আব্দুস সালাম, হেড অব নিউজ (দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) দিনাজপুরে আগাম জাতের নতুন আলু উত্তোলন পুরোদমে শুরু হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে উৎপাদিত এই নতুন আলুর চাহিদা বাজারে ভালো থাকলেও, কৃষকরা গত বছরের তুলনায় এবার দাম কম পাচ্ছেন বলে দাবি করছেন। ফলন কিছুটা কম হওয়ায় লাভের পরিমাণ নিয়েও তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
বর্তমানে দিনাজপুর অঞ্চলে কৃষকের জমি থেকেই পাইকাররা নতুন আলু প্রকারভেদে ৬২ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। সদর উপজেলার কৃষক আবেদ আলি জানিয়েছেন, তিনি দুই বিঘা জমির আলু ৬৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। অন্যদিকে, ফুলবাড়ী উপজেলার মো. হামিদ তার ক্যারেজ জাতের আলু ৫৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন।
তবে, কৃষকদের দাবি, গত বছর মৌসুমের শুরুতে পাইকাররা আলু কিনেছিলেন ৮৫ থেকে ৯৫ টাকা কেজি দরে, যা বাজারে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। এ বছর মৌসুমের শুরুতে দাম কম পাওয়ায় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফলন আশানুরূপ না হওয়ায় কৃষকরা খুব বেশি লাভের আশা দেখছেন না, বরং ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।
অন্যদিকে, শহরের বাজারগুলোতে নতুন আলু প্রথম দিকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও, বর্তমানে তা ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবার জেলায় মোট ৪৮ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে, যার মধ্যে আগাম জাতের আলু চাষ হয়েছে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ পরিচালক (শস্য) মো. আনিছুজ্জামান জানান, দিনাজপুরের মাটি ও আবহাওয়া আলু চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী হওয়ায় প্রতি বছর কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে এবং আলু চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে, এ বছর মৌসুমের শুরুতেই বৃষ্টির পানি জমে যাওয়ায় আগাম আলুর ফলন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাজারে আগাম আলু উঠতে শুরু করলেও, ১৫ ডিসেম্বরের পরে প্রায় সব আগাম আলু উত্তোলনের উপযোগী হবে।
আলু উত্তোলন শুরু হওয়ায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আলু ব্যবসায়ীরা দিনাজপুরে এসে সরাসরি কৃষকের জমি থেকেই আলু কিনছেন। তারা প্রকার ভেদে ৬২ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে কিনে বস্তাভর্তি করে ট্রাকে লোড দিয়ে বিভিন্ন শহরে নিয়ে যাচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কুয়াচ্ছন্ন সকালেও নারী শ্রমিকেরা জমি থেকে আলু উত্তোলন, কুড়ানো, ওজন পরিমাপ এবং বস্তাভর্তির কাজ করছেন। ব্যবসায়ীরা মাঠেই ওজন শেষে কৃষকদের মূল্য পরিশোধ করে আলু নিয়ে যাচ্ছেন।
কৃষকরা আগাম আলু তোলার পর ওই জমিতে ভুট্টা রোপণ করবেন বলে জানিয়েছেন। কৃষি কর্মকর্তা মো. আনিছুজ্জামান বলেন, ফসল আবর্তনের এই পদ্ধতি জমির উর্বরতা বৃদ্ধিতেও সহায়ক। আলু চাষ করে লাভবান হওয়ার আগ্রহ বাড়ায় কৃষকরা এই দিকে ঝুঁকছেন।



















