রবিবার , ২৬ অক্টোবর ২০২৫ | ৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. আইন আদালত
  3. আর্ন্তজাতিক
  4. এক্সক্লুসিভ
  5. কৃষি ও কৃষাণ
  6. ক্যাম্পাস
  7. ক্রিকেট
  8. গল্প-সাহিত্য
  9. চাকুরি
  10. জাতীয়
  11. জেলার খবর
  12. টালিউড
  13. টেনিস
  14. তথ্য-প্রযুক্তি
  15. ধর্ম ও ইসলাম

আব্দুল্লাহ–সুরাইয়াকে কে দেবে পিতৃস্নেহ?

প্রতিবেদক
admin
অক্টোবর ২৬, ২০২৫ ৪:৫৮ অপরাহ্ণ

(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) শরীয়তপুরের নড়িয়ার ঈশ্বরকাঠি গ্রামের ছেলে আবুল কালাম। বড় পরিবারের ছোট সন্তান তিনি। ভাই–বোনদের আদর–স্নেহেই কেটেছে তার শৈশব। কারণ কিশোর বয়সেই তিনি হারান বাবা–মাকে। সেই শোক বুকে নিয়ে ভাই–বোনদের আশ্রয়ে বড় হওয়া আবুল কালাম এবার নিজের স্ত্রী–সন্তানকে রেখে পাড়ি জমালেন না–ফেরার দেশে।

রাজধানীর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের একটি পিলার থেকে ১৫০ কেজি ওজনের একটি বিয়ারিং প্যাড উপর থেকে পড়ে তাকে থেঁতলে দেয়। কোনো সতর্কতা, কোনো সুযোগ পাননি তিনি। চোখের সামনে ফুরিয়ে গেল মাত্র ৩৫ বছরের জীবন।

2

রোববার (২৬ অক্টোবর) সকালে দুর্ঘটনার সময় আবুল কালামের পকেটে থাকা পাসপোর্টের মেয়াদ ছিল ২০৩৩ সাল পর্যন্ত। কিন্তু ২০২৫ সালের ২৬ অক্টোবরেই নিভে গেল তার জীবনপ্রদীপ। এমন আকস্মিক মৃত্যুর পর স্বজনরা যখন শোকে কাতর, তখন তার রেখে যাওয়া দুই শিশু সন্তান সবার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। পাঁচ বছরের আব্দুল্লাহ আর তিন বছরের সুরাইয়া জানেই না—বাবার চেয়েও কম বয়সে তারাও বাবাহারা হয়েছে।

স্বজনদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও প্রশ্ন—দুই শিশুকে কে দেবে পিতৃস্নেহ? কীভাবে তাদের বড় করবেন কালামের স্ত্রী?

দেড়শ কেজির বিয়ারিং প্যাডের আঘাতে স্বপ্নের সমাধি

দেশজুড়ে আলোড়ন তোলা এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো আবুল কালাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে শুরু করেন জীবনসংগ্রাম। সংসারের স্বাচ্ছন্দ্য ফেরাতে ২০১২ সালে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান তিনি। সেখান থেকে ফিরে ২০১৮ সালে পাশের গ্রামের আইরিন আক্তারকে বিয়ে করেন।

পরে কাজ শুরু করেন একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে। বিমানের টিকিট বিক্রি করে বেশ ভালোই চলছিল তার। প্রতিদিন সকালে বের হয়ে রাতে বাড়ি ফিরতেন। কিন্তু এক দুর্ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেল। আর কোনোদিন ঘরে ফিরবেন না তিনি। সন্তানরা দেখবে না বাবার প্রিয় মুখ।

1

প্রয়াত আবুল কালাম নারায়ণগঞ্জের জলকাঠি এলাকায় ভাড়া বাসায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকতেন। নিজের কষ্টভরা শৈশব ভুলে যেতে চাইতেন সন্তানদের হাসি দেখে। বাসায় ফেরার পর সন্তানরা দৌড়ে এসে যখন তার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ত, তখন হয়তো সব ক্লান্তি মিলিয়ে যেত। তাদের নিয়েই দেখতেন সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন।

কিন্তু ফার্মগেটের সেই নির্মম সকালে মেট্রোরেলের উপর থেকে ছিটকে পড়ল ১৫০ কেজি ওজনের একটি বিয়ারিং প্যাড। কোনো সতর্কতা বা নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় সেটি সরাসরি আঘাত করল তার মাথায়। মুহূর্তেই নিভে গেল জীবনের আলো। এক দুর্ঘটনায় পরিবার হারাল তাদের আশ্রয়; দুই শিশু হারাল পিতার স্নেহ, আর এক নারী হারালেন জীবনের সঙ্গী।

শোকার্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দেবে কে?

