মো. ইসমাইল হোসেন (দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) শহরের ব্যস্ততা থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরে, দিনাজপুর সদরের গাবুড়া ব্রিজের ঠিক নিচে, নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে এক ভিন্ন জগৎ অস্থায়ী বেদে পল্লী। প্রতি বছর এই সময়ে জীবিকার সন্ধানে ছুটে আসা এই যাযাবর জনগোষ্ঠী কয়েক সপ্তাহের জন্য এখানে তাদের তাঁবু আর প্লাস্টিকের ছোট ঘরগুলোকে আশ্রয়স্থল বানিয়েছে।
নদীর স্রোতের মতোই চলমান এদের জীবন। একদিকে শহরের পাকা দালান আর চলমান গাড়ি, অন্যদিকে নদীর কিনারে সারি সারি তাঁবু। এটিই এখন প্রায় ৫০-৬০ জনের এই জনগোষ্ঠীর ঠিকানা। এদের প্রধান পেশা যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলে আসছে তা হলো: বেদেদের অন্যতম আকর্ষণ, বিষধর সাপ নিয়ে তাদের রোমাঞ্চকর খেলা। হাতে তৈরি গয়না, ঐতিহ্যবাহী ও ভেষজ ওষুধ এবং নানা ধরনের সৌন্দর্য সামগ্রী ফেরি করে বিক্রি করা। পরিবারগুলো মূলত এই সামান্য আয়ের উপরই নির্ভরশীল। শিশুরা এখানে বেড়ে ওঠে প্রকৃতির খুব কাছে, যেখানে তাদের স্কুল হলো নদীর পাড় আর খেলার সঙ্গী হলো সাপ ও সরীসৃপ।
কয়েক সপ্তাহ ধরে এই অস্থায়ী বসতিতে থাকার পর, যখন তাদের ব্যবসা কমে আসে বা নতুন গন্তব্যের ডাক আসে, তখন তারা তাদের অল্প জিনিসপত্র গুছিয়ে নেয়। তাদের এই জীবন যেন এক চলমান উপন্যাস, যেখানে কোনো স্থায়ী ঠিকানা নেই, আছে শুধু নতুন পথ খোঁজার সংগ্রাম।
বেদেরা বলেন, এই বছর এইখানে, পরের বছর হয়তো আরও দূরে। এটাই আমাদের জীবন, নদীর স্রোতের মতোই শুধু চলতে থাকা। আমাদের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া শিখুক, কিন্তু পেটের তাগিদে আমাদের এই কাজ ছাড়ার উপায় নাই।



















