বৃহস্পতিবার , ১৫ মে ২০২৫ | ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. আইন আদালত
  3. আর্ন্তজাতিক
  4. এক্সক্লুসিভ
  5. কৃষি ও কৃষাণ
  6. ক্যাম্পাস
  7. ক্রিকেট
  8. গল্প-সাহিত্য
  9. চাকুরি
  10. জাতীয়
  11. জেলার খবর
  12. টালিউড
  13. টেনিস
  14. তথ্য-প্রযুক্তি
  15. ধর্ম ও ইসলাম

কতদিন চলবে জবির আন্দোলন, কোন দিকে মোড় নেবে গতিপ্রকৃতি

প্রতিবেদক
admin
মে ১৫, ২০২৫ ৭:১২ অপরাহ্ণ

(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের আজ দ্বিতীয় দিন পার হলো। গতকালের উত্তাল পরিস্থিতির পর আজও দিনভর নানা ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা নতুন উদ্যমে তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিবাদ সমাবেশ এবং অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে তারা দাবি আদায়ে অনড় রয়েছেন। পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল আকার ধারণ করছে এবং এই অচলাবস্থা কতদিন চলতে থাকে, সেদিকে সবার দৃষ্টি। আর আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

তিন দফা দাবি আদায়ে বুধবার (১৪ মে) প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে লং মার্চ কর্মসূচি শুরু করেছিলেন জগন্নাথের শিক্ষার্থীরা। দুপুরে লং মার্চটি কাকরাইলে পৌঁছালে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে। তখন থেকেই কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নিয়ে আছেন শিক্ষার্থীরা। আজ দ্বিতীয় দিনেও অবস্থানে অটল আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

রাত থেকেই সড়কে জগন্নাথের শিক্ষার্থীরা, বন্ধ যান চলাচল

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকালে কাকরাইল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাত থেকেই আন্দোলনকারীদের কেউ সড়কে শুয়ে আছেন, কেউ বসে আছেন। ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘দালালী না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই’, ‘চুপ কেন যমুনা, খালি হাতে ফিরবো না’ এমন নানা স্লোগানও দিচ্ছেন তারা।

কাকরাইলে এখনও বন্ধ যান চলাচল, সড়কে জগন্নাথের শিক্ষার্থীরা

শিক্ষার্থীদের এই অবস্থানের কারণে সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে থাকেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বেন না।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাকরাইল মোড়ে বাড়ে জবি শিক্ষার্থীদের অবস্থান। সকাল থেকেই বাসে করে আসেন শিক্ষার্থীরা। এতে করে আরও জোরদার হয় আন্দোলন।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই নির্দিষ্ট সময় পর পর একে একে কাকরাইল মোড়ে প্রবেশ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস। শিক্ষার্থীরা নেমেই যোগ দিচ্ছেন আন্দোলনে। সহপাঠীদের আগমনের জয়ধ্বনি দিচ্ছেন অন্য শিক্ষার্থীরাও।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন জবির সাবেক শিক্ষার্থীরা

শিক্ষার্থী জাকারিয়া ইসলাম বলেন, সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য ক্যাম্পাসের বাসে করে এসেছেন, আরো আসবেন। এছাড়া ঢাকার অন্যান্য জায়গা থেকেও শিক্ষার্থীরা এসে জড়ো হচ্ছেন।

ছাতা মাথায় আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা

দিনভর অবস্থান কর্মসূচিতে অনড় ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ফলে বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে ছাতা মাথায় দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যান তারা। থেমে থেমে বৃষ্টি হলেও তাতে কোনও ভ্রুক্ষেপ ছিল না আন্দোলনকারীদের। এককথায় বৃষ্টিভেজা আন্দোলনের চিত্র দেখা গেছে।

কেউ কেউ ছাতা মাথায় দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, কাউকে আবার বৃষ্টিতে ভিজেই আন্দোলন চালিয়ে যেতে দেখা গেছে। সবাই দাবি আদায়ের পক্ষে স্লোগান দেন।

