(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) দুই পারমানবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে হামলা- পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটছে। মঙ্গলবার মধ্যরাত ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনায় পাকিস্তান উপযুক্ত জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। পাকিস্তান এরইমধ্যে ভারতের ৫টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে। এর আগে কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনায় দেশ দুটি কূটনীতিক বহিষ্কার, বিমান চলাচলের জন্য আকাশপথ বন্ধ করাসহ পাল্টাপাল্টি বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের ঘোষণা দেয়।
ভারত-পাকিস্তান তিনবার যুদ্ধে জড়িয়েছে, যার সবশেষটি ছিল ১৯৭১ সালে। এ ছাড়া সীমিত পরিসরে একটি যুদ্ধ হয় ১৯৯৯ সালে কারগিলে। তখনই অবশ্য প্রথমবারের মতো পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা প্রকাশ্যে আসে।
আরও পড়ুন:
দেখে আসা যাক ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক শক্তির তুলনামূলক চিত্র। বিশ্বে সামরিক শক্তি এবং অস্ত্রশস্ত্র সম্পর্কে ধারণা দেয় গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার।
তাদের ওয়েবসাইটে বলা হচ্ছে, ২০২৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের পরই সামরিক শক্তিতে ভারতের অবস্থান। তুলনামূলকভাবে, পাকিস্তানের অবস্থান কিছুটা পেছনে। ১৪৫টি দেশের মধ্যে ১২তম অবস্থানে তারা।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ভারত প্রতিরক্ষা খাতে প্রায় ৮৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে চায়, আর পাকিস্তান ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য বরাদ্দ রেখেছে ১০ বিলিয়ন ডলার।
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের মতে, ভারতের সক্রিয় সৈন্যসংখ্যা সাড়ে ১৪ লাখের বেশি, পাকিস্তানের সাড়ে ছয় লাখের কিছু বেশি। রিজার্ভ ও প্যারামিলিটারি বাহিনীর সংখ্যাতেও ভারত এগিয়ে।
আরও পড়ুন:
স্থলভাগের শক্তি বিবেচনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে ভারত। তবে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র সেলফ প্রোপেলড আর্টিলারি ও মোবাইল রকেট প্রোজেক্টর বা রকেট লঞ্চারের সংখ্যায় এগিয়ে আছে পাকিস্তান।
পাকিস্তানের সেলফ প্রোপেলড আর্টিলারি সংখ্যা ৬৬২, ভারতের ১০০। পাকিস্তানের মোবাইল রকেট প্রোজেক্টর ৬০০, ভারতের ২৬৪।
অন্য বেশ কিছু দিকে সংখ্যায় এগিয়ে ভারত। ভারতের ট্যাংক সংখ্যা চার হাজার ২০১টি, সাঁজোয়া যান এক লাখ ৪৮ হাজার ৫৯৪ টি, টোওড আর্টিলারি বা টেনে নেওয়ার কামান তিন হাজার ৯৭৫টি। পাকিস্তানের ট্যাংক আছে দুই হাজার ৬২৭টি, সাঁজোয়া যান ১৭ হাজার ৫১৬টি, টোওড আর্টিলারি দুই হাজার ৬২৯টি।
আরও পড়ুন:
গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের হিসাবে ভারতীয় নৌবাহিনীর মোট ২৯৩টি যুদ্ধজাহাজের মধ্যে রয়েছে দুটি বিমানবাহী রণতরী, ১৩টি ডেস্ট্রয়ার, ১৪টি ফ্রিগেট, ১৮টি সাবমেরিন, ১৮টি করভেট ও ১৩৫টি টহল জাহাজ।
