(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হোসাইনের হত্যাকাণ্ড ঘিরে তৈরি হয়েছে ব্যাপক রহস্য। ঘটনার দিন পাশের ভবনের একটি সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে দুই তরুণ, যারা দ্রুত দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, তারা সরাসরি এই হত্যার সঙ্গে জড়িত।
পুরান ঢাকার আরমানিটোলার নূরবক্স লেনের ‘রৌশান ভিলা’ নামে একটি বাসায় হত্যাকাণ্ডটি ঘটে। গত রোববার (১৯ অক্টোবর) বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটের দিকে সেখানে এক ছাত্রীকে টিউশন দিতে গিয়ে খুন হন জুবায়েদ। নিচতলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত সিঁড়িতে রক্ত ছড়িয়ে ছিল। তার মরদেহ তিন তলার সিঁড়িতে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
হত্যার পরপরই ভবনটিতে থাকা ছাত্রীর পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। আটক করা হয় ওই ছাত্রীকেও। তদন্তে উঠে এসেছে, ছাত্রীটির প্রেমিক মাহির রহমানের সঙ্গে দীর্ঘ ৯ বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মাহির বোরহান উদ্দিন কলেজের শিক্ষার্থী। অপরদিকে ছাত্রীটি পড়াশোনা করছে ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে তাদের সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দেয়। ছাত্রীটি তার প্রেমিক মাহিরকে জানায়, সে জুবায়েদকে পছন্দ করতে শুরু করেছে। যদিও পুলিশ নিশ্চিত করেছে, জুবায়েদ ও ওই ছাত্রীর মধ্যে কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। এমনকি তাদের মধ্যে প্রেমভিত্তিক কোনো বার্তালাপও পাওয়া যায়নি।
এই বিষয়টি জানার পর ক্ষোভে মাহির ও তার এক বন্ধু মিলে জুবায়েদকে খুন করে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।

সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার ঠিক পরপরই ভবনটির পাশের একটি গলিতে দুই তরুণ দৌড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। একজনের পরনে ছিল কালো টি-শার্ট, অন্যজনের গায়ে গোলাপি টি-শার্ট। তবে ফুটেজটি কিছুটা অস্পষ্ট হওয়ায় তাদের মুখ পরিষ্কারভাবে দেখা যায়নি।
বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়া দুই তরুণের মধ্যে একজন হতে পারেন মাহির, আর অন্যজন তার বন্ধু। তাদের শনাক্ত করতে অভিযান চলছে।
আটক ছাত্রীকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সে অবগত ছিল না বলে দাবি করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে তার মধ্যে কোনো কান্না বা আতঙ্কের ছাপ দেখা যায়নি। বরং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় পাওয়া গেছে।
নিহত জুবায়েদ হোসাইন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি কুমিল্লা জেলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
গত এক বছর ধরে তিনি আরমানিটোলার ওই বাসায় এক ছাত্রীকে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি ও বায়োলজি পড়াচ্ছিলেন। সেই বাসাতেই ঘটেছে এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড।
ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই জবি শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলেন। পরে পুলিশ এবং লালবাগ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। রাতেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। বংশাল থানার সামনে টায়ার জ্বালিয়ে ও সড়ক অবরোধ করে তারা দ্রুত আসামিদের গ্রেফতারের দাবি জানান।
এদিকে নিহত জুবায়েদের পরিবারের সদস্যরা মামলা করতে থানায় প্রায় ১৫ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছেন। তারা ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করতে প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্রীটি, তার বাবা-মা, মামা, প্রেমিক মাহির রহমান এবং মাহির এক বন্ধু।
জুবায়েদের বড় ভাই ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী এনায়েত হোসাইন সৈকত জানান, আমরা ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করতে চাই। আমার ভাইয়ের হত্যার ন্যায়বিচার চাই।
যদিও এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। তবে পুলিশ জানিয়েছে, অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং দ্রুতই জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। -ডেস্ক রিপোর্ট


