জবিতে আন-অফিসিয়াল শাটডাউন

বৃহস্পতিবার বিকেলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাটডাউন ঘোষণা করেছেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইস উদ্দিন। শিক্ষার্থীদের দাবি আদায় হওয়ার আগ পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে বলেও জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার বিকেলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা শেষে তিনি বলেন, আমরা এখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার নিয়ে এসেছি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি আদায়ের জন্য এসেছি। আমাদের ওপর পুলিশ নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে। এটি সম্পূর্ণ অরাজকতা এবং অন্যায়। আমরা কারও বিরুদ্ধে এখানে কথা বলতে আসিনি, কোনো ষড়যন্ত্র করতে আসিনি। আমাদের অধিকার চাইতে এসেছি। দাবি আদায় না করে আমরা ঘরে ফিরব না। দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটডাউন চলবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম চলবে না। দাবি আদায় করে আমরা ঘরে ফিরব।

তিনি বলেন, আমাদের এখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য যদি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তবে তা ভালো হবে না। আমার চোখের সামনে আমার কোনো শিক্ষার্থীকে কেউ আঘাত করতে পারবে না।

বিশ্ববিদ্যালয় শাটডাউনের বিষয়ে যা বলছেন অন্য শিক্ষকরা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আন-অফিশিয়ালভাবে বর্তমানে শাটডাউন রয়েছে। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়টির সব শিক্ষার্থী তিন দফা দাবি আদায়ে রাস্তায় আন্দোলন করছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বিকেলে কাকরাইল মোড়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোস্তফা হাসান বলেন, আমাদের সব শিক্ষক-শিক্ষার্থী তিন দফা দাবি আদায়ে কাকরাইলে এসে আন্দোলন করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন শুধু অফিস খোলা রয়েছে। কোনো ক্লাস হচ্ছে না, কোনো পরীক্ষা হচ্ছে না। এতেই বোঝা যায় বিশ্ববিদ্যালয় তার স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে না। আমরা অফিসিয়ালি শাটডাউন ঘোষণা করতে পারি না, তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে বলা যায় আন-অফিসিয়ালি বিশ্ববিদ্যালয় শাটডাউন রয়েছে। কেননা সব শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা রাস্তায়, এ অবস্থায় ক্লাস-পরীক্ষা কে নেবে?

আন্দোলনের ২৪ ঘণ্টা, দাবি বাস্তবায়নের অপেক্ষায় জবি শিক্ষার্থীরা

তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় আমাদের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। সরকার চাইলেই শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিতে পারে। সামনে বাজেট ঘোষণা করবে সরকার, সেখানে আমাদের এই দাবিগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

শাটডাউনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর  অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, অফিসিয়ালি বিশ্ববিদ্যালয় শাটডাউন ঘোষণা করা হয়নি এবং এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে বিশ্ববিদ্যালযয়ে কোনো ধরনের ক্লাস হচ্ছে না বা পরীক্ষা হচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা শাটডাউনের ঘোষণা দিয়ে থাকতে পারেন।

এটি একটি আন-অফিসিয়াল শাটডাউন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোস্তফা হাসান।

বৃষ্টি ও দাবি আদায়ের আন্দোলন চলে একসঙ্গে

রাজধানীতে সকাল থেকে থেমে থেমে নামছে বৃষ্টি, কিন্তু তাতে দমে যাননি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তিন দফা দাবিতে তারা কাকরাইল মোড়ে গতকাল (বুধবার) থেকে আন্দোলন করে আসছেন। গতকাল বুধবারও তারা বৃষ্টিতে ভিজে আন্দোলন চালিয়ে যান। পরে রাতেও সেখানে অবস্থান করেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুরের দিকে শুরু হয় বৃষ্টি, কিন্তু ছাতা মাথায় নিয়েই চলতে থাকে শিক্ষার্থীদের অবস্থান। অনেকে আবার ছাতা ছাড়া বৃষ্টিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, দিচ্ছেন দাবি আদায়ের পক্ষে নানা স্লোগান। এমনকি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় শাটডাউন ঘোষণা করেছেন আন্দোলনকারীরা।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়টির গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী দিদারুল হাসান বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে আবাসিক হল তৈরি ও আবাসন সংকট সমাধানের দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু বারবার আশ্বাস দিয়ে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। এবার দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।