পাকিস্তানি নৌবাহিনীর মোট ১২১টি যুদ্ধজাহাজের মধ্যে কোনো বিমানবাহী রণতরী ও ডেস্ট্রয়ার নেই। তাদের রয়েছে নয়টি ফ্রিগেট, আটটি সাবমেরিন, নয়টি করভেট এবং ৬৯টি টহল জাহাজ।
ভারতের বিমানবাহিনী স্কোয়াড্রনের দিক থেকে পাকিস্তানের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে। ভারতের রয়েছে ৩১টি স্কোয়াড্রন, যেখানে প্রতিটিতে ১৭ থেকে ১৮টি যুদ্ধবিমান থাকে। পাকিস্তানের স্কোয়াড্রন সংখ্যা ১১টি।
আরও পড়ুন:
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের মোট বিমান রয়েছে ২,২২৯টি, আর পাকিস্তানের আছে ১,৩৯৯টি।
যুদ্ধবিমান সংখ্যাতেও ভারত এগিয়ে। ভারতের কাছে আছে ৬৪৩টি যুদ্ধবিমান, যার মধ্যে ১৩০টি বোমারু। পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান ৪১৮টি, এর মধ্যে ৯০টি বোমারু।
পাকিস্তান এফ-১৬ ও চীন-পাকিস্তান যৌথভাবে তৈরি জেএফ-১৭ থান্ডার বিমান ব্যবহার করে।
অন্যদিকে ভারতের বড় শক্তি ফ্রান্স থেকে আনা রাফাল ও ৫১টি মিরাজ ২০০০ মডেলের যুদ্ধবিমান, যা পারমাণবিক অস্ত্র বহন ও দূরপাল্লার আক্রমণে সক্ষম। ভারত এরইমধ্যে তাদের বহরে ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান যুক্ত করেছে।
আরও পড়ুন:
যুদ্ধবিমানের বাইরে ভারত আছে আরও এগিয়ে। ভারতের আছে ২৭০টি পরিবহন বিমান, ৩৫১টি প্রশিক্ষণ বিমান, ৬টি রিফুয়েলিং ট্যাঙ্কার ও ৯৭৯টি হেলিকপ্টার, যার মধ্যে ৮০টি আক্রমণাত্মক।
পাকিস্তানের রয়েছে ৬৪টি পরিবহন বিমান, ৫৬৫টি প্রশিক্ষণ বিমান, ৪টি রিফুয়েলিং ট্যাঙ্কার ও ৪৩০টি হেলিকপ্টার, যার মধ্যে ৫৭টি আক্রমণাত্মক। সক্রিয় সামরিক বিমানঘাঁটির সংখ্যাতেও ভারত এগিয়ে—৩১১টি, আর পাকিস্তানের আছে ১১৬টি।
সুইডিশ থিঙ্ক ট্যাঙ্ক স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ২০২৪ সালের প্রতিবেদন বলছে, ভারতের কাছে আনুমানিক ১৭২টি এবং পাকিস্তানের কাছে ১৭০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে। তবে এদের মধ্যে কতগুলো কার্যক্ষম অবস্থায় রয়েছে, তা নিশ্চিতভাবে জানা যায় না।
আরও পড়ুন:
পাকিস্তান মূলত ভারতের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে যাচ্ছে, অন্যদিকে ভারত বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে দূরপাল্লার অস্ত্র উন্নয়নে, যা চীনকেও লক্ষ্যবস্তু করতে সক্ষম।
পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে ক্ৰুজ, ট্যাকটিক্যাল ও স্বল্প-মধ্যম পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। ট্যাকটিক্যাল ক্ষেপণাস্ত্র যেমন হাতাফ-১ ও নাসের ৬০-১০০ কিলোমিটার দূরত্বের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।
স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে আবদালি (২০০ কিলোমিটার), গজনবি (৩০০ কিলোমিটার), রা’দ (৩৫০ কিলোমিটার), বাবর (৭০০ কিলোমিটার) ও শাহীন-১ (৭৫০ থেকে এক হাজার কিলোমিটার)।
আরও পড়ুন:
