মো. আব্দুল আজিম (দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) দিনাজপুরে সমাজসেবায় অদম্য মোহাম্মদ আলী চৌধুরী। সমাজসেবা যার নেশা। বয়স তাকে আটকাতে পারেনি কোনক্রমেই। দিনাজপুর ফুলবাড়ী-পার্বতীপুর উপজেলার স্বনামধন্য পরিবারের সন্তান মোহাম্মদ আলী চৌধুরী ওরফে বাদশা চৌধুরী ৮৪ বছর বয়সেও সমাজের অসহায় গরীব দুখী মানুষের পাশে থেকে সাধ্যমত সেবা প্রদান করে চলেছেন। অসুস্থ থাকা অবস্থায় জেলার বিভিন্ন এলাকার মসজিদ মাদ্রাসার উন্নয়ন কাজে ছুড়ে চলেছেন তিনি। ফলে মানুষের ভালোবাসায় শিক্ত হয়েছেন।
দিনাজপুরের একজন প্রতিষ্ঠিত কর্মবীর লৌহমানব উপাধিতে ভূষিত বিশিষ্ট সমাজসেবী ও শিক্ষানুরাগী মোহাম্মদ আলী চৌধুরী ১৯৫৭ সাল হতে অদ্যাবধী জীবনের গোধুলীলগ্নে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এ সমস্ত কার্যক্রমের জন্য এলাকার মানুষ মোহাম্মদ আলী চৌধুরীকে লৌহমানব ও ব্রীজ মাস্টার উপাধিতে ভূষিত করেছেন। মোহম্মদ আলী চৌধুরী একজন অরাজনৈতিক মানুষ হয়েও যেভাবে সমাজের পিছিয়ে পরা শিক্ষার্থী, অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের পাশে দাড়াতে শিখেছেন সে কারনে দিনাজপুর বাসী মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর নাম তাদের হৃদয়ে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর কর্মময় তালিকায় রয়েছে, ব্রীজ, কালভার্ট, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধি, অসহায় পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নেয়া এবং মেধাবী অসুস্থ শিক্ষার্থীর চিকিৎসা প্রদানে ব্যয় বহন করা, পল্লী বিদ্যুৎ অফিস অনুমোদন এবং প্রতিষ্ঠা করনসহ বহুমুখি উন্নয়ন মুলক কাজ-কর্মে নিজ অর্থ ব্যয়ে এসকল কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও প্রকল্পের অনুমোদন নেয়ায় যেনো মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর নেশা।
একাধিক সুত্রে যানা গেছে, মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর কর্মময় জীবনের উষালগ্নে ১৯৫৭ সালে ফুলবাড়ী পোস্ট অফিস এর পরিবর্তে মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর নিজ গ্রাম শিবনগর ইউনিয়নের রাজারামপুরে পোস্ট অফিস প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাবেক পোস্ট মাস্টার জেনারেল বরাবর লিখিত দরখাস্তের মাধ্যমে তার কর্মময় জীবন শুরু করেন। সেই সুত্র ধরে ১৯৬১ সালে রাজারামপুর পোস্ট অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর নিজ গ্রাম রাজারামপুর থেকে শুরু করে শিবনগর, হামিদপুর ও হাবড়া ইউনিয়নের ২০ টি গভীর নলকূপে পিডিপি বিদ্যুতায়নের মাধ্যমে বিদুৎ সংযোগদান করত পার্বতীপুর, ফুলবাড়ী, নবাবগঞ্জ, ঘোড়াঘাট ও বিরামপুর উপজেলাকে কেন্দ্র করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ প্রতিষ্ঠা করেন যার প্রধান কার্যালয় জয়নগরে প্রতিষ্ঠিত হয়। ফুলবাড়ী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২, জাফরপুর বৃহৎ ব্রিজ, খশেরবাড়ী ব্রিজ, ফুলবাড়ী দ্বিতীয় ব্রীজ, নির্মাণ করনে যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর দরখাস্ত দাখিল এবং কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে ব্রিজ গুলির নির্মান কাজ সমাপ্ত করা হয়। সেই সাথে প্রধান প্রকৌশলী এলজিইডি ও সচিব যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে বরাবর দরখাস্ত দাখিলের মাধ্যমে এর কার্যক্রম শুরু হয়।
