(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশের ওপর যে অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন সেটার পুনর্বিবেচনা চেয়ে তাকে চিঠি দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। চিঠিতে তিন মাসের জন্য এই শুল্ক প্রস্তাব স্থগিত রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সোমবার (৭ এপ্রিল) বিকেলে এই চিঠির কথা প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
চিঠিতে বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন করে আরোপিত শুল্ক পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানানো হয়েছে। একই সাথে বাংলাদেশের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে শুল্ক সুবিধা দেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা তার চিঠিতে ফেব্রুয়ারিতে সরকারের প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমানের ওয়াশিংটন ডিসি সফরের প্রসঙ্গ টেনে লিখেছেন, ‘আমরাই প্রথম দেশ যারা এই ধরনের সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছি’। তখন থেকেই, দুই পক্ষ সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। বাংলাদেশ প্রথম দেশ যারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলপিজি) আমদানির জন্য বহু-বছর মেয়াদী চুক্তি করেছে।
চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশের পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য হলো, যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি পণ্য যেমন তুলা, গম, ভুট্টা এবং সয়াবিনের আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকরা সুবিধা পায়। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের চাইতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের রফতানি পণ্যের উপর সবচেয়ে কম শুল্ক ধার্য করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মার্কিন পণ্যের ওপর আরও শুল্ক কমানো হচ্ছে, যার মধ্যে গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের মতো শীর্ষ মার্কিন রফতানি পণ্য রয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ তুলার জন্য আলাদাভাবে শুল্কমুক্ত বন্ডেড গুদাম নির্মাণের কথা জানিয়েছে, যাতে বাজারে দ্রুত পণ্য পৌঁছানো যায়। আমরা কিছু পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা বাদ দিচ্ছি, প্যাকেজিং, লেবেলিং এবং সার্টিফিকেশনের প্রয়োজনীয়তাগুলোকে আরও যৌক্তিক করছি এবং কাস্টমস প্রক্রিয়া এবং মান সহজ করার মতো বাণিজ্য সহায়ক পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আপনার বাণিজ্য পরিকল্পনাকে পূর্ণ সমর্থন দিতে সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ।
এর আগে গতকাল রোববার (৬ এপ্রিল) বিকেলে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের যুক্তরাষ্ট্র যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে সেটা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দফতরেও সরকারের পক্ষ থেকে পৃথক চিঠি পাঠানো হবে।
প্রেস সচিব জানিয়েছিলেন আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দুটি চিঠি প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে পাঠানো হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্টকে চিঠি পাঠানো হলো। মার্কিন বাণিজ্য দফতরে আরেকটি চিঠি পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানা গেছে।
গত বুধবার (৩ এপ্রিল) স্থানীয় সময় বিকেলে হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে এক সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্কের হার বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ ধার্য করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এদিন ন্যূনতম ১০ শতাংশ হারে নতুন ট্যারিফ পরিকল্পনা ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আগে দেশটিতে বাংলাদেশের পণ্যে শুল্কের হার ছিল গড়ে ১৫ শতাংশ।

অতিরিক্ত শুল্কের কারণে দেশের রফতানি বাজার বিশেষ করে পোশাক খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করছেন অর্থনীতিবিদরা। বিষয়টি নিয়ে নানা মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস শনিবার এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছেন।
সেখানে বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর অন্তত ৩০টির বেশি মার্কিন পণ্যের আমদানি শুল্ক পর্যালোচনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অন্তত ১০টি এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) প্রায় ২০টি পণ্যের শুল্ক-কর পুনর্বিবেচনার জন্য সুপারিশ করেছে।
এদিকে শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগে ভালো কিছু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এর ফলে অর্থনীতিতে যে প্রভাব পড়বে তা সামাল দেওয়া কঠিন হবে না বলেও জানান তিনি।
রোববার (৬ এপ্রিল) সচিবালয়ে নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক আরোপের ফলে অর্থনীতিতে যে প্রভাব পড়বে তা সামাল দেওয়া কঠিন হবে না। এটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের সঙ্গে নেগোসিয়েশনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ভালো কিছু হবে বলে আশাবাদী। -ডেস্ক রিপোর্ট