আবুল কালামের মৃত্যুর খবরে শোকার্ত ঈশ্বরকাঠি গ্রামের মানুষ। স্বজনদের পাশাপাশি কান্নায় ভেঙে পড়েছেন আশপাশের লোকজনও।

ঘরে বসে আবুল কালামের ছবি হাতে নিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বড় বোন সেলিনা বেগম বলেন, “আমার ভাইটি সারাজীবন কষ্ট করেছে। কিশোর বয়সে বাবা–মাকে হারিয়েছে। আজ দুই শিশুসন্তান রেখে সেও না–ফেরার দেশে চলে গেল। এখন এই শিশু দুটির কী হবে? কে দেবে তাদের পিতৃস্নেহ? তার বিধবা স্ত্রী কার কাছে যাবে? আল্লাহ, তুমি আমার ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে এমন কেন করলে?”

বন্ধুর মৃত্যুতে শোকে কাতর আবুল কালামের বাল্যবন্ধু রিহিনুজ্জামান বলেন, “এক মাস আগে আবুল কালাম গ্রামে এসেছিল। দেখা হয়েছিল আমার সঙ্গে। সেই হাস্যোজ্জ্বল বন্ধুটি আজ নেই—বিশ্বাস করতে পারছি না।”

3

জানা গেছে, দুর্ঘটনার দিন দুপুরে আবুল কালামের শেষ ফোনালাপ হয়েছিল মেজ ভাবি আছমা বেগমের সঙ্গে। তিনি ফোনে বলেছিলেন,
“ভাবি, ইলিশ মাছ কিনে রাখেন, দু-এক দিনের মধ্যে বাড়ি আসব।”

আছমা বেগম বলেন, “সে বলেছিল ইলিশ কিনে রাখতে। আমি রেখেছিলামও… কিন্তু এখন কে খাবে সেই ইলিশ?”

নিহতের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা ও চাকরির প্রতিশ্রুতি

এদিকে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে নিহত আবুল কালামের পরিবারকে প্রাথমিকভাবে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সড়ক ও রেল উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।

তিনি আরও বলেন, নিহতের পরিবারে কর্মক্ষম কোনো ব্যক্তি থাকলে তাকে মেট্রোরেলে চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। দুর্ঘটনাস্থল ফার্মগেট স্টেশন পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এ তথ্য জানান।

5

অন্যদিকে, দুর্ঘটনা তদন্তে সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ আব্দুর রউফকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে।

এমন দুর্ঘটনায় অবহেলা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা

প্রকৌশল সূত্রে জানা যায়, বিয়ারিং প্যাড বা কম্পন নিয়ন্ত্রণ স্প্রিং মূলত ট্রেন চলাচলের সময় লাইনের কম্পন শোষণ করে কাঠামোর স্থিতি বজায় রাখে। এসব যন্ত্রাংশের বোল্ট সংযোগ মাসিকভাবে পরীক্ষা করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু নিয়মটি মানা হয়নি। দীর্ঘদিনের কম্পনের কারণে স্প্রিংটি আলগা হয়ে পড়ে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও সড়ক–পরিবহন অবকাঠামো বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল হক বলেন, “মেট্রোরেল প্রকল্প দীর্ঘ সময় নিয়ে নির্মিত হয়েছে। এটি সবচেয়ে মজবুত ও টেকসই হওয়ার কথা ছিল। যথাযথ ব্যয় ও পরিশ্রমের পরও যারা নির্মাণের দায়িত্বে ছিলেন, তাদের অবশ্যই ব্যর্থতার দায় নিতে হবে। তারা জানতেন—যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে, তবুও অবহেলা করেছেন।” -নিউজ ডেস্ক

সর্বশেষ - অর্থনীতি