জবিতে আন-অফিসিয়াল শাটডাউন, দাবিতে অনড় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

দাবি মেনে নিলে দুই মিনিটে ক্যাম্পাসে ফিরব

বিকেল সাড়ে ৫টায় এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইস উদ্দিন বলেছেন, সরকারকে বলব আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিন। দাবি মেনে নিলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে দুই মিনিটে কাকরাইল ছেড়ে ক্যাম্পাসে চলে যাব।

কাকরাইল মোড়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সরকারকে বলব আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিন। দাবি মেনে নিলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে দুই মিনিটে রাস্তা ছেড়ে ক্যাম্পাসে চলে যাব। যদি দাবি না মানা হয় তাহলে রাস্তা থেকে আমাদের কেউ সরিয়ে দিতে পারবে না। আমি আরও বলছি— আমাদের সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থী রাস্তায়, তাই ক্যাম্পাস আর খোলার দরকার নেই। ওই ক্যাম্পাস বন্ধ থাকুক, শাটডাউন থাকুক।

অধ্যাপক রইস উদ্দিন বলেন, খালেদা জিয়া ২০০৫ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আর এ কারণেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে দুর্ভাগ্য যুক্ত হয়েছে। জগন্নাথের ১৮ হাজার শিক্ষার্থী মানবেতর জীবনযাপন করছে। এই ২০ বছরে একটি হল নির্মাণ করা হয়নি। এমন বৈষম্য পৃথিবীতে নেই। তাই হলের দাবিতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্রিয়াশীল সংগঠন একত্রিত হয়ে আন্দোলনে নেমেছে। পাশাপাশি আমাদের ৩০৬ কোটি টাকার বাজেট কর্তন না করার দাবি জানিয়েছি। আমাদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস দ্রুত নির্মাণে সরকারের অগ্রগতি প্রকল্পের তালিকায় রাখার দাবি নিয়ে এখানে এসেছি। কিন্তু এই দাবি নিয়ে কাকরাইল মোড়ে আসার আগেই পুলিশ আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বৈষম্য বিরোধী এই বাংলাদেশে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা পুলিশের হাতে লাঞ্চিত হতে পারে না। তাই আমরা গতকাল হামলায় জড়িত পুলিশের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

গতকাল তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের উপস্থিতি ও পরবর্তী সময়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার বিষয় উল্লেখ করে এই শিক্ষক নেতা বলেন, তিনি জুলাই আন্দোলনে ছাত্রদের কাতারের একজন লোক। তার কাধে কাধ রেখে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলন করেছিল৷ তাই আমরা তার কাছে আশা করেছিলাম যেসব শিক্ষকরা লাঞ্চিত হয়েছেন, সেই বিষয় দুঃখ প্রকাশ করবেন। উনি (মাহফুজ) বলেছেন, ১০ মিনিটের মধ্যে রাস্তা খালি করে দিতে। পুলিশ প্রটেকশনে থেকে ফ্যাসিবাদী আচরণ করলে কেমনে হবে? জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০০ শিক্ষকের প্রটেকশন ১৮ হাজার শিক্ষার্থী। সুতরাং সাবধান ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী আচরণ যেন দ্বিতীয়বার উচ্চারিত না হয়। কোনো শক্তি আমাদের এখান থেকে সরাতে পারবে না।

আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন জবির সাবেক শিক্ষার্থীরা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টানা দ্বিতীয় দিনের মতো চলমান আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) কাকরাইল মোড়ে সড়ক অবরোধ করে তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখা যায়। জগন্নাথ কলেজকালীন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরবর্তী সাবেক শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে উপস্থিত হন। তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী এবং সাবেক ছাত্রনেতারাও অংশ নেন।