মধ্যমপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে গৌরি-১ (এক হাজার ৫০০ কিলোমিটার), গৌরি-২ (দুই হাজার কিলোমিটার), আবাবিল (দুই হাজার ২০০ কিলোমিটার), শাহীন-২ ও শাহীন-৩ (দুই হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৭৫০ কিলোমিটার) উল্লেখযোগ্য। আবাবিল ও শাহীন-৩ একসঙ্গে কয়েকটি ওয়ারহেড বহনে এবং শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম।
অন্যদিকে ভারতের রয়েছে পৃথ্বী সিরিজ (২৫০ থেকে ৬০০ কিলোমিটার), অগ্নি সিরিজ (এক হাজার ২০০ থেকে আট হাজার কিলোমিটার), নির্ভয়া ও ব্রহ্মোস ক্ৰুজ ক্ষেপণাস্ত্র। অগ্নি-৫ একটি আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র যা সাত থেকে আট হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিতে সক্ষম।
ভারতের ধনুষ হলো নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। ভারতের সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য কে-১৫ বা বি-০৫ (সাগরিকা/শৌর্য) ক্ষেপণাস্ত্রের রেঞ্জ প্রায় ৭০০ কিলোমিটার।
ভারতের সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্রহ্মোস পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে সক্ষম। ২০২২ সালে একটি ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র ভুলবশত পাকিস্তানে গিয়ে পড়েছিল।
আরও পড়ুন:
২০২৪ সালে ভারত সফলভাবে একটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায়, যার পাল্লা দেড় হাজার কিলোমিটারের বেশি এবং এটি আকাশ, স্থল ও জলপথ, সব জায়গা থেকে আঘাত হানতে সক্ষম।
হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র সাধারণত শব্দের গতির পাঁচ গুণ দ্রুত চলে। আর সুপারসনিক গতি সাধারণত শব্দের গতির চেয়ে দ্বিগুণ বা তিনগুণ হয়।
ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই তাদের অস্ত্রাগারে সামরিক ড্রোনের সংখ্যা বাড়ানোর দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। বিদেশ থেকে উন্নত ড্রোন কেনার পাশাপাশি নিজেরাও ড্রোন তৈরি করছে। এসব ড্রোন পাইলট ছাড়া শত্রুর ওপর নজরদারি, গুপ্তচরবৃত্তি ও নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসে ব্যবহৃত হয়।
এই ড্রোনগুলো দীর্ঘ সময় আকাশে উড়তে পারে এবং শত্রুর রাডারে ধরা না পড়ে সামরিক বাহিনীর কর্মকাণ্ড ও ঘাঁটি পর্যবেক্ষণ করতে পারে।
আরও পড়ুন:
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক রাহুল বেদী বিবিসিকে জানান আগামী দুই থেকে চার বছরের মধ্যে ভারতের কাছে প্রায় পাঁচ হাজার ড্রোন থাকবে।
তার মতে, পাকিস্তানের ড্রোন সংখ্যা ভারতের চেয়ে কম হলেও সেগুলোর মধ্যে বৈচিত্র্য রয়েছে, যার সক্ষমতার জায়গা ভিন্ন ভিন্ন এবং ১০ থেকে ১১ ধরনের ভিন্ন ব্র্যান্ড বা মডেল রয়েছে তাদের।
২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের চুক্তিতে ৩১টি প্রিডেটর ড্রোন কেনে, যেটিকে বিশ্বের সবচেয়ে সফল ও ভয়ংকর ড্রোন বলা হয়। পাকিস্তানের নিজস্ব তৈরি ড্রোনের মধ্যে আছে- শাহপার (১, ২, ৩), বুরাক ও উকাব । শাহপার-৩ মাঝারি উচ্চতায় ৩০ ঘণ্টা উড়তে পারে এবং অস্ত্র বহনে সক্ষম।
রাহুল বেদীর মতে, পাকিস্তান তুরস্ক এবং চীন থেকে ড্রোন আমদানি করে। তবে, দেশটি জার্মানি এবং ইতালি থেকেও ড্রোন কিনেছে। -আন্তর্জাতিক ডেস্ক