(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিথ হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১ মামলার রায়ে এ কথা জানান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার। তিনিসহ তিন সদস্যের বিচারপতি প্যানেল রায় পড়া শেষে হাসিনাসহ তিন আসামির সাজা ঘোষণা করবেন।
মামলার অন্য দুই আসামি হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ চলছে রায় পড়া। সেখানে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম এবং অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামানসহ বিজ্ঞ আইনজীবীরা উপস্থিত আছেন। অন্যদিকে ট্রাইব্যুনালের বাইরে রায় শোনার অপেক্ষায় নানা-শ্রেণি পেশার মানুষ।
তাদের দাবি, সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনাকে সর্বোচ্চ সাজা দিতে হবে। কারও আবার দাবি, সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে উন্মুক্ত মঞ্চে ১৪০০ বার ফাঁসি দিতে হবে।
এদিকে, শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা সরাসরি সম্প্রচার করছে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল বিটিভি। সেখান থেকে ফুটেজ নিয়ে সম্প্রচার করছে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোও।
এছাড়া এই রায় ঘোষণা সম্প্রচার করছে আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা রয়টার্সও। পাশাপাশি রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় বড়পর্দায় রায় ঘোষণা শুনছেন হাজার হাজার মানুষ।
এই মামলায় গ্রেফতার হওয়া একমাত্র আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে ‘রাজসাক্ষী’ হিসেবে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন।
তিনি জানান, গত বছরের ১৮ জুলাই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের মাধ্যমে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে সরাসরি লেথাল উইপন (প্রাণঘাতী অস্ত্র) ব্যবহারের নির্দেশ পেয়েছিলেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে মারণাস্ত্র ব্যবহার করে নিরীহ, নিরস্ত্র দেড় হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয় এবং ৩০ হাজার মানুষকে আহত করা হয়েছিল।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা জন্য ১৭ নভেম্বর দিন ধার্য করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
মামলার আসামিদের মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এখনো পলাতক। অন্য আসামি কারাগারে আটক সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাজসাক্ষী হয়েছেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় প্রথম মামলাটি (মিসকেস বা বিবিধ মামলা) হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। গত বছরের ১৭ অক্টোবর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম বিচারকাজ অনুষ্ঠিত হয়। সেদিনই এ মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।
প্রথম দিকে এ মামলায় শেখ হাসিনাই একমাত্র আসামি ছিলেন। চলতি বছরের ১৬ মার্চ মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি করার আবেদন করে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) এবং ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন।
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মোট পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। গত ১২ মে প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি ৪ হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার রয়েছে।
এর ভিত্তিতে গত ১ জুন ট্রাইব্যুনালে হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান ও আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। ওই দিনই ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ আমলে নেন। এরপর ১০ জুলাই তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
একপর্যায়ে এই মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে (অ্যাপ্রুভার) রাজসাক্ষী হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের করা আবেদন মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল। পরবর্তীতে এই মামলার রাজসাক্ষী হয়ে সাক্ষ্য দেন তিনি।
গত ২৩ অক্টোবর মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সমাপনী বক্তব্য দেন। তিনি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রার্থনা করেন।
পরে আসামিপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্যের জবাব দেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনিও শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সর্বোচ্চ শাস্তি চান। আজ কী রায় হবে, সেদিকে তাকিয়ে গোটা দেশ। -ডেস্ক রিপোর্ট



















