(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) জুলাই যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে শোক জানানোর পাশাপাশি সহিংস পরিস্থিতি এড়িয়ে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ ও কমনওয়েলথ।
ওসমান হাদিকে হত্যার নিন্দা জানিয়ে ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে সহিংসতা পরিহার করে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদফতরে স্থানীয় সময় শুক্রবার সংস্থাটির নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক।
জাতিসংঘ মহাসচিব সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে, উত্তেজনা কমাতে ও সর্বোচ্চ সংযম দেখাতে আহ্বান জানিয়েছেন। ওসমান হাদির পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। সহিংসতার বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানদণ্ড অনুসরণ করে দ্রুত, নিরপেক্ষ, পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং স্বচ্ছ তদন্ত পরিচালনা করার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন।
এ ছাড়া ওসমান হাদির মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন কমনওয়েলথের মহাসচিব শির্লে বোচওয়ে। পাশাপাশি বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে শির্লে বোচওয়ে ওসমান হাদির পরিবার ও প্রিয়জনের প্রতি সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মীসহ সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সহিংসতার জন্য দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং সবাইকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। সরকারের এ বক্তব্যকে স্বাগত জানাই।’
সহিংসতা রোধ ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। এক বিবৃতিতে প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের অফিসে হামলাকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর উদ্বেগজনক আক্রমণ বলে বর্ণনা করেছে সংস্থাটি। শনিবার লন্ডন থেকে বিবৃতি দেন সংস্থাটির এশিয়া অঞ্চলের উপ-পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি।
এতে বলা হয়, আসন্ন নির্বাচনের প্রার্থী ও ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনের পরিচিত মুখ শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যার পর দুটি সংবাদপত্র অফিসে হামলা চালায় মব (উচ্ছৃঙ্খল লোকজন)। শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের অবসানের পর বাংলাদেশ গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য এক তীব্র সংগ্রামের মধ্য রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে। কিন্তু রাজনৈতিক সহিংসতা রোধ করতে না পারার পাশাপাশি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সরকারের ব্যর্থতা নাগরিক অধিকারকে মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে ফেলেছে। এর সঙ্গে আরও অধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বিবৃতিতে বলেন, ‘বাংলাদেশের যুবনেতা ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ড ছিল একটি ভয়াবহ ঘটনা। শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে দেশে যে মব আক্রমণ শুরু হয়েছে, তা প্রতিরোধে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। পাশাপাশি আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের অফিসে হামলা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর এক উদ্বেগজনক আক্রমণ। কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং ইনফ্লুয়েন্সার সামাজিক মাধ্যমে সহিংসতার প্ররোচনা দিচ্ছেন। সাংবাদিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মী, এমনকি শিল্পী ও গায়কদেরও পরিকল্পিতভাবে বিপদে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।’
সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ন্যায়বিচারের আওতায় আনতে হবে: অ্যামনেস্টি
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ড এবং এর পরের সহিংস ঘটনার দ্রুত, পূর্ণাঙ্গ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সামাজিক মাধ্যম এক্সে শনিবার দেওয়া এক পোস্টে এ আহ্বান জানায় লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক আঞ্চলিক অফিস।
পোস্টে উল্লেখ করা হয়, সহিংসতার অংশ হিসেবে প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার ও ছায়ানটের কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে এবং নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তা করা হয়েছে।
এ ছাড়া ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে পোশাকশ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায়ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি। সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সংস্থাটি বলেছে, এসব ঘটনায় অনেক মানুষ আহত হয়েছেন, সম্পত্তি ধ্বংস হয়েছে, এমনকি প্রাণহানিও ঘটেছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিয়ে সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের ন্যায়বিচারের আওতায় আনতে হবে।
দেশের পরিস্থিতি নিয়ে বিলসের উদ্বেগ
দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত ও যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস)। বিলসের এক বিবৃতিতে সহিংসতার জন্য দায়ীদের বিচারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিলসের নির্বাহী পরিচালক ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সাবেক প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ।
তিনি বলেন, ‘শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমে উস্কানি দিয়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের নামে দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারে হামলা ও অগ্নিসংযোগ
করানো, সম্পদের ক্ষতিসাধন, সংবাদকর্মীদের জীবন হুমকির মুখে ফেলা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠস্বর সাংবাদিক নূরুল কবীরকে হেনস্তার তীব্র নিন্দা জানাই।’
এ ছাড়া ছায়ানট ভবন ও নালন্দা বিদ্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ, খুলনায় সাংবাদিক হত্যা, ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে ময়মনসিংহের ভালুকায় এক পোশাক শ্রমিককে পিটিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা, ভারতীয় হাইকমিশন ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে হামলার চেষ্টা এবং রাজনৈতিক নেতাদের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের নিন্দা জানিয়েছেন তিনি।
সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকারের নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা করে বলেন, ‘দেশের জনগণের জানমাল রক্ষা করা সরকারের মৌলিক দায়িত্ব। অবিলম্বে নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিত করে প্রকৃত অপরাধীদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।’ -নিউজ ডেস্ক


















