(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা সরকারি জমি বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে দুদকের করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) ঢাকার পাঁচ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন এই রায় ঘোষণা করেন।
এক মামলায় সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে। আরেক মামলায় সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মামলায় ২৩ নভেম্বর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। পরে আদালত রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য করেন। সে অনুযায়ী রায় দেওয়া হলো আজ।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেদিনই ভারতে পালিয়ে যান তিনি। তার পরিবারের অন্যরাও দেশের বাইরে।
ওই সময় থেকেই একের পর এক মামলা হতে থাকে থানা ও আদালতে। ২৬ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের পাঁচ সদস্যের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ছয়টি প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
পূর্বাচলের ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর সড়কের আশপাশের এলাকায় শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ছোট বোন শেখ রেহানা এবং তার ছেলে-মেয়ে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিকের নামে প্লটগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা ১০ কাঠার প্লট (প্লট নম্বর ৯) বরাদ্দ পেয়েছেন। ২০২২ সালের ৩ আগস্ট তার নামে রাজউক প্লটের বরাদ্দপত্র দেয়। সজীব ওয়াজেদ জয় (প্লট নম্বর ১৫) এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও (প্লট নম্বর ১৭) ১০ কাঠা করে প্লট পেয়েছেন। জয়ের বরাদ্দপত্র ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর দেওয়া হয় এবং ১০ নভেম্বর মালিকানা সংক্রান্ত রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়। পুতুলের বরাদ্দপত্র দেওয়া হয় ওই বছরের ২ নভেম্বর।
শেখ রেহানাও ১০ কাঠার প্লট (প্লট নম্বর ১৩) বরাদ্দ পেয়েছেন। তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির (প্লট নম্বর ১১) এবং মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর (প্লট নম্বর ১৯) নামেও একই পরিমাণের প্লট বরাদ্দ হয়েছে।
তার আগে অক্টোবর মাসে শেখ হাসিনার পরিবারের ছয় সদস্যের নামে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়ম নিয়ে সংবাদমাধ্যমে আসা অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয় হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এ কমিটিকে আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরে (২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে) রাজউকের প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগও তদন্ত করতে বলা হয়।
১৪ জানুয়ারি শেখ হাসিনাসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন দুদকের উপ পরিচালক সালাহউদ্দিন। তদন্তে পাওয়া আরো চারজনসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ১০ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া।
আর পুতুলের প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে তিনি ও তার মা শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ১২ জানুয়ারি মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া।
মামলার এজাহারে বলা হয়, পুতুলের নিজের বা তার পরিবারের অন্য সদস্যদের মালিকানায় ঢাকা শহরে রাজউকের এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা রয়েছে। এ তথ্য ‘গোপন’ করে রাজউকের আরেক প্রকল্প পূর্বাচল নতুন শহরে প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন পুতুল। সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের ‘প্রভাবিত ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন’।
এজাহারে বলা হয়, আসামিরা একে অন্যের সঙ্গে ‘যোগসাজশ করে নিজেরা লাভবান হয়ে ও অন্যকে লাভবান করার জন্য’ পুতুলের নামে প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। এক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগও আনা হয়েছে।
তদন্তে পাওয়া আরো দুই আসামিসহ মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে ১০ মার্চ অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা আফনান জান্নাত কেয়া।
জয়ের প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে তিনি এবং তার মা শেখ হাসিনাসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে ১৪ জানুয়ারি মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান। তদন্তে নাম আসা আরো দুজনসহ মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে ২৪ মার্চ অভিযোগপত্র দাখিল করেন রাশেদুল হাসান।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকারের সর্বোচ্চ পদে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ছেলের নামে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন। অথচ জয় প্লট বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য ছিলেন না।
চলতি বছর এপ্রিলে আদালত মামলার অভিযোগপত্রগুলো গ্রহণ করে শেখ হাসিনা, জয়, পুতুলসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। তাদের গ্রেফতার করা গেল কি না, সেই সংক্রান্ত প্রতিবেদন পুলিশকে জমা দিতে বলা হয়। তবে তাদের গ্রেফতার করা যায়নি জানিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ।
তাদের আদালতে হাজির হতে গেজেট প্রকাশ করা হয়। তবুও তারা আদালতে হাজির হননি। আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষে গত ৩১ জুলাই তিন মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন। গত ১১ অগাস্ট মামলা তিনটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়।
২৩ নভেম্বর হাসিনার মামলা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয় এবং জয় ও পুতুলের মামলায় আত্মপক্ষ শুনানি ও যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য আজকের দিন ঠিক করা হয়। -ডেস্ক রিপোর্ট



















