(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) ৩৫ বছর পর আবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসে ফিরেছে ভোটের উত্তাপ। বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু), হল ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল বুধবার (১৫ অক্টোবর)। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ, আর প্রশাসন নিয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
এবারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ওএমআর ব্যালট পদ্ধতিতে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন জানান, প্রতিটি ব্যালটে থাকবে ২৪ অঙ্কের নিরাপত্তা কোড ও একটি গোপন কোড, যা মেশিনে শনাক্তযোগ্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি অনুষদ ভবনে স্থাপন করা হয়েছে ১৫টি ভোটকেন্দ্র ও ৬১টি ভোটকক্ষ। প্রতিটি ভোটকক্ষে সর্বোচ্চ ৫০০ জন ভোটার ভোট দিতে পারবেন। চাকসুর ২৬টি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪১৫ জন প্রার্থী, আর হল ও হোস্টেল সংসদের ২৪টি পদের জন্য লড়বেন ৪৯৩ জন। মোট ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ৫১৬ জন। ভোটাররা পছন্দের প্রার্থীর নামের পাশে বৃত্ত পূরণ করে ভোট দেবেন। একাধিক বৃত্ত পূরণ করলে সেই ভোট বাতিল হবে।
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মহসিন বলেন, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ক্যাম্পাসজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। আমরা আশা করি, এই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে এবং আমাদের যে সমস্যাগুলো রয়েছে, সেগুলো নিরসনে ছাত্র সংসদ ভূমিকা রাখবে।
হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল নাইমা ফাইজা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন পর শিক্ষার্থীর কোলাহলে মুখরিত হচ্ছে। এত জমজমাট আয়োজন উৎসবমুখর পরিবেশ সর্বশেষ কবে ছিল তা আমার জানা নেই। কলা ঝুপড়ি, লেডিস ঝুপড়ি ও স্টেশন চত্বর সবখানেই ইদের আনন্দ বইছে।
শারীরিক শিক্ষা ও স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী নিবেদিত নিতু বলেন, দুপুর থেকেই ভিড় ছিল, কিন্তু রাতে দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না। শাটল ট্রেন আসার পর স্টেশন যেন উৎসবে পরিণত হয়। প্রার্থীরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের নিজেদের পক্ষে টানতে চেষ্টা করছেন।
নির্বাচন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা বলয়। নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখা, পুলিশ, র্যাব, ফায়ার সার্ভিস, রিজার্ভ ও স্ট্রাইকিং ফোর্স, গোয়েন্দা সংস্থা, বিএনসিসি ও রোভার স্কাউট। মাঠে থাকবেন পাঁচজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ১ হাজার ৫০ জন পুলিশ সদস্য এবং র্যাবের সাইকেল ইউনিটের ৪০ জন সদস্য। প্রয়োজনে বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সহায়তাও নেওয়া হতে পারে। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দেওয়ার আগে তিন স্তরের নিরাপত্তা তল্লাশি অতিক্রম করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বলেন, শিক্ষার্থীরা যেন নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, সেজন্য নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বাইরের কেউ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না। সাংবাদিকদের জন্য গোপন ব্যালট কক্ষ ছাড়া ক্যাম্পাসে থাকবে অবাধ প্রবেশাধিকার।
নির্বাচনের দিন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করা যাবে তিনটি নির্ধারিত পথ দিয়ে- কাটা পাহাড়, ৩ নম্বর গোডাউন এবং শহীদ মিনারের দক্ষিণের আর্চওয়ে। বৈধ বিশ্ববিদ্যালয় আইডি কার্ড সঙ্গে রাখা বাধ্যতামূলক। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা ব্যাংক পে–স্লিপ দেখিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন।
ভোটকক্ষে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকার সঙ্গে আইডি যাচাই শেষে ভোটারদের হাতে দেওয়া হবে পাঁচটি ব্যালট পেপার। গোপন কক্ষে নির্ধারিত পেন দিয়ে বৃত্ত পূরণ করতে হবে।
নির্বাহী সদস্য পদে সর্বোচ্চ পাঁচটি, হল সংসদে তিনটি ও হোস্টেল সংসদে তিনটি ভোট দেওয়া যাবে। নির্ধারিত সংখ্যার বেশি ভোট দিলে কেবল সংশ্লিষ্ট পদটির ভোট বাতিল হবে।
ভোট শেষ করে ব্যালট বাক্সে ভোট ফেলে বিকল্প পথ দিয়ে ভোটকেন্দ্র ত্যাগ করতে হবে, যাতে ভিড় এড়ানো যায়। নির্বাচন কমিশন ভোটারদের ভদ্র আচরণ ও সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে। অনিয়ম বা অভিযোগ জানাতে বলা হয়েছে এই নম্বরগুলোয়- ০১৮১৯৩৮৭১২২ ও ০১৮২২৯০৭৭৬১৪।
ভোটের দিন শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে শাটল ট্রেন ১১ বার বিশ্ববিদ্যালয় ও নগরীর মধ্যে চলাচল করবে। পাশাপাশি চলবে ৩০টি বাস। চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে প্রথম ট্রেন ছাড়বে সকাল সাড়ে ৭টা এবং শেষ ট্রেন রাত ১০টা ১০ মিনিটে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম ট্রেন ছাড়বে সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে এবং শেষ ট্রেন রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে।
নিউমার্কেট ও ষোলশহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ১০টি বাস ছাড়াও সকাল ১০টায় যুক্ত হবে আরও ৫টি অতিরিক্ত বাস। ক্যাম্পাস থেকে বিকেল ৩টা, ৪টা ও সাড়ে ৫টায় ফিরতি বাস ছেড়ে যাবে। -নিউজ ডেস্ক



















