(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রমে সরকার নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) দলটির নিবন্ধন স্থগিত করেছে। দল হিসেবে নিষিদ্ধ না হওয়া সত্ত্বেও প্রথমবারের মতো কোনো রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন স্থগিত করল ইসি। যা নির্বাচন কমিশনের ইতিহাসে এর আগে আর কখনো ঘটেনি। এর মধ্য দিয়ে ভোট থেকেও ছিটকে পড়ল দেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া প্রাচীন দল আওয়ামী লীগ।
ইসি কর্মকর্তারা বলেন, আওয়ামী লীগই প্রথম দল যার নিবন্ধন বাতিল না করে স্থগিত করা হয়েছে। শর্ত পূরণ, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে আমরা নিবন্ধন বাতিল করে থাকি। এছাড়া সরকার কোনো দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে সেই দলের নিবন্ধন বাতিলের বাধ্যবাধকতা থাকে। নিবন্ধন স্থগিতের ঘটনা আগে ঘটেনি। একমাত্র আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম সরকার নিষিদ্ধ করায় কমিশনও প্রথমবারের মতো দলের নিবন্ধন স্থগিতের মতো সিদ্ধান্ত নিলো। গত সোমবার (১২ মে) সকালে আওয়ামী লীগের নিবন্ধনের বিষয়ে নিয়ে অনানুষ্ঠানিক কমিশন সভা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘উই আর ওয়েটিং ফর দি গেজেট নোটিফিকেশন টু কাম। আকাশে সূর্য উঠলে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংক্রান্ত গেজেট হাতে পেলেই নিবন্ধন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এরপর বিকেল ৫টার দিকে সরকার আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণার প্রজ্ঞাপন জারি করে। তারপর বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বৈঠক করে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। সিইসির সঙ্গে ওই বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম, রহমানেল মাসউদ ও ইসি সচিব আখতার আহমেদ অংশ নেন।
বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, আপনারা জানেন যে, আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তার অঙ্গ সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। তার ধারাবাহিকতায় ইলেকশন কমিশন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কোন গ্রাউন্ডে এই নিবন্ধন স্থগিত করা হলো জানতে চাইলে ইসি সচিব আকতার আহমেদ বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যে প্রজ্ঞাপন তার ধারাবাহিকতায় আমরা এটা করেছি।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন দলীয় প্রতীককে অংশগ্রণে নির্বাচনমুখী দলগুলোর মাঝে নিবন্ধন প্রথা চালু করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওই বছর ৩ নভেম্বর ছয় নম্বর দল হিসেবে নিবন্ধন পায় দেশের প্রাচীনতম দল আওয়ামী লীগ।
এ পর্যন্ত ৫৫টি দল ইসির নিবন্ধন পেলেও পরবর্তী সময়ে শর্ত পূরণ, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল করে ইসি। দলগুলো হলো- জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা। তবে এসব দলের নিবন্ধন বাতিল করলেও স্থগিত করার মতো ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু এবার আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রমের ওপর সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার পর দলটির নিবন্ধন বাতিল না করে স্থগিত করছে সংস্থাটি। ফলে ইসির নিবন্ধিত দলের মধ্যে নিজস্ব প্রতীকে অংশ নেওয়ার দল রইল ৪৯টি।
তবে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন নতুন করে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের সুযোগ দিয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের দল এনসিপিসহ বেশ কিছু দল নিবন্ধন পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। আগামী নির্বাচনের আগে আরও কিছু দল নিবন্ধন পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া জামায়াতে ইসলামীও নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে এবং দলটি আশা করছে নির্বাচনের আগে নিবন্ধন ফিরে পাবে এবং দলীয় প্রতীকে তারা নির্বাচন করতে পারবে। -নিউজ ডেস্ক