আন্দোলনে অংশ নিয়ে তারা বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য ও অবহেলার শিকার হয়ে আসছে। হল সমস্যা, ক্যাম্পাস সংকটসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বারবার আন্দোলন করেও ফলাফল পাওয়া যায়নি। জাতীয় আন্দোলনেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সবসময় সামনের সারিতে থেকেছে। তবে দিনশেষে তারাই সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত। দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক। এই দাবি অনতিবিলম্বে মেনে নেওয়া হোক।

একাত্মতা প্রকাশ ইনকিলাব মঞ্চের

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে ইনকিলাব মঞ্চ।

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বিকেলে কাকরাইল মোড়ে আন্দোলনে গিয়ে মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ উসমান হাদী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরুব্বিয়ানা বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয় কেউ কারো অভিভাবক নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষকরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদে পদায়িত হতেন, তাদের মন মতো প্রার্থীকে শিক্ষক বানানোর জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইচ্ছে করে সিজিপিএ কম দেওয়া হতো। এমনও হয়েছে, যারা পরীক্ষায় ভালো করেছে, তাদেরকে থিসিসে ও মৌখিক পরীক্ষায় ইচ্ছে করে লো-গ্রেড দেওয়া হতো। যেন তারা শিক্ষক হওয়ার জন্য আবেদন করতে না পারে।

ঢাবির মুরুব্বিয়ানা বন্ধ করতে হবে : ইনকিলাব মঞ্চ

এ সময় তিনি জগন্নাথের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের ন্যায্য দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কিন্তু আপনারা নিজেদের মধ্যে কাউকে বিভেদ সৃষ্টি করতে দেবেন না। কাকরাইল মোড়ে চার মাস আগে আমরা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে অনশন করেছিলাম প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করার জন্য। আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সর্বশেষ উনার একান্ত সচিব এসেছিলেন আমাদের সঙ্গে দেখা করতে।

উপদেষ্টাকে বোতল ছুঁড়ে মারা সেই শিক্ষার্থী প্রকাশ্যে

উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের দিকে বোতল ছুঁড়ে মারা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সেই শিক্ষার্থী আজ (বৃহস্পতিবার) গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছেন।

জবির অর্থনীতি বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের সেই শিক্ষার্থী হুসাইন বলেছেন, আমি কোনো ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নই। আমার ব্যাপারে বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। গতকালের ঘটনাটি ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত। আমি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বোতল ছুঁড়ে মারিনি। বোতলটি আকাশের দিকে নিক্ষেপ করি। কাউকে আহত বা অপমান করার জন্য কাজটি করি নাই।

অবশেষে মুখ খুললেন উপদেষ্টাকে বোতল ছুঁড়ে মারা সেই শিক্ষার্থী

তিনি আরও বলেন, আমি নিজের খরচ চালানোর জন্য টিউশন, পার্ট টাইম জব করি। এছাড়াও পড়াশোনায় আমার অনেক সময় চলে যায়। আমার পক্ষে কোনো রাজনৈতিক দলে সময় দেওয়া সম্ভব নয়।

তিনি জানান, গতকালের ঘটনার পর আমাকে বিভিন্ন নম্বর থেকে কল দিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তারা ক্যাম্পাসের আশপাশেই থাকে বলে জানাচ্ছে। ক্যাম্পাসে গেলে মব দিয়ে আমাকে হেনস্তা করার হুমকি দিচ্ছে অনেকে।

এর আগে গতকাল বুধবার রাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে কাকরাইল মসজিদের সামনে যান অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। রাত ১০টার দিকে তিনি সেখানে পুলিশি ব্যারিকেডের সামনে দাঁড়িয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। হঠাৎ একটি পানির বোতল উপদেষ্টার মাথায় লাগে।

গুরুতর আহত দুই সাংবাদিক হাসপাতালে ভর্তি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার সময় দুই সাংবাদিক গুরুতর আহত হন। গতকাল বুধবারের এ ঘটনায় আহত দুই সাংবাদিক হলেন- জবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা পোস্টের প্রতিনিধি মাহতাব হোসেন লিমন, বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিনিধি সুবর্ণ আসসাইফ। গতকাল (বৃহস্পতিবার) সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন তারা।

জবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা পোস্টের প্রতিনিধি মাহতাব হোসেন লিমনের ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছে এবং তিনি ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এর আগে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।

আহত সাংবাদিকের একজনের ফুসফুসে সংক্রমণ, অন্যজনের কাঁধের হাড় ভেঙেছে

জানা যায়, গতকালের আন্দোলনে মিছিলের সামনে থেকে তিনি সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন। এ সময় তার খুব কাছে সাউন্ড গ্রেনেড ও বুকের ওপর টিয়ারশেল এসে পড়ে। এতে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয় এবং তিনি জ্ঞান হারান। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়।

এদিকে, পুলিশের লাঠিচার্জ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপদে রাখতে গিয়ে পুলিশের লাঠির আঘাতে আহত হন জবি প্রেসক্লাবের সভাপতি ও বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিনিধি সুবর্ণ আসসাইফ। তার কাঁধের হাড় ভেঙে গেছে বলে জানা যায়। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি আছেন।

জবির পাশে দাঁড়ালেন সারজিস-উমামা ফাতেমা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোকে যৌক্তিক আখ্যা দিয়ে ফেসবুকে দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। ‘যৌক্তিক’ দাবিগুলো মেনে নিতে এত গড়িমসি কেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন এনসিপির এই নেতা।

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সারজিস আলম বলেন, ‘তাদেরকে (জবির শিক্ষক-শিক্ষার্থী) আবার রাস্তায় নামতে হলো কেন? বছরের পর বছর ধরে পুরো দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাষ করা হয়েছে। অথচ ঢাকার বুকে দেশের প্রথম সারির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো আবাসিক হল নেই। মেয়েদের জন্য নামমাত্র একটি আবাসিক হল আছে। একাডেমিক স্পেসও চাহিদার তুলনায় নেই বললেই চলে। অথচ যেই সদরঘাট এলাকায় এই বিশ্ববিদ্যালয়টি অবস্থিত সেটি ঢাকার বসবাসের সবচেয়ে অনুপযোগী একটি জায়গা। সেখানে হাজার হাজার শিক্ষার্থী কীভাবে থাকবে কিংবা থাকে এগুলো নিয়ে কি কারো মাথাব্যথা নাই?’

জবির যৌক্তিক দাবি মেনে নিতে এত গড়িমসি কেন, প্রশ্ন সারজিসের

তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের অনেক জায়গা এবং ভবন এতদিন ধরে দখল করেছিল আওয়ামী লীগের দখলদাররা। কিন্তু এখনো কেন তারা তাদের জায়গা কিংবা ভবনগুলো ফিরে পাচ্ছে না? কেন তাদের স্থায়ী ক্যাম্পাসের কাজ সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দিয়ে দ্রুতগতির সঙ্গে করা হচ্ছে না? কেন একনেকে এখনো সেই বিল পাস হচ্ছে না?’

অপরদিকে প্রতি পূর্ণ সংহতি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমাও। বৃহস্পতিবার দুপুরে ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, একজন ছাত্র নেতৃত্ব ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একজন অংশীদার হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সংহতি জ্ঞাপন করলাম।

তিনি আরও লেখেন, জুলাই আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরি প্রাঙ্গণ থেকে আমরা প্রতিদিন মিছিল করতাম। এই মিছিলে প্রতিদিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সুবিশাল মিছিল আসত। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন ভাই জুলাই আন্দোলনে শহীদ হয়েছে। কিন্তু, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের এই অবদানকে সবসময় উপেক্ষা করা হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে ছাত্রদের দিনের পর দিন হলের জন্য আন্দোলন করতে হয়েছে। এই সরকারের আমলেও আমরা জগন্নাথের প্রাণের দাবিকে গুরুত্ব দিতে দেখছি না। একটি বিশ্ববিদ্যালয়, এরিয়াতে আবাসিক হল ছাত্রদের অধিকার। সেটার জন্য ২০ বছর ধরে আন্দোলন করতে হবে কেন? আশা করি, দ্রুত এই ৩ দফা দাবি মেনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংকট সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। -নিউজ ডেস্ক

সর্বশেষ - রাজনীতি