বুধবার , ১ অক্টোবর ২০২৫ | ২৮শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. আইন আদালত
  3. আর্ন্তজাতিক
  4. এক্সক্লুসিভ
  5. কৃষি ও কৃষাণ
  6. ক্যাম্পাস
  7. ক্রিকেট
  8. গল্প-সাহিত্য
  9. চাকুরি
  10. জাতীয়
  11. জেলার খবর
  12. টালিউড
  13. টেনিস
  14. তথ্য-প্রযুক্তি
  15. ধর্ম ও ইসলাম

হাসপাতালের বেডে আ.লীগের মন্ত্রীর হাতকড়া, আসলে কী ঘটেছিল

প্রতিবেদক
admin
অক্টোবর ১, ২০২৫ ১:৩০ অপরাহ্ণ

(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন কারাবন্দি থাকা অবস্থায় হাসপাতালে মারা গেছেন। তার মৃত্যুর পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাতকড়া পরানো একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে বলছেন, তিনি মারা যাওয়ার পরও হাতকড়া পরানো ছিল। কেউ কেউ দাবি করছেন, হাসপাতালের সিসিইউতে থাকা অবস্থাতেও তার হাতকড়া পরানো ছিল।

বিষয়টিকে অনেকে অমানবিক বলে দাবি করে সরকারের সমালোচনা করছেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং তাদের সমর্থকরা এই ছবিটি পুঁজি করে সামাজিক যোগাযোগামাধ্যমে সরকারের সমালোচনায় বেশ সরব হয়েছেন। তবে হাতকড়া পরানো ছবিটি মৃত্যুর পরও পরানো ছিল কি না কিংবা এটি সিসিইউতে থাকা অবস্থার কি না সে ব্যাপারে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

কারা কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, সাবেক এই মন্ত্রীকে গত এক বছরে বেশ কয়েকবার ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কারা বিধি অনুযায়ীই সাধারণ বেডে বন্দিকে হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়। ছবিটি পুরোনো হতে পারে। নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন মারা গেছেন হাসপাতালের সিসিইউতে। সেখানে তাকে হাতকড়া পরিয়ে রাখার কোনো সুযোগ নেই।

মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীরা বলছেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কোনো আসামির হাতে হাতকড়া পরানো আইনসিদ্ধ নয়, যদি তার পালানোর ঝুঁকি না থাকে। আওয়ামী লীগ টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে বিরোধী রাজনীতিকদের সঙ্গে এমন আচরণ করা হতো। নতুন বাংলাদেশে আগের সেই পদ্ধতি টিকিয়ে রাখা দুঃখজনক বলে মনে করেন তারা।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির মন্ত্রী-এমপি ও নেতাদের অনেকেই গ্রেফতার হন। এই ধারাবাহিকতায় ওই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশান থেকে গ্রেফতার হন প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সাবেক মন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার একাধিক মামলায় তিনি আসামি।

গ্রেফতারের পর থেকে সাবেক এই শিল্পমন্ত্রী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত প্রবীণ এই রাজনীতিককে বেশ কয়েক বার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সবশেষ গত ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের ৬০২ নম্বর ওয়ার্ডের মেডিসিন ইউনিটের ১২-এর ৩৫/ক নম্বর বেডে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি এক রাত ছিলেন। পরদিন (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে ১০৪ নম্বর (নর্থ) কেবিনে সিসিইউতে তাকে হস্তান্তর করা হয়। ‎তিনি ‘আনকন্ট্রোলড বাওয়েল অ্যান্ড ব্লাডার’ রোগে ভুগছিলেন। ঢামেকের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই তিনি মারা যান। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।

মৃত্যুর পরও হাতকড়া পরানো এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগামাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ‎এ ঘটনায় হাসপাতালের কেউ মুখ খুলতে নারাজ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানিয়েছেন, ওয়ার্ডে থাকাকালীন সাবেক এই মন্ত্রীর হাতে হাতকড়া ছিল। আইসিইউতে নেওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তার হাতে হাতকড়া দেখা গিয়েছে।

SS
হাতকড়া পরা অবস্থায় হাসপাতালের বেডে জামায়াত নেতা মাওলানা আব্দুস সুবহান। ছবি: সংগৃহীত

‎সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ছবিটি কোন সময়ের? জানতে চাইলে কারা অধিদফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (গণমাধ্যম ও উন্নয়ন) জান্নাত-উল-ফরহাদ বলেন, গত সেপ্টেম্বরে ছয় দফা নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। ছবিটি এই দিনগুলোর মধ্যে কোনো একটি সময়ের হতে পারে। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী নিরাপত্তার স্বার্থে বন্দিকে চিকিৎসার সময় হাতকড়া পরিয়ে তা বিছানার সঙ্গে বেঁধে রাখতে হয়। অথবা হাতকড়া কোনো কারারক্ষীকে ধরে রাখতে হয়। হাতকড়া খুলে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন সিসিইউতে ভর্তি ছিলেন এবং সেখানে হ্যান্ডকাফ থাকার কোনো সুযোগই ছিল না। পুরোনো ছবি ব্যবহার করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।

