুক্রবার ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ সমর্থন জানান। এ সময় তিনি বাংলাদেশে আশ্রিত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার জন্য বৈশ্বিক তহবিল কাটছাঁটে উদ্বেগ জানান। জাতিসংঘ মহাসচিবের চার দিনের ঢাকা সফরের দ্বিতীয় দিন গতকাল সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ওই বৈঠক হয়।

বৈঠক প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে ঢাকার সংস্কার এজেন্ডার প্রতি জাতিসংঘের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং বিশ্বের ‘সবচেয়ে বৈষম্যের শিকার জনগোষ্ঠীর’ জন্য তাঁর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব তাঁর ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূসকে বলেন, ‘আমি সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রতি আমাদের পূর্ণ প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করতে চাই। আমরা আপনার সংস্কারকে সমর্থন জানাতে এখানে আছি। আপনার শুভকামনা করছি। আমরা যা করতে পারি, আমাদের জানান।’

মহাসচিব বলেন, সংস্কারগুলো একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং দেশের ‘প্রকৃত রূপান্তর’ ঘটাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি জানি, সংস্কার প্রক্রিয়া জটিল হতে পারে।’

গুতেরেস বলেন, পবিত্র রমজান মাসে মায়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে তিনি এখানে এসেছেন।

কক্সবাজারে শিবিরে বসবাসকারী ১২ লাখ রোহিঙ্গার জন্য মানবিক সহায়তা কমার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে গুতেরেস বলেন, ‘আমি কখনো এমন বৈষম্যের শিকার হতে দেখিনি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের ভুলে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘(সহায়তা) কাটছাঁট করা একটি অপরাধ।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, বিশ্বজুড়ে মানবিক সাহায্য যখন সংকুচিত হচ্ছে, তখন পশ্চিমা দেশগুলো প্রতিরক্ষা ব্যয় দ্বিগুণ করছে।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের ‘ব্যাপক কৃতজ্ঞতা’ প্রকাশ করেছেন গুতেরেস। তিনি বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা জনগণের প্রতি অত্যন্ত উদার। রোহিঙ্গারা আমার জন্য একটি বিশেষ বিষয়।

গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে বাংলাদেশ সফরের জন্য অধ্যাপক ইউনূস জাতিসংঘ মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আপনার সফরটা খুব সময়োপযোগী। আপনার সফর শুধু রোহিঙ্গা জনগণের জন্য নয়, বাংলাদেশের জন্যও সময়োপযোগী।

প্রধান উপদেষ্টা সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পর্কে গুতেরেসকে অবহিত করেন। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের ব্যাপারে এরই মধ্যে প্রায় ১০টি রাজনৈতিক দল তাদের মতামত জমা দিয়েছে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ছয়টি কমিশনের সুপারিশে একমত হলে, তারা জুলাই মাসের একটি সনদে স্বাক্ষর করবেন। ওই সনদ দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং রাজনৈতিক, বিচার বিভাগীয়, নির্বাচনী, প্রশাসনিক, দুর্নীতিবিরোধী এবং পুলিশ সংস্কার বাস্তবায়নের পথনকশা হবে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কারের ‘একটি সংক্ষিপ্ত প্যাকেজ’-এ সম্মত হলে ডিসেম্বরে নির্বাচন হতে পারে। তবে দলগুলো সংস্কারের ‘একটি বৃহত্তর প্যাকেজ’-এ সম্মত হলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে।

প্রধান উপদেষ্টা ‘অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

অধ্যাপক ইউনূস মায়ানমারের পশ্চিম রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমিতে মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের জন্য এবং এরই মধ্যে ১২ লাখ রোহিঙ্গার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য এবং মানবিক সহায়তা সংগ্রহের জন্য মহাসচিবের সমর্থন কামনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গা জনগণের দুর্দশার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছি। বিশ্ববাসীর জানা উচিত, তারা কিভাবে কষ্ট পাচ্ছে, তাদের মধ্যে হতাশা রয়েছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, তিনি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন। তিনি রোহিঙ্গাদের অগ্রাধিকার দিয়ে তাদের জন্য সহযোগিতা আদায়ের চেষ্টা করবেন।

