(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) দেশজুড়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে অনলাইন জুয়া। যা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে দুবাই-মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে। বিশেষ করে তরুণ সমাজকে টার্গেট করে আন্তর্জাতিক চক্রগুলো অনলাইনে ছড়িয়ে দিচ্ছে প্রলোভনমূলক বিজ্ঞাপনের ফাঁদ। আর সেই ফাঁদে জেনে-বুঝে কিংবা কৌতূহলী হয়ে পা দিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। আবার এসব বেটিং অ্যাপের আড়ালেই গড়ে উঠেছে এক বিশাল অবৈধ অর্থ লেনদেনের নেটওয়ার্ক। যেখানে লাখ-লাখ টাকার পাশাপাশি সর্বনিম্ন ৪১ পয়সার লেনদেনের তথ্যও পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
এমন পরিস্থিতির লাগাম টানতে যৌথ টাস্কফোর্স গঠন, কনটেন্ট ফিল্টারিং ও অ্যালগরিদমিক নজরদারি বাড়ানোসহ কঠোর পদক্ষেপের প্রস্তাব করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। সম্প্রতি অনলাইন জুয়া, বেটিং ও পর্নোগ্রাফি সাইট বন্ধ করতে সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি), বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি), সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, মোবাইল অপারেটর এবং মোবাইলে আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের সভায়ও অনলাইন জুয়া-বেটিং এবং এর মাধ্যমে অর্থপাচারের বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়েছে।
দেশের নেটওয়ার্কে অনলাইন জুয়ার অবাধ প্রবেশ, ফাঁদে তরুণরা

অন্যদিকে, বাংলাদেশে চলমান অনলাইন জুয়ার সাইটগুলো এখন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এগুলো কেবল সাধারণ ওয়েবসাইট হিসেবেই পরিচালিত হচ্ছে না, বরং ‘ডাইনামিক লিংক’, ‘মিরর সাইট’ ও ‘এআই-ভিত্তিক ক্যাপচা সিস্টেম’ ব্যবহার করে নিয়মিত তাদের সার্ভার ও ঠিকানা পরিবর্তন করছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কোনো ডোমেইন ব্লক করলেও অল্প সময়ের মধ্যে নতুন ঠিকানায় ফিরে আসে এসব সাইট।
আন্তর্জাতিক জুয়া চক্র এখন বড় অঙ্কের পরিবর্তে সর্বনিম্ন ৪১ পয়সা বা ১ টাকার ক্ষুদ্র লেনদেন (মাইক্রো বেটিং) ব্যবহার করছে। এই কৌশল দুর্বল আর্থিক শ্রেণির মানুষকে ফাঁদে ফেলে
আরও জটিল বিষয় হলো, অনেক বেটিং সাইট লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য জেসন বডির ভেতর এনকোড করে লুকিয়ে ফেলে, যা শুধু ব্যবহারকারীর স্ক্রিনে দৃশ্যমান, কিন্তু সাধারণ ওয়েব মনিটরিং সিস্টেমে ধরা পড়ে না। ফলে লেনদেন ট্র্যাক করা বা ফিন্যান্সিয়াল রুট শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়া, সাইবার গোয়েন্দারা যখন এসব সাইটে প্রবেশের চেষ্টা করেন, তখন তাদের ‘ক্রলার’ বা ট্র্যাকিং টুলস প্রায়ই ব্লক হয়ে যায়। কারণ, জুয়ার সাইটগুলো বিশেষভাবে আইপি অ্যাড্রেস ও ভিপিএন শনাক্ত করে অননুমোদিত প্রবেশ ঠেকাতে সক্ষম। এমনকি একই লগইন তথ্য (ক্রেডেনশিয়াল) একাধিকবার ব্যবহার করলে, সেই অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে অনুসন্ধানও বাধাগ্রস্ত হয়।
