মো. ইসমাইল হোসেন (দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডট কম) এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার একদল স্কুলপড়ুয়া শিশু-কিশোর। তাদের উদ্ভাবনী এবং মজার একটি উদ্যোগের মাধ্যমে এলাকার ভুট্টাচাষিরা যে শ্রমিক-সংকটে ভুগছিলেন, তার সমাধান হয়ে গেল এক নিমেষে। শুধু তাই নয়, এর ফলে শিশুদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে কৃষিকাজের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও একতাবোধ।
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় এখন চলছে আগাম জাতের ভুট্টা রোপণের ভরা মৌসুম। কিন্তু প্রথাগত শ্রমিক পাওয়া কঠিন হওয়ায় এবং তাদের মজুরি অনেক বেশি হওয়ায় চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ছিল। ভুট্টা রোপণের কাজ সাধারণত সকাল ও বিকেলে অল্প সময়ের জন্য করতে হয়, যার জন্য প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিকেরা সহজে আসেন না।
এই প্রতিকূলতার মধ্যেই আশার আলো দেখাল ১০ থেকে ১৫ জনের একটি খুদে কৃষকের দল। স্কুল ছুটির দিন বা স্কুলের আগে-পরে হাতে কাজ না থাকলে, তারা দল বেঁধে নেমে পড়ে ভুট্টা রোপণের কাজে।
তাদের এই কাজের মূল আকর্ষণ হলো চড়ুইভাতি (পিকনিক) কৃষকের কাছ থেকে নগদ অর্থের চেয়ে একটি জমজমাট পিকনিকের প্রতিশ্রুতিই তাদের কাছে বেশি উদ্দীপক। এই চড়ুইভাতিতে অনেক অভিভাবকও অংশগ্রহণ করেন, যা সামাজিক বন্ধন আরও দৃঢ় করে।
খুদে কৃষকরা বলেন, আমাদের মূল আকর্ষণ ওই চড়ুইভাতি। অল্প সময়ের কাজ বলে মা-বাবা কিছু বলে না। আমরা সকালে হোটেলে খিচুড়ি খাই আর ৫০-১০০ টাকা পাই, যা দিয়ে স্কুলের টিফিন হয়ে যায়। কোনো কাজই ছোট নয়, আমাদেরও অভিজ্ঞতা হলো।
এই খুদে দলটির কাজ করার পদ্ধতিও বেশ সংগঠিত। তাদের দলে থাকে একজন (সরদার), যে কাজের জন্য জমি ঠিক করে এবং ১৫ ইঞ্চি পরপর লাল দাগ দেওয়া পাটের সুতলি ব্যবহার করে বীজ রোপণের দূরত্ব ঠিক রাখে।
শিবনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ বাসুদেবপুর ও দাদপুর এলাকায় দেখা যায়, খুদে কৃষকেরা পাশাপাশি সারিবদ্ধ হয়ে কাজ করছে। তাদের গতি দেখে চমকে উঠতে হয়। তারা মাত্র এক ঘণ্টাতেই এক বিঘা জমিতে ভুট্টা রোপণ করতে পারে।
ভুট্টাচাষি সুমন বলেন, বর্তমান সময়ে শ্রমিক পাওয়া অনেক কঠিন। তাই স্কুল ছুটির দিনে প্রতিবেশী ভাই-ভাতিজাদের দিয়ে ১ বিঘা জমির ভুট্টা লাগিয়েছি। এতে তারা ছোট থেকে কৃষিকাজের বাস্তব অভিজ্ঞতা পেল। তাদেরকে পিকনিকের খরচ করে দিয়েছি।
অভিভাবকেরাও এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ছেলেমেয়েরা যখন মোবাইল ও ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে পড়ছে, তখন ছুটির দিনের অবসর সময় তারা কৃষিকাজে ব্যয় করছে। এতে তাদের কৃষিকাজের বাস্তব অভিজ্ঞতার পাশাপাশি একে অন্যের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফ আব্দুল্লাহ বলেন, ফুলবাড়ী উপজেলায় এবার ৪ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ভুট্টা রোপণে যান্ত্রিকীকরণ এখনো সহজলভ্য না হওয়ায় শ্রমিক-সংকট থাকতেই পারে, কিন্তু এই খুদে কৃষকদের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণামূলক।



















