শুক্রবার , ১৪ নভেম্বর ২০২৫ | ৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. আইন আদালত
  3. আর্ন্তজাতিক
  4. এক্সক্লুসিভ
  5. কৃষি ও কৃষাণ
  6. ক্যাম্পাস
  7. ক্রিকেট
  8. গল্প-সাহিত্য
  9. চাকুরি
  10. জাতীয়
  11. জেলার খবর
  12. টালিউড
  13. টেনিস
  14. তথ্য-প্রযুক্তি
  15. ধর্ম ও ইসলাম

‘হাজার খুনের’ প্রথম বিচার, দৃষ্টি সবার সোমবারে

প্রতিবেদক
admin
নভেম্বর ১৪, ২০২৫ ৩:১৮ অপরাহ্ণ

  • ১৭ নভেম্বর হাসিনা কামাল মামুনের রায়
  • ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার অভিযোগ
  • ২৮ কার্যদিবসে ৫৪ জনের সাক্ষ্য-জেরা
  • সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা রাষ্ট্রপক্ষের
  • রায়কে কেন্দ্র করে সহিংসতার শঙ্কা

(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) গত বছরের জুলাই-আগস্টে মানবতাবিরোধী মামলায় অভিযুক্ত তিন আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে সোমবার (১৭ নভেম্বর)। দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম কোনো প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা ও শিশু হত্যা মামলাগুলোর এটিই হবে প্রথম রায়। তিন আসামির মধ্যে শুধু চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন আটক রয়েছেন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে রায় কীভাবে কার্যকর হবে তা নিয়ে চলছে আলোচনা। সবার অপেক্ষা এখন সোমবারের।

এ বিষয়ে সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক বলেন, ‘শেখ হাসিনার বিচার আগামী দিনের সম্ভাব্য স্বৈরাচারের জন্য উদাহরণ হিসেবে থাকবে। আমাদের দেশে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি ফ্যাসিস্টের বিচারের ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এ বিচার নিয়ে গর্ব করবে।’

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আসাদুর রহমান বলেন, ‘রায় যদি স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়া ও আইনের বিধান প্রতিপালন করে প্রদান করা হয় তবে তা সর্বজন কর্তৃক গৃহীত হবে এবং সমাজ, দেশ তথা বিশ্বের জন্য একটি উদাহরণ হিসেবে রয়ে যাবে।’

প্রসিকিউশন টিমের প্রত্যাশা

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ সাজা ভবিষ্যতের জন্য এটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মনে করেন তিনি। শেখ হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক থাকলেও কারাগারে রয়েছেন চৌধুরী মামুন। তবে রাজসাক্ষী হয়ে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি। ফলে সাবেক এই আইজিপির শাস্তির বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন প্রসিকিউশন।

jULAY2
প্রায় দেড় হাজার মানুষকে হত্যার নির্দেশদাতা শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

যা বলছেন শেখ হাসিনার আইনজীবী

শেখ হাসিনার মামলা লড়তে সরকার রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন মনে করেন তার ‘ক্লায়েন্টরা’ খালাস পাবেন। বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে তার মূল্যায়ন এবং মামলার সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে আমির হোসেন বলেন, সাক্ষীদের জবানবন্দী ও জেরার প্রেক্ষাপটে আমি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আনতে সক্ষম হয়েছি। সবকিছু মিলিয়ে দালিলিক সাক্ষ্য সেসব জায়গায় আমি কন্ট্রোভার্সি ক্রিয়েট করার চেষ্টা করেছি এবং বিভিন্ন সময় দালিলিক সাক্ষীর উপরেও কন্ট্রোভার্সি ক্রিয়েট হয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি।

এই আইনজীবী বলেন, সাক্ষী জবানবন্দীসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া সমাপ্ত করে রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করায় আমি ট্রাইব্যুনালের সকল বিচারকদের ধন্যবাদ জানাই। বিচার প্রক্রিয়া আমার দেখা মতে কোনো অস্বচ্ছতা আমি দেখিনি, কারণ আমাকে কেউ কোনো রকমের ইন্টারাপ্ট করেনি। মামলা পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আমি নিয়ম ও আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, ডকুমেন্ট ও দলিলাদি পেয়েছি। আমার কাজে রাষ্ট্রপক্ষ কোনো বাধা দেয়নি।

