মো. কায়ছার আলী (দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) দিনাজপুরের মাটির মত মানুষও বিখ্যাত। এ উর্বর বৃহত্তর দিনাজপুরে জন্মেছেন অগণিত শ্রেষ্ঠ কৃতি সন্তান।যাঁদের কারো কারো অবদান-কৃতিত্ব-শ্রেষ্টত্ব আকাশচুম্বী।সাবেক ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপ্রধান,স্পীকার,মন্ত্রী, সেনাপ্রধান, প্রধান বিচারপতি,,দেশ বরেণ্য রাজনীতিবিদ, মহান স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠকারী, তেভাগা আন্দোলনের নেতা,ফুটবল যাদুকর,বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ,তুখোড় ছাত্রনেতা এবং চলচিত্র অভিনেতা প্রমুখ। সম্মানিত ব্যক্তিদের নাম ও জীবনী আমরা কম বেশী জানি বা বড়দের মুখে তাঁদের জীবনের গল্প আমরা শুনেছি। কিন্ত খুব কম লোকই জানি যে,আমাদের দিনাজপুরের হামজাপুর গ্রামের কৃতিত্ব্বের অধিকারী, গোলকুঠি বাহাদুরবাজার এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা সাবেক ডাকসুর ভিপি ( সহ সভাপতি), কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়ন এর প্রথম সহ সভাপতি, ছাত্রদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত এবং এদেশের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী এস, এ বারী এটির জীবন ও কর্ম। মাত্র কয়েকশ শব্দ ও কিছু বাক্যে এরকম একজন বড় মানুষের জীবনী লিখা যায় না।।১৯২১ সালে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম কেউ কেউ স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয় নি।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর আজ পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষকের অবদান সব সময়ই শ্রদ্ধার সাথে স্মরণীয়।স্বাধীন বাংলাদেশে কিছু সময় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির কারণে দুই / একটি ছাত্র সংগঠন তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত বা আনুগত্যের বাইরে আপন মহীমায় জেগে উঠতে পারে নি।কিন্ত পরাধীন দেশে ছাত্র রাজনীতির ভূমিকা ছিল গৌরব, সৌরভের ও সৌন্দর্যের। ছাত্ররা বরাবরই চেতনার বর্শাফলক।দম বন্ধকর পরিস্থিতি চিরকাল তাদের ভালো লাগে না।সত্য ও ন্যায়ের পথে সংগ্রাম করতে তারা কখনো পিছপা হয় না। যখনই তারা ঐক্যবদ্ধ হয়,শাসক শ্রেণী তখন পরাজিত হয়। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুলাই ও আগষ্ট মাসের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমাজের একতাবদ্ধ আন্দোলন ও সংগ্রামের ফল সারা বিশ্ববাসী জানে।ছাত্র রাজনীতির সোনালী অতীত এতটা উর্বর ছিল যে,ধর্মীয় বিভেদ তাদের চিন্তায় কোন প্রভাব ফেলতো না। অরবিন্দু ঘোষ ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত ৩ বার ডাকসুর ভিপি এবং গোলাম আযম ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ২ বার ডাকসুর জি,এস। ১৯৫৩-১৯৫৪ সালে ডাকসুর ভিপি ছিলেন আমাদের দিনাজপুরের মাটি ও মানুষের সেরা সন্তান এস,এ বারী এটি।ডাকসু মানে ঢাকা ইউনিভার্সিটি কেন্রীয় ছাত্র সংসদ। দেশের সর্বোচ্চ প্রাচীন বিদ্যপীঠ তথা জাতির বিবেকের মিনি পার্লামেন্ট। এই ডাকসু হল আপোষহীন ও বিদ্রোহী চেতনার প্রতীক।ডাকসুর ভিপি ( ভাইস প্রেসিডেন্ট) হচ্ছেন ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য নির্বাচিত প্রতিনিধি। ছাত্র /ছাত্রীদের মধ্যে প্রধান ছাত্র বিষয়ক কর্মকর্তা এবং সবচেয়ে বড় পদ।সভাপতি হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য। ছাত্রদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান ও দাবিদাওয়া পরিষেবা আদায়ের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে ডাকসু নামক ছাত্র সংসদ। নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্বের বিকাশ এর পাশাপাশি গণতান্ত্রিক চেতনা অর্থাৎ হাসিমুখে জয় পরাজয় মেনে নেওয়ার মন মানসিকতা তৈরী হয়।