বিষয়টি নিয়ে সরকারের এক গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, আমরা নিজেদের ডেটা কল সিস্টেমে পরীক্ষা চালাতে গিয়ে দেখেছি যে, এক ঘণ্টা আগেও যে লিংকটি সচল ছিল, সেটি হঠাৎ করে অকার্যকর হয়ে যায়। আবার এক ঘণ্টা পর সেটি নতুন নামে পুনরায় সক্রিয় হয়। এভাবেই এই সাইটগুলো ডাইনামিক পদ্ধতিতে ব্লক এড়িয়ে চলে।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে এই অনলাইন জুয়া কার্যক্রম এতটাই প্রযুক্তিনির্ভর ও দ্রুত অভিযোজিত হয় যে, শুধুমাত্র টেকনিক্যাল দিক থেকে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। এজন্য দরকার একটি সমন্বিত রেগুলেটরি ও ফাংশনাল কাঠামো। যেখানে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, সামাজিক সংগঠন ও আর্থিক খাত একসঙ্গে কাজ করবে।
দুবাই-মালয়েশিয়া থেকে পরিচালিত হচ্ছে বেশিরভাগ জুয়ার সাইট
সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত একটি আন্তঃসংস্থা বৈঠকে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তদন্তকারীরা জানান, দুবাই-মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে পরিচালিত হচ্ছে বেশিরভাগ জুয়ার সাইট। এই চক্র বিদেশ থেকে রিমোট অপারেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের গ্রামীণ ও শহুরে ব্যবহারকারীদের লক্ষ্য করে অনলাইন জুয়ার কার্যক্রম চালাচ্ছে। মালয়েশিয়ায় হোস্ট করা কল সেন্টার থেকে প্রবাসী শ্রমিক ও সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে জুয়ার ফাঁদে ফেলা হচ্ছে।
এছাড়া, জুয়ার লেনদেন এখন আর প্রচলিত বড় টাকার অঙ্কে সীমাবদ্ধ নয়। এক সময় যেখানে ১০০, ২০০ বা এক হাজার টাকার বেটিং প্রাধান্য পেত, এখন দেখা যাচ্ছে যে ১ টাকা, ৫০ পয়সা বা এমনকি ‘৪১ পয়সা’ লেনদেনও কার্যকরভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
বেশিরভাগ জুয়ার সাইট দুবাই, মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ থেকে রিমোট অপারেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যবহারকারীদের টার্গেট করছে। অন্যদিকে, জুয়ার টাকা এখন সরাসরি ব্যাংকিং চ্যানেলে না গিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং (এমএফএস), বিদেশি ই-ওয়ালেট ও ক্রিপ্টোকারেন্সির বহুস্তরীয় নেটওয়ার্কে পাচার হচ্ছে
দেশের গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তকারী এক কর্মকর্তা বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, প্রথমে মনে হতো ছোট অঙ্কের লেনদেনগুলো তুচ্ছ। কিন্তু আমরা দেখেছি, এই ক্ষুদ্র লেনদেনের মাধ্যমে অপরাধীরা দুর্বল আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তার মানুষদের ছোট ছোট ফাঁদে ফেলে। আমরা সাম্প্রতিক সময়ে ৪১ পয়সার মতো লেনদেনের তথ্যও পেয়েছি। এটি ‘মাইক্রো বেটিং’ নামে পরিচিত একটি কৌশল, যা শনাক্ত করাও অত্যন্ত কঠিন।
এই কর্মকর্তা আরও জানান, এই ছোট লেনদেনগুলো ডাইনামিক এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল, অর্থাৎ লিঙ্কগুলো এক মুহূর্তে ব্লক হয়ে গেলেও মিনিটের মধ্যে পুনরায় সক্রিয় হয়ে যায়। ফলে প্রচলিত আর্থিক নজরদারি ব্যবস্থা কার্যকরভাবে এগুলো শনাক্ত করতে পারছে না।