মামলার বিচার প্রক্রিয়া যেভাবে সম্পন্ন হয়েছে

মোট ২৮ কার্যদিবসে ৫৪ জনের সাক্ষ্য-জেরা শেষে গেল ২৩ অক্টোবর শেখ হাসিনার মামলায় সমাপনী বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিশ্বের হেভিওয়েট নেতাদের যেভাবে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছিল, তিনি সেসব বর্ণনা ট্রাইব্যুনালে তুলে ধরেন। পরে আসামিপক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর যুক্তি উপস্থাপনের কয়েকটি বিষয়ে জবাব দেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তাদের কিছু কথার পাল্টা উত্তর দেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী আমির হোসেন।

শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় চলতি বছরের ৩ আগস্ট। প্রথম সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের বীভৎসতার চিত্র তুলে ধরেন খোকন চন্দ্র বর্মণ। ৮ অক্টোবর মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরের জেরার মাধ্যমে শেষ হয় সাক্ষ্যগ্রহণের ধাপ। এরপর প্রসিকিউশন ও স্টেট ডিফেন্স আইনজীবীর যুক্তিতর্ক সম্পন্ন হয় ২৩ অক্টোবর।

Julay4
রাজসাক্ষী হয়েছেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। ছবি: সংগৃহীত

যেসব অভিযোগ এনেছে প্রসিকিউশন

প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ ও ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ উল্লেখ করে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। এর পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ করে। গুলি করে দেড় হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়। আহত হন প্রায় ২৫ হাজার।

দ্বিতীয় অভিযোগ, হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইজিপি তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন ও অধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে সেই নির্দেশ কার্যকর করেন। গত বছরের ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এএসএম মাকসুদ কামাল এবং ১৮ জুলাই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা। দুজনের সঙ্গে কথোপকথনের পৃথক অডিও রেকর্ড থেকে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোকে মারণাস্ত্র ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।

শেখ হাসিনার সেই নির্দেশ তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির মাধ্যমে সব বাহিনীর কাছে দেওয়া হয়। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও তার অন্যান্য অঙ্গ সংগঠন এবং ১৪ দলীয় জোটের কাছেও এই নির্দেশ চলে যায়। সেই নির্দেশের আলোকে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়। এর দায়ে তাদের (হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও মামুন) বিরুদ্ধে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির (সর্বোচ্চ দায়) আওতায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।

তৃতীয় অভিযোগ, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করার ঘটনায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি আসাদুজ্জামান ও মামুনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। চতুর্থ অভিযোগ, রাজধানীর চানখাঁরপুলে আন্দোলনরত নিরীহ-নিরস্ত্র ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায়ও শেখ হাসিনার পাশাপাশি ওই দুজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। পঞ্চম অভিযোগ, শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও মামুনের বিরুদ্ধে আশুলিয়ায় নিরীহ-নিরস্ত্র ছয়জনকে আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনায়ও অভিযুক্ত করা হয়েছে।

Julay3
জুলাই আন্দোলন দমাতে চালানো হয় নির্বিচারে গুলি। ছবি: সংগৃহীত

আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার ও শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার। সাক্ষী করা হয়েছে ৮৪ জনকে। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

রায় কেন্দ্র করে সহিংসতার আশঙ্কা

শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণার দিন ১৩ নভেম্বর সারাদেশে লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল আওয়ামী লীগ। বিদেশে বসে নেতারা অনলাইনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করলেও দেশে রাজপথে তেমন কোনো উপস্থিতি ছিল না দলটির। তবে বিভিন্ন স্থানে নাশকতা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ। এবার রায় ঘোষণার দিনেও দলটি অনলাইনে কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে নাশকতার ছক আঁকছে বলে গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া গেছে।

তবে দলটির এসব অপতৎপরতা থামিয়ে দিতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সারাদেশে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সতর্ক রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোনো নাশকতা বা ষড়যন্ত্রই জুলাই গণহত্যার বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। প্রসিকিউশন টিমও আশা করছে, বাইরের কোনো তৎপরতাই ট্রাইব্যুনালে বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। -ডেস্ক রিপোর্ট

সর্বশেষ - অর্থনীতি