এদেশের গণতান্ত্রিক চেতনা ও স্বাধীনতা আন্দোলনের সূতিকাগার হল এই ছাত্র সংসদ। জননেতা অ্যাডভোকেট এস,এ টি বারী এটি ১৯২৭ সালে ২৮ শে মার্চ জন্মগ্রহণ করে ১৯৮৭ সালের ৫ ই মার্চ পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন।মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয় জীবনে অনন্য অসাধারণ অবদানের জন্য ২০০২ সালে সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার “স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতা ” পুরস্কার পান। তাঁর পিতা মোহাম্মদ তাইমুর ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। ছোট বেলা থেকেই বাবার মত তিনিও ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। তাঁর স্ত্রী ছিলেন উম্মে সাহারা বা সাহারা বারী দিনাজপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা।দেশনেত্রী ম্যাডাম খালেদা জিয়ার সরাসরি শিক্ষক। তাঁদের পাঁচ কণ্যা সন্তান সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত।১৯৪১ সাল থেকে সকল প্রগতিশীল আন্দোলনের সাথে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন অগ্রনায়ক।তিনি ১৯৪২ সালে ভারত ছাড় আন্দোলনে অংশগ্রহণ এবং ১৯৫১ সালে সিভিল লিবার্টি লীগের সদস্য হন।১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার পর ১৪৪ ধারা ভংগের অভিযোগে তিনি গ্রেফতার হন।প্রায় একবছর কারাভোগের পর আবার চিরচেনা রাজপথে ফিরে এসে অগ্রভাগে শামিল হন।১৯৫৫ সালে ৯২-ক ধারা জারির প্রতিবাদ করতে গিয়ে পুনরায় গ্রেফতার হন। সেসময় তিনি কৃষক আন্দোলনের সাথেও যুক্ত হন। তিনি হ্রদয় দিয়ে অনুভব করেছিলেন যে,কৃষকের উন্নতি হলে দেশের উন্নতি হবে।কেননা তৎকালীন বাংলাদেশ ছিল কৃষি নির্ভর।তিনি ছিলেন তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্মাদক।,দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ছাত্র সম্মেলনের আহবায়ক এবং আন্তর্জাতিক ছাত্র ইউনিয়ন এর সদস্য।১৯৬১ সালে দিনাজপুরে আইনজীবী হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন।দিনাজপুর বার কাউন্সিলের সাধারণ সম্পদক এবং দিনাজপুর আইন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা। রাজপথের একজন লড়াকু সৈনিক মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় শরণার্থী শিবিরে ত্রানকার্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।তৎসংগে তিনি ছিলেন ডালিমগা ক্যাম্পের ইনচার্জ।।দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালে ন্যাপ ভাসানীর প্রার্থী হিসেবে এম,পি হতে না পারলেও ১৯৭৭ সালে ন্যাপের কেন্দ্রীয় মহাসচিব নির্বাচিত হন।১৯৭৯ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এর আহবানে সাড়া দিয়ে দেশ পুননির্মাণে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল থেকে দিনাজপুর -৮ আসনে, ধানের শীষ মার্কায় জনগণের ভোটের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। শহীদ জিয়ার মন্ত্রী সভায় জনশক্তি ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের পাশাপাশি উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসাবেও মহান দায়িত্ব পালন করেন।সে সময় তাঁর পি,এস ছিলেন দিনাজপুর সরকারী কলেজের অর্থনীতি বিভাগের তরুণ অধ্যাপক আজকের বি,এন,পির সম্মানিত মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এস,এ বারী এ,টি দেশের স্বাধীনতা অর্জন সহ জীবনের প্রতিটি ধাপে ধাপে তাঁর জীবন ও যৌবন অতিবাহিত করেছেন।এরকম একজন মহান কর্মবীরের অবদান দিনাজপুর বাসী চিরকাল মাথা উঁচু করে স্মরণ করবে।
/////////////////////////////////////////////////////////////////////////////////////////////////
লেখকঃ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট , [email protected]