(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) চলতি বছরের এইচএসসির একাধিক বিষয়ের প্রশ্নে নানা ধরনের ভুল পাওয়া গেছে। এডমিশনের প্রশ্ন থেকে হুবহু তুলে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। ঢাকা বোর্ডের অনুষ্ঠিত পরীক্ষার মধ্যে গণিত, পদার্থ, রসায়ন ও আইসিটি বিষয়ের একাধিক প্রশ্নে এমন অবস্থা দেখা যায়। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা গেছে। দায়িত্বহীনতা ও যথাযথ নজরদারির অভাবে এমন হয় বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা।
শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রশ্নপত্র ন্যূনতম গুরুত্ব দিয়ে তৈরি করা হলে বহুনির্বাচনি প্রশ্নের অপশনে উত্তর থাকত। এছাড়া লিখিত অংশ আসলেই সৃজনশীল বিবেচনা করলে বই ও অ্যাডমিশনের প্রশ্ন থেকে হুবহু তুলে দেওয়া হতো না।
প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, উচ্চতর গণিত দ্বিতীয় পত্রের বহুনির্বাচনি অংশের ২১ ও ২৩, নম্বর প্রশ্নের উত্তর অপশনগুলোতে নেই।
লিখিত অংশের সিনারিও-২ এ সিঙ্গুলার মানকে প্লুরাল মান হিসেবে উল্লেখ করেছে। আরেকটি উদ্দীপকের ব্যাপারেও একই অভিযোগ রয়েছে। যার কারণে শিক্ষার্থীরা বিভ্রান্ত হয়েছে।
এছাড়া ৭ নম্বর প্রশ্নটি হুবহু বই থেকে তুলে দেওয়া হয়েছে। এমন আরেকটি উদ্দীপকের পুরোপুরি বুটেক্সের আগের প্রশ্নের সঙ্গে সম্পূর্ণ মিলে গেছে বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।
এর আগে গত ৭ জুলাই অনুষ্ঠিত হওয়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (২৭৫) বিষয়ের বহুনির্বাচনি পরীক্ষার প্রশ্ন পত্র ‘ক’ সেটের ২২ নম্বর প্রশ্নের সঠিক উত্তর নেই। প্রশ্নে বলা হয়েছে, উদ্দীপকে Y এর মান ০, যখন- i. A = 1 B = 0, ii. A = 0 B = 1, iii. A = 1 B = 1
নিচের কোনটি সঠিক?
(ক) i ও ii (খ) i ও iii (গ) ii ও iii (ঘ) i, ii ও iii
শুধু তিন নম্বর অপশনেই সঠিক উত্তর রয়েছে। উত্তরের ব্যাখ্যা হলো- XOR gate এর Output ০ হয় যখন দুটি ইনপুট একই হয়। সে হিসেবে তিন নম্বর অপশন শুধু সঠিক। যেটা অপশনে নেই।
আর ২৪ নম্বর প্রশ্ন বলা হয়েছে, নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং ১১নং প্রশ্নের উত্তর দাও:
void main ()
} int i = 15, j j =j++ Printf (“%d %d”, i, j);
উদ্দীপকের প্রোগ্রামটি রান করলে i ও j এর মান কত হবে?
(ক) 15,15 (গ) 16,16 (খ) 15,16 (ঘ) 16,17
এই প্রশ্নের উত্তর হবে 16 ও 15 যেটা অপশনে নেই।
এছাড়া রসায়ন প্রথম পত্রের ১ নম্বর উদ্দীপক নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ রয়েছে। গণিত প্রথম পত্র ও পদার্থ বিষয়ের প্রশ্নপত্র নিয়েও একই অভিযোগ রয়েছে।

তানজিম হোসেন নামের একজন শিক্ষার্থী বলেন, একটা ভুল বহুনির্বাচনির প্রশ্নের জন্য অনেক বড় ক্ষতির মুখে আমাদের পড়তে হয়। কারণ ম্যাথের ভুল প্রশ্ন সমাধান করার পর বার বার অপশনগুলো উত্তর না পেলে আরও চাপ লাগে, যে নিজের ক্যালকুলেশন ভুল নাকি উত্তর ভুল? এটির ফলে অন্য প্রশ্ন সমাধানের জন্য সময় কমে আসে এবং ভুল করার আশঙ্কা বাড়ে।
আশিক ইসলাম নামে বেসরকারি কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, আসলে প্রশ্ন করার বিষয়ে শিক্ষকরা হয়তো গুরুত্বই দেননি। কারণ গুরুত্ব দিলে প্রশ্নের উত্তর কেন অপশনে থাকবে না? আবার সময় নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করলে তো এডমিশনের গাইড থেকে হুবহু তুলে দেওয়া হতো না।
মিরপুর এলাকার নাসির উদ্দীন নামের একজন অভিভাবক বলেন, এইচএসসি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা পরীক্ষা। এই পরীক্ষার প্রশ্নগুলোতে এত ভুল থাকলে বোঝা যায় শিক্ষাব্যবস্থার গুরুত্ব কত কমে গেছে। এমন পাবলিক পরীক্ষার বিষয়ে অন্তত মেজর ভুলে ভরা প্রশ্নপত্র গ্রহণযোগ্য নয়।
এবার এইচএসসি পরীক্ষায় চারটি বিষয়ে অন্তত ১০টি প্রশ্নের ত্রুটি লক্ষ্য করা গেছে। যার মধ্যে অনেক বহুনির্বাচনি প্রশ্নের অপশনে উত্তর ছিল না। এছাড়া উদ্দীপকের বর্ণনায়ও ত্রুটি লক্ষ্য করা গেছে।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ বলেন, প্রশ্নে নিয়মিত ভুল থাকা মোটও উচিত নয়। দায়িত্বহীনতা ও যথাযথ নজরদারির অভাবে এমন হয়। একাধিকবার একই ধরনের ভুল হওয়া দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সার্বিক চিত্রের অবস্থা জানান দেয়।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, এইচএসসি পরীক্ষা হলো উচ্চশিক্ষা অর্জনের প্রথম ও প্রধান সোপান। এই ধরনের পরীক্ষা ভুল প্রশ্ন মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবিরের মোবাইলফোনে একাধিক বার কল করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। -ডেস্ক রিপোর্ট