(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার দিকে যাওয়া ত্রাণবাহী ওয়ার্ল্ড সুমুদ ফ্লোটিলার ৩৯টি জাহাজ আটকে দিয়েছে দখলদার ইসরায়েল। এর ফলে আর মাত্র একটি জাহাজ এখনো গাজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে আয়োজকরা।
রয়টার্সের যাচাইকৃত সরাসরি সম্প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, রাতের আঁধারে হেলমেট ও নাইট ভিশন গগলস পরিহিত ইসরায়েলি সেনারা নৌযানগুলোতে প্রবেশ করছে। এসময় যাত্রীরা লাইফ ভেস্ট পরে হাত উঁচু করে একত্রে বসে ছিলেন। ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, থুনবার্গকে ঘিরে রেখেছে সেনারা।
অন্যদিকে ফ্লোটিলা ট্র্যাকারের বরাতে রস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, ২১টি জাহাজে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি নৌবাহিনী। ধারণা করা হচ্ছে, আরও ১৯টি জাহাজে হামলা হয়েছে। এর বাইরে চারটি জাহাজ এখনো গাজা অভিমুখে যাত্রা করছে।
ট্র্যাকার আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী ২১টি জাহাজ থেকে অন্তত ৩১৭ জন কর্মীকে আটক করেছে। ইসরায়েলের আক্রমণের শিকার হওয়া জাহাজগুলোর কর্মীদের মধ্যে বিভিন্ন দেশের নাগরিক ছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন—স্পেন, ইতালি, ব্রাজিল, তুরস্ক, গ্রিস, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, সুইডেন, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের নাগরিকসহ আরও অনেক দেশের নাগরিক।

ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গাজাগামী সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে আটক অধিকারকর্মীদের ছবি প্রকাশ করেছে। তাদেরকে ইসরায়েলের আসদোদ বন্দরে নেওয়া হচ্ছে। তারা ইসরায়েলের স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার দিকে সেখানে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক বিবৃতিতে দখলদার পররাষ্ট্র জানিয়েছে, ‘হামাস-সুমুদ ফ্লোটিলার যাত্রীরা তাদের নিজ নিজ জাহাজে নিরাপদে ও শান্তিপূর্ণভাবে ইসরায়েলে যাচ্ছেন। সেখান থেকেই তাদের ইউরোপে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে। যাত্রীরা সবাই নিরাপদে আছেন এবং সুস্থ আছেন।’
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে, এই ‘ডিপোর্টেশন প্রক্রিয়া’ অনেক সময় লাগবে, সম্ভবত পুরো দিনই লেগে যেতে পারে।

এদিকে ফ্লোটিলায় ইসরায়েলি অভিযানের নিন্দা জানিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। একই সঙ্গে নিজ নিজ নাগরিকসহ আটক স্বেচ্ছাসেবীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছে।
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফ্লোটিলায় ইসরায়েলি অভিযানের নিন্দা জানিয়ে একে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ হিসেবে অভিহিত করেছে। ইস্তান্বুলের প্রধান প্রসিকিউটরের দফতর জানিয়েছে, আটক ২৪ তুর্কি নাগরিকের ঘটনায় তারা তদন্ত শুরু করেছে।
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো ফ্লোটিলায় দুই কলম্বিয়ান নাগরিক আটক হওয়ার পর ইসরায়েলের পুরো কূটনৈতিক প্রতিনিধিদলকে বহিষ্কার করেছেন এবং ইসরায়েলের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করেছেন।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমও ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলি বাহিনী ২৩ জন মালয়েশিয়ানকে আটক করেছে।
বেশ কয়েকজন ব্রাজিলিয়ান নাগরিক এবং একজন আইনপ্রণেতাকে আটকের পর ইসরায়েলের নিন্দা জানিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দি সিলভা।
এদিকে আটক সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়েছে জার্মানি।
জার্মান সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা ইসরায়েলি সরকারের সাথে যোগাযোগ রেখেছি এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে তাদের বাধ্যবাধকতা মেনে চলার এবং আনুপাতিকভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছি। আমরা জাহাজে থাকা সকলের সুরক্ষা নিশ্চিত করারও আহ্বান জানিয়েছি।’
স্পেনের শ্রমমন্ত্রী এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী ইয়োলান্ডা দিয়াজ সুমুদ ফ্লোটিলায় ইসরায়েলের অভিযানকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছেন এবং আটককৃতদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এছাড়াও, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড, পাকিস্তান, কুয়েতসহ দেশ ইসলায়েলের নিন্দা জানিয়েছে।
সূত্র: রয়টার্স, আনাদোলু



