গুতেরেস বিশ্বের কিছু সমস্যাগ্রস্ত প্রান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী বাহিনীর অবদানের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের কর্মকাণ্ড অসাধারণ। একটি ন্যায্য বিশ্বের জন্য বাংলাদেশ সামনের সারিতে কাজ করে।

অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অনন্য অভিজ্ঞতা লাভ করে। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মোতায়েনের অর্থ আমাদের কাছে অনেক।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, বৈঠকে ভূ-রাজনীতি ও সার্কের বর্তমান অবস্থা এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কও আলোচনায় তুলে ধরা হয়েছে।

অধ্যাপক ইউনূস দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক ফোরাম পুনরুজ্জীবিত করার জন্য তাঁর প্রচেষ্টা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ আসিয়ানেরও সদস্য হতে চায়।

প্রধান উপদেষ্টা হিমালয় অঞ্চলের দেশগুলো থেকে বিপুল জলবিদ্যুত্ আমদানি ও উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও ভারতকে নিয়ে একটি দক্ষিণ এশিয়ার গ্রিড তৈরির লক্ষ্যে তাঁর প্রস্তাবও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ চট্টগ্রাম অঞ্চলে একাধিক বন্দর নির্মাণ করছে, যাতে দেশটিকে ‘একটি অর্থনৈতিক কেন্দ্র’ হিসেবে রূপান্তরিত করা যায়।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন ও জাপান।

অর্থনীতির অবস্থা সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তাঁর সরকার উত্তরাধিকারসূত্রে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতি পেয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ভেঙে পড়া ব্যাংকিং খাত, ক্রমহ্রাসমান রিজার্ভ এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান।

ড. ইউনূস বলেন, ‘অর্থনীতি এখন শক্তিশালী হয়েছে। কয়েক মাস ধরে রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ভালো।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এমন এক পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে যে অন্তর্বর্তী সরকার এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দেশটি আগামী বছর স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ লাভ করবে। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, প্রধান উপদেষ্টা পূর্ববর্তী সরকারের নেতৃত্ব এবং তাঁদের সহযোগীদের দ্বারা চুরি করা কয়েক বিলিয়ন ডলার ফিরিয়ে আনার জন্য তাঁর সরকারের প্রচেষ্টার কথাও তুলে ধরেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ১৬ বছরের দীর্ঘ স্বৈরশাসনের সময় প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়েছে। আমরা অর্থ ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু এটি একটি জটিল ও  দীর্ঘ প্রক্রিয়া।

মহাসচিব বলেন, এগুলো তাঁকে ১৯৭৪ সালে পর্তুগালে বিপ্লবের দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়।

অধ্যাপক ইউনূস জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ককে শেখ হাসিনা সরকারের নৃশংসতা এবং সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধের নথিভুক্তকরণের জন্য জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধান মিশনের কাজের জন্য ধন্যবাদ জানান।

ড. ইউনূস বলেন, ‘তিনি (তুর্ক) একটি দুর্দান্ত কাজ করেছেন। নৃশংসতা সংঘটিত হওয়ার ঠিক পরই তাঁরা অপরাধগুলো নথিভুক্ত করেছেন। তাঁদের আবার ফিরে এসে আরো কাজ করতে দিন।’

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার হাইরিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান ও সিনিয়র সচিব লামিয়া মোর্শেদ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রাবাব ফাতিমা এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুইন লুইসও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গতকাল সকালে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার হাইরিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন।

ওই সাক্ষাত্ প্রসঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র জানান, জাতিসংঘ ও বাংলাদেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার পাশাপাশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি বাংলাদেশের উদারতার জন্য মহাসচিব কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। মহাসচিব বাংলাদেশের সংস্কার ও উত্তরণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে একাত্মতা জানান। জাতিসংঘ মহাসচিব শান্তিরক্ষায় দৃঢ় প্রতিশ্রুতির জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান।

জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র জানান, মহাসচিব ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশের চলমান উত্তরণ ও সংস্কার প্রচেষ্টা নিয়ে আলোচনা করেছেন। মহাসচিব ও হাইরিপ্রেজেন্টেটিভ। রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি এবং মায়ানমারে রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিষয়ে আসন্ন উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন নিয়ে আলোচনা করেছেন। -ডেস্ক রিপোর্ট

সর্বশেষ - ক্যাম্পাস