তিনি উদাহরণ টানেন, মালয়েশিয়ায় পরিচালিত কল সেন্টার থেকে এক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের এক-একটি ‘মাইক্রো বেট’ করানো হয়। প্রথমে মাত্র কয়েক পয়সার লেনদেন শুরু হয়। একপর্যায়ে ব্যবহারকারী আসক্ত হয়ে বড় অঙ্কের বেটিং করতে বাধ্য হয়। পদ্ধতিটি আমাদের দেশে গ্রামীণ বা কম শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কার্যকর হচ্ছে।
জুয়ার টাকা পাচার হয় মোবাইল ব্যাংকিং-বিদেশি ওয়ালেট-ক্রিপ্টোর জটিল জালে
অনলাইন জুয়ার সঙ্গে যুক্ত অপারেটররা টাকা পাচারে এখন সরাসরি ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করছে না। তারা আর্থিক লেনদেনের জন্য গড়ে তুলেছে একটি বহুস্তরীয় ও জটিল পেমেন্ট নেটওয়ার্ক, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং, বিদেশি ই-ওয়ালেট ও ক্রিপ্টোকারেন্সি প্ল্যাটফর্ম।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রক্রিয়াটি শুরু হয় ক্ষুদ্র টোপ দিয়ে, যেখানে ব্যবহারকারীকে প্রতারণামূলকভাবে কোনো ওয়েবসাইট বা অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নামমাত্র অঙ্ক (৫০ পয়সা, ৪১ পয়সা বা ১ টাকা) মোবাইল মানি বা স্থানীয় এমএফএস অ্যাপে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
জুয়ার সাইটগুলো ব্লক এড়াতে ‘ডাইনামিক লিংক’, ‘মিরর সাইট’ ও ‘এআই-ভিত্তিক ক্যাপচা’ ব্যবহার করছে, ফলে কেবল ডোমেইন ব্লক করে এদের আটকানো যাচ্ছে না
এরপরই শুরু হয় দ্বিতীয় ধাপ। এই ধাপে সংগ্রহকৃত ক্ষুদ্র অঙ্কের টাকাগুলো একাধিক ভিন্ন ভোক্তার অ্যাকাউন্টে ইচ্ছাকৃতভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, যাতে লেনদেনের উৎসকে অস্পষ্ট ও জটিল করে তোলা যায়। আর ‘মাল্টি-অ্যাকাউন্টিং’-এর মাধ্যমে একই গ্রুপ অসংখ্য ভুয়া ব্যবহার হওয়া অ্যাকাউন্ট নিয়ন্ত্রণ করে এই প্রক্রিয়াকে আরও দুর্বোধ্য করে তোলে। তৃতীয় ও চূড়ান্ত ধাপে এই ছড়িয়ে থাকা টাকাগুলো একত্রিত করে একটি বড় অঙ্কে পরিণত করা হয় এবং তখনই এটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পাচারের জন্য প্রস্তুত হয়।
আর পাচারের এই চূড়ান্ত পর্যায়ে দুটি প্রধান পথ ব্যবহৃত হয়। প্রথমত, সমন্বিত টাকা স্থানীয় অ্যাকাউন্ট থেকে পিয়ার-টু-পিয়ার লেনদেনের মাধ্যমে বিদেশি ই-ওয়ালেটে স্থানান্তরিত হয়। দ্বিতীয়ত, টাকাকে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে রূপান্তরিত করা হয়। শেষে আন্তর্জাতিক এক্সচেঞ্জে সেগুলো বিক্রি করে বৈধ মুদ্রায় রূপান্তর করা হয়।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হলে শুধু ব্যাংকিং লগ নয়, এমএফএস অপারেটর, পিয়ার-টু-পিয়ার এক্সচেঞ্জার এবং ক্রিপ্টো-নেটওয়ার্কের ক্রস-প্ল্যাটফর্ম অডিটের প্রয়োজন। মূল চ্যালেঞ্জ হলো প্রচলিত অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং সিস্টেম সাধারণত বড় অঙ্কের লেনদেন শনাক্ত করতে সক্ষম হলেও ৫০ পয়সা বা ১ টাকার মতো ক্ষুদ্র ও অসংখ্য লেনদেন এই নজরদারির বাইরে থেকে যায়।
এই বহুস্তরীয় পদ্ধতির প্রভাব অত্যন্ত গভীর ও দ্বিমুখী। প্রথমত, এটি দেশের আর্থিক ব্যবস্থার ভেতর দিয়ে অবিরত অর্থ পাচার চালিয়ে যাচ্ছে, যা রাজস্ব ক্ষয়ের পাশাপাশি সম্পূর্ণ খাতের স্বচ্ছতাকে নষ্ট করছে। দ্বিতীয়ত, ক্ষুদ্র অঙ্ক দিয়ে শুরু করে ব্যবহারকারীর মধ্যে জুয়ার একটি প্রবল আসক্তি সৃষ্টি হচ্ছে, যা ধীরে ধীরে তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও আর্থিক স্থিতিশীলতাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
