শুক্রবার , ১১ এপ্রিল ২০২৫ | ২৯শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. আইন আদালত
  3. আর্ন্তজাতিক
  4. এক্সক্লুসিভ
  5. কৃষি ও কৃষাণ
  6. ক্যাম্পাস
  7. ক্রিকেট
  8. গল্প-সাহিত্য
  9. চাকুরি
  10. জাতীয়
  11. জেলার খবর
  12. টালিউড
  13. টেনিস
  14. তথ্য-প্রযুক্তি
  15. ধর্ম ও ইসলাম

সরকারি ফার্মেসি: সম্ভাবনার পাশাপাশি আছে নানা চ্যালেঞ্জও

প্রতিবেদক
admin
এপ্রিল ১১, ২০২৫ ৮:১৯ অপরাহ্ণ

(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) সারাদেশে প্রথমবারের মতো সরকারি ফার্মেসি চালুর চিন্তা করছে সরকার। সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, সরকারি হাসপাতালগুলোতে ল্যাব সার্ভিস আছে, অন্য প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিস আছে, কিন্তু কোথাও কোনো ফার্মাসিউটিক্যাল সার্ভিস নেই। নতুন উদ্যোগ হিসেবে দেশের সব সরকারি হাসপাতাল চত্বরে ফার্মেসি চালু করতে যাচ্ছে সরকার।

জানা গেছে, বহুল ব্যবহৃত ২৫০ ধরনের ওষুধ মিলবে এসব ফার্মেসিতে, যেখানে ওষুধ কেনা যাবে তিন ভাগের এক ভাগ দামে। তবে ফার্মেসি চালু করতে গেলে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগকে মোকাবেলা করতে হবে নানা চ্যালেঞ্জ। এসব ফার্মেসি কোন পদ্ধতিতে চালু হবে এবং আদৌ সফলতার মুখ দেখবে কি না, এটা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হলে সুফল ভোগ করবে দেশের জনগণ। স্বাস্থ্যখাতের হবে ব্যাপক পরিবর্তন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাস্থ্যখাত পরিবর্তনে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার সক্ষমতা কিংবা সাহসের সাথে কাজ করে যাওয়ার মনোবল আছে কি না, সেটি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। কেননা দেশের প্রতিটি খাতে লেগেছে পরিবর্তনের হাওয়া। তবে স্বাস্থ্যখাতে পরিবর্তনের মতো দৃশ্যমান কিছু এখনো দেখা যায়নি। যা নিয়ে নানা উদ্বেগ ও প্রশ্ন রয়েছে জনমনে।

দেশের স্বাস্থ্যখাত পরিবর্তনে সাহসের ঘাটতি ও দৃঢ় মনোবলের অভাবের কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আব্দুস সবুর বলেন, ‘ধারণা আছে, একটা ফার্মেসি চালাতে কী প্রয়োজন? কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান, হাসপাতালের ফার্মেসি চলে না বলে একটা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানকে জায়গা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ফার্মেসি চালানোর জন্য। রাঙামাটি হাসপাতালে যান, দেখবেন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান ফার্মেসি চালাচ্ছে। এরকম বহু সরকারি হাসপাতালে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান ফার্মেসি চালাচ্ছে, যেহেতু সরকার চালাতে পারে না। আর এখন ওহি নাজিল করে দিলো, সব চালাবে? কাজের কাজ নেই।’

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফার্মেসির বেহাল দশা

দেশের উচ্চতর চিকিৎসা শিক্ষা ও গবেষণার অন্যতম প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ)। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকে রয়েছে একটি ফার্মেসি। যে কেউ গেলে দেখতে পারবেন স্টিকারে লেখা রয়েছে, ‘সুলভমূল্যে সকল প্রকার ওষুধ ও সার্জিক্যাল সামগ্রী পাওয়া যায়। ২৪ ঘণ্টা খোলা। সঠিক তাপমাত্রায় ওষুধ সামগ্রী সংরক্ষণ করা হয়। সকল দেশীয় ঔষধে ৭ ভাগ ছাড় দেওয়া হয়।’

তবে সরেজমিনে গত ‍বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, ফার্মেসি বন্ধ রয়েছে। প্রায় ৪৫ মিনিট অপেক্ষা করেও এ প্রতিবেদক ফার্মেসিতে কারও দেখা পাননি। দুপুর আড়াইটার দিকে পেটে সমস্যা নিয়ে চিকিৎসাধীন স্বজনের ওষুধ কিনতে এসেছেন হাইকোর্টে কর্মরত আলাউদ্দিন। তিনি ফার্মেসি বন্ধ পেয়ে ক্ষোভ ঝাড়েন। বলেন, ‘যখনই আসি, তখনই বন্ধ পাই।’ তিনি ছাড়াও এই সময়ের অন্তত সাতজন রোগীর স্বজন এসেছেন ওষুধ কিনতে, তারা ওষুধ না কিনে ফিরে গেছেন। পরে জানা গেছে, ফার্মেসি দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ রয়েছে।

দেশের মানুষের ভালো চিকিৎসাসেবা নেওয়ার আশা-ভরসার আশ্রয়স্থল বিএমইউ ফার্মেসির এমন বেহাল দশার বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা ও গবেষণা) অধ্যাপক ডা. মুজিবুর রহমান হাওলাদারের কাছে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি বলতে পারবো না।’