তবে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, হাতকড়া পরানোর ছবিটি যে সময়েরই হোক, এই সিস্টেমের পরিবর্তন দরকার। ‎মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, দুর্ভাগ্য হচ্ছে দেশে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ একাকার হয়ে গেছে। ১০ বছর আগেও যেমন ছিল, এখনো সেই একই অবস্থা বিরাজ করছে। এত মানুষের প্রাণহানি ও ত্যাগের পরও কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসেনি। প্রায় ৮০ বছরের এক বৃদ্ধ, অসুস্থ মানুষকে নিরাপত্তার অজুহাতে হাতকড়া পরিয়ে রাখা সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এমন ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। আমরা আগে যে চিত্র দেখতাম এখনো সে অবস্থাই রয়ে গেছে।

এই মানবাধিকার কর্মী বলেন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের মৃত্যু মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের উদাহরণ হয়ে থাকবে। একজন মৃত্যুপথযাত্রী ও পরবর্তী সময়ে মৃত মানুষের হাতে হাতকড়া পরিয়ে রাখা সম্পূর্ণ অমানবিক।

কী বলছে জেল কর্তৃপক্ষ

‎সাবেক এই মন্ত্রীর হাতকড়া পরিহিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পরা ছবি নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে জেল কর্তৃপক্ষ। তারা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সম্প্রতি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী সাবেক শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের একটি ছবি ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ জেল কর্তৃপক্ষ স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ছবিটি কোনোভাবেই তার আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থার নয়। অতএব, সকলের প্রতি অনুরোধ- দায়িত্বশীল নাগরিক মাধ্যম হিসেবে মৃত একজন ব্যক্তিকে নিয়ে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার থেকে বিরত থাকুন।

তারা আরও জানায়, প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ্য যে, অসুস্থতার কারণে কারাবন্দী অবস্থায় সাবেক এই মন্ত্রীকে একাধিকবার যথাযথ নিয়মে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। বাংলাদেশ জেল কর্তৃপক্ষ পুনরায় আপনাদের নিশ্চিত করছে যে, সকল বন্দীর মানবিক মর্যাদা রক্ষায় আমরা সর্বদা দায়িত্বশীল এবং উক্ত ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।

‎‎চিত্রটি নতুন নয়, আগেও ঘটেছে এমন ঘটনা

‎একজন রাজনীতিবিদকে হাসপাতালের বেডে হাতকড়া পরানোর এই চিত্রটি নতুন নয়, এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আওয়ামী লীগ টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে বিরোধীদের দমন-পীড়নের সব রেকর্ডই ভঙ্গ করেছে বলে অভিযোগ আছে। সে সময় পরিচিতি রাজনীতিক ও সম্মানী ব্যক্তিদের হাসপাতালের বেডে হাতকড়া পরিয়ে রাখার ঘটনাও ঘটেছে।

HH
হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি নিয়েই মায়ের জানাজায় বিএনপি নেতা আলী আজম। ছবি: সংগৃহীত

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা, পাঁচবারের সংসদ সদস্য মাওলানা আবদুস সুবহান। ২০২০ সালে ১৪ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে মারা যান। ওই সময় তার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সে ছবিতে দেখা যায়, ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থাতেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এ ছবিটি নিয়ে বেশ সমালেচনার জন্ম দেয়। তবে, মারা যাওয়া ব্যক্তি জামায়াতের নেতা হওয়ায় এবং ওই সময় আওয়ামী লীগের শাসনামল থাকায় বর্তমান সময়ের মতো তেমন আলোড়ন সৃষ্টি হয়নি বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

এ ধরনের আরেকটি ঘটনা তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল। ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলী আজম তিন ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়ে মায়ের জানাজায় অংশ নেন। ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়া নিয়েই মায়ের জানাজা পড়িয়েছেন তিনি।

‎আলী আজমের ভাই আতাউর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করলে তার ভাইকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়। জানাজা পড়ানোর সময় তার হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খুলে দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ খুলে দেয়নি।

‎জানাজার সময়ও আলী আজমের হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খুলে না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন জানাজায় উপস্থিত লোকজন। এ অবস্থায় আলী আজমের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে তখন দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। -নিউজ ডেস্ক

সর্বশেষ - আর্ন্তজাতিক