টাকা বন্ধ করতে পারলেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে অনলাইন জুয়া : প্রযুক্তিবিদ তানভীর জোহা
প্রযুক্তিবিদ তানভীর জোহা বলছেন, অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে ওয়েবসাইট ব্লক করা কার্যকর সমাধান নয়। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে জুয়ার লেনদেনে ব্যবহৃত মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট ও ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে অনলাইন জুয়ার মারাত্মক উত্থান হয়েছে। এটি একপ্রকার মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। সরকার পাঁচ হাজারের বেশি সাইট ব্লক করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও তা রোধ করা যাচ্ছে না। আসলে শাস্তির বাস্তবায়ন নেই। ভুয়া এমএফএস অ্যাকাউন্ট দিয়ে টাকা লেনদেন হচ্ছে। এই নম্বরগুলো শনাক্ত করে বন্ধ করতে হবে এবং সঠিক হোক বা ভুয়া, রেজিস্ট্রেশন করা ব্যক্তিকে আইনের আওতায় এনে জেল-জরিমানা করতে হবে। এভাবে মাত্র ১০টি উদাহরণ তৈরি করতে পারলে আমরা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাব।’
এখন পর্যন্ত ৫৮ হাজারেরও বেশি এমএফএস অ্যাকাউন্ট এবং ১ হাজার ৩৩১টি পোর্টাল বন্ধ করা হয়েছে। এনটিএমসি ১২৩টি জুয়ার অ্যাপ বন্ধ করেছে। প্রযুক্তিবিদদের মতে, সাইট ব্লক না করে টাকা লেনদেনের চ্যানেল (এমএফএস) বন্ধ করা এবং ভুয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীদের কঠোর শাস্তি দেওয়াই মূল সমাধান
বিটিআরসির ওয়েবসাইট ব্লক করার প্রচেষ্টা ‘অকার্যকর’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একটি সাইট ব্লক করলে আগে-পিছে একটি ডট বা বিভিন্ন চিহ্ন দিয়ে নতুন ঠিকানায় চলে আসছে। অধিকাংশ সাইট মালয়েশিয়া থেকে পরিচালিত হচ্ছে। তাই শুধু সাইট ব্লক করে লাভ হবে না। টাকা পাঠানোর জায়গাটা বন্ধ করতে হবে। এখানে দায়িত্ব আমাদের স্থানীয় ব্যাংক ও এমএফএস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের।’

এমএফএস চ্যানেলটি কার্যকরভাবে বন্ধ করতে পারলেই অনলাইন জুয়ার মূল অর্থপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে। আর এটিই হবে এই সমস্যা সমাধানের মূল চাবিকাঠি— যোগ করেন তিনি।
আন্তঃসংস্থার বৈঠকে যা জানালেন প্রতিনিধিরা
সম্প্রতি সরকারের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে অনলাইন জুয়া বন্ধে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সূত্রে জানা গেছে, এরইমধ্যে ৫৮ হাজার এমএফএস নম্বর বন্ধ করা হয়েছে। বিভিন্ন এমএফএস-ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যাদের অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তাদের ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে এনআইডি ও সিম ম্যাচিংয়ের মাধ্যমে এমএফএস অ্যাকাউন্ট যাচাইয়ের জন্য বিটিআরসি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বিত একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথাও সরকারকে জানিয়েছে বিএফআইইউ।
মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা জানান, তারা অনলাইন জুয়া, পর্নোগ্রাফি ও বেটিং সাইট বন্ধে এনটিএমসির সহায়তায় সক্ষমতা বাড়িয়েছেন। এরইমধ্যে অসংখ্য বেটিং ও পর্নসাইট বন্ধ করা হয়েছে। তবে, জুয়ার সাইটগুলো অনেক সিকিউরড এবং বিভিন্ন নামে হওয়ায় মাল্টিলেয়ারে কাজ করতে হবে। সেজন্য বিটিআরসি, নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) প্রতিনিধি বৈঠকে জানান, এনটিএমসির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারদেরকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১২৩টি জুয়ার অ্যাপ বন্ধসহ এ সংক্রান্ত অসংখ্য ওয়েব লিংক বা ইউআরএল ব্লক করা হয়েছে।
অন্যদিকে, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে, মোবাইল হ্যান্ডসেটের আইএমইআই ব্লাকলিস্ট পদ্ধতি চালু করার। যাতে কালো তালিকাভুক্ত সিম চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টাওয়ার থেকে সংশ্লিষ্ট অপারেটরের কাছে সংকেত চলে আসে।
জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) পক্ষ থেকে জুয়া ও বেটিং রোধে মোবাইল ও আইএসপি অপারেটরদের কনটেন্ট শনাক্তের সক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সিআইডি সাইবার পুলিশ সেন্টারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত দুই মাসে অনলাইন বেটিংয়ে জড়িত দুই হাজারের বেশি সিম শনাক্ত, বেটিংয়ের কাজে ব্যবহৃত ৬০০ সাইট ও ৫০টি অ্যাপ চিহ্নিত করা হয়েছে। অনেক অ্যাপ দেশের বাইরে থেকে পরিচালিত হয় বলেও জানানো হয়।
অনলাইন জুয়া বন্ধে আরও কঠোর হচ্ছে সরকার : ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব
দেশে অনলাইন জুয়া ও বেটিং বন্ধে সরকার আরও কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে— জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। সম্প্রতি তিনি জানান, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও বিটিআরসির সহায়তায় চলতি বছরের মে মাস থেকে চার হাজার ৮২০টি মোবাইলে আর্থিক সেবাদানকারী অ্যাকাউন্ট (এমএফএস) এবং এক হাজার ৩৩১টি পোর্টাল বন্ধ করা হয়েছে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, জুয়ার অর্থ লেনদেনকারী অ্যাকাউন্টের তালিকা তৈরি হচ্ছে এবং যেসব পোর্টালে জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচারিত হচ্ছে, সেগুলো বন্ধ করা হবে। একটি সাইট বন্ধ করলে অপরাধীরা একাধিক সাইট তৈরি করে এবং এমএফএস অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার পর তারা অ্যাপস-ভিত্তিক পদ্ধতিতে জুয়া চালু করে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি মোবাইল অপারেটরদের প্যাকেট করে পপ আপ ব্লক করার উদ্যোগ নিতে হবে। ট্রাফিক ক্লাসিফায়ার এমনভাবে ডিজাইন করতে হবে যাতে পপ আপ ব্লক করা যায়। এছাড়া, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানকে অ্যাকটিভ ক্রলার ব্যবহার করে জুয়া ও বেটিং বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে কনটেন্ট ফিল্টারিং ও অ্যালগরিদমিক নজরদারিও আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। -নিউজ ডেস্ক



