স্বাস্থ্যখাতের এসব অনিয়মের রেশ ধরে অধ্যাপক ডা. আব্দুস সবুর বলেন, ‘কয়েক দিন পরপর ‘ওহি’ নাজিল না করে আমরা কাজ চাই। সরকার পরিবর্তন হয়েছে প্রায় আট মাস। স্বাস্থ্যখাতে কী পরিবর্তন হয়েছে? কোনো পরিবর্তন হয়েছে? একটা পরিবর্তনও হয়নি। কাজের মাধ্যমে প্রমাণ দেখতে চাই।’

বাস্তবায়ন হলে মিলবে সুফল

সরকারি ফার্মেসি চালু করা গেলে দেশের স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক পরিবর্তন হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। জানতে চাইলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, ‘সরকারের এই ফার্মেসি চালু করার একটাই উদ্দেশ্য, যাতে সহজলভ্য ও সঠিক দামে জনগণ ওষুধ কিনতে পারেন। যে ওষুধগুলো দেখা যায়, অনেক দাম দিয়ে মানুষকে কিনতে হয়। বিভিন্ন দোকানে নানা দাম রাখে, অনেক সময় বেশিও রাখে। সরকারি ফার্মেসি চালু হলে ন্যায্য দামে মানুষ ওষুধ কিনতে পারবেন। আর সব দোকানে সব ওষুধ পাওয়া যায় না। সরকারি ফার্মেসিতে কী কী ওষুধ পাওয়া যায়, সেটা জনগণ জানবে।’

Medicin2
চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ফার্মেসি চালু করলে মিলবে সুফল। ছবি: সংগৃহীত

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘চিকিৎসকদের জন্য বার্তা হলো, যে ওষুধগুলো সরকারি ফার্মেসিতে পাওয়া যায়, সেটা প্রেসক্রিপশনে লিখবেন। আর যে ওষুধটা সরকারি ফার্মেসিতে পাওয়া যাবে না, সেটা বাইরের ওষুধ লিখবেন। এখন সমস্যা যেটা সেটা হলো ওষুধ কোম্পানিগুলো চিকিৎসকদের নানাভাবে উৎসাহ দিয়ে নিজেদের ওষুধ লেখায়। এটা আবার ওষুধ কোম্পানি মনিটরও করে।’

তবে দেশের স্বাস্থ্যখাতে বিভিন্ন পদে লোকবলের রয়েছে ব্যাপক ঘাটতি। তেমনি ফার্মাসিস্ট পদেও রয়েছে লোকবলের ঘাটতি। দীর্ঘ সময় ধরে হয় না নিয়োগ। লোকবলের ঘাটতি ও দক্ষ জনবল না থাকাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে দক্ষ ফার্মাসিস্ট নিয়োগ ও প্রয়োজনীয় জনবল যুক্ত করা গেলে উপকার লাভ করবেন দেশের সাধারণ মানুষ।

রয়েছে ভিন্নমতও

জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে ওষুধ বিক্রির উদ্যোগ কোনো ভালো উদ্দেশ্য নয়। আমরা মানুষকে যেভাবে সেবা দিতে চাই এবং তার অধিকার যেভাবে ফিরিয়ে দিতে চাই, সেখান থেকে সরে আসার কৌশল হতে পারে। কীভাবে, ওষুধ যদি তিন ভাগের এক ভাগ দামে দিতে হয়, তাহলে সেটা সরকারি হাসপাতালে কেন? সেটা আলাদা ওষুধের দোকানে হোক। অথবা ওষুধের দাম কমানোর ব্যবস্থা করা হোক।’

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘যখন সরকারি হাসপাতালে সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ করা হলো তখন আমরা বলেছিলাম, এটা নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্তরা বহন করতে পারবে না। একজন রোগীর যখন সিটি স্ক্যানসহ অন্যান্য পরীক্ষা প্রয়োজন হয়, তখন এটা আর নিম্নবিত্তরা বহন করতে পারে না। আর রোগ নির্ধারণ না করা পর্যন্ত রোগীর অস্ত্রোপচার হবে না, চিকিৎসা হবে না। কেন এই বোঝা সরকারি হাসপাতালে আরোপ করা হবে। হাসপাতাল থেকে কেন সরকারের টাকা উপার্জন করতে হবে? জনগণ তো ট্যাক্স দেয়। আমরা ট্যাক্স দিলে সরকারের কাছ থেকেও তো কিছু পাওয়ার অধিকার আছে। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে সব সেবা দিতে হবে।’

অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে ফার্মেসি করা কোনো ভালো উদ্যোগ নয়, গরিব মানুষকে আরও দূরে সরিয়ে দেওয়া হবে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা থেকে। সরকারি হাসপাতালে যত পরীক্ষা-নিরীক্ষা লেখা হবে, সব হাসপাতালে করতে হবে। সরকারি হাসপাতালে যত ওষুধপত্র লেখা হবে, সব বিনামূল্যে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। জানা গেছে, তিনি বিদেশ সফরে রয়েছেন। -নিউজ ডেস্ক

সর্বশেষ - অন্যান্য

সর্বোচ্চ পঠিত - অন্যান্য