এছাড়া এলজিইডির মাধ্যমে ফুলবাড়ী ময়দা মিল থেকে শুরু করে রাজারামপুর, আমডুঙ্গীহাট, পাঠকপাড়া হাট, কালিহাট হয়ে বাড়াইহাট পাকা রাস্তা সংযোগ প্রায় ১৬ কিঃমিঃ রাস্তা পাকা করন ও প্রায় ১৮ টি কালর্ভাট ব্রিজ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়।
মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর একক প্রচেষ্টায় জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার জাফরপুর বৃহৎ ব্রিজ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়। নির্মিত সেই ব্রীজের নাম ফলকে দেয়া ছিল মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর নাম। সেই ফলকটি বর্ষার কারনে ভেঙ্গে পড়ে। পুনরায় মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর নামে ফলকটি নির্মাণের জোর দাবি জানিয়েছেন দিনাজপুরবাসী।
১৯৬৩ সালে মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর পিতা সাবেক এমএনএ নুরুল হুদা চৌধুরী সাহায্য কারী হিসেবে মোহাম্মদ আলী চৌধুরী দিনাজপুর জেলার থানা পর্যায়ে প্রথম ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু করেন এবং তা প্রতিষ্ঠিত হয়। যা হালে ২০১৯ – ২০২০ সালের মধ্যে মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর প্রচেষ্টায় ফুলবাড়ী সরকারি কলেজের ৬ টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু করা হয়। এর সুত্র ধরে, ফুলবাড়ী সরকারী কলেজে মাস্টার্স কোর্স চালুর লক্ষ্যে জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয় উপাচার্য বরাবর দরখাস্ত দাখিলের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন মোহাম্মদ আলী চৌধুরী। তার কার্যক্রম সম্পন্ন করনের মাধ্যমে মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর কর্মময় জীবনের দীর্ঘ পথ কার্যক্রমের পরিসমাপ্তি ঘটবে বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গ ক্রমে উল্লেখ যে, মোহাম্মদ আলী চৌধুরী তার কর্মময় জীবন কে বিদ্যানুরাগী ব্যাক্তি হিসেবে প্রকাশিত করার লক্ষ্যে রাজারামপুর সরফ উদ্দিন হাই স্কুল, ফুলবাড়ী থানার রামভদ্রপুর হাই স্কুল, দৌলতপুর গার্লস হাই স্কুল সেই সাথে ১৯৮০ দশক থেকে জেলা শহরের দিনাজপুর কলেজিয়েট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সাবেক সুরনাথ কলেজের টিনসেট বিল্ডিং থেকে একটি পুর্নাঙ্গ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর অসাধারণ কর্মসাধনায় একটি প্রতিষ্ঠিত বিদ্যাপিঠে রূপ নেয়।
এর সুত্র ধরে, আরডিআরএস ঠাকুরগাও থেকে ৭৫ ফুট একটি স্কুল বিল্ডিং, শিক্ষা সচিব বরাবর ৭৫ ফুট একটি দো-তলা স্কুল বিল্ডিং, জেলা পরিষদ সচিব বরাবর দরখাস্ত দাখিলের মাধ্যমে কলেজিয়েটের ৪ টি সৌচাগার নির্মাণ করেন। সেই সাথে কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকবৃন্দের জন্য মহিলা এবং পুরুষ শিক্ষক কমন রুম এবং কলেজিয়েট স্কুলের বিজ্ঞানাগার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন। এ লক্ষ্যে সাবেক জেলা প্রশাসক এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকবৃন্দ এই উন্নয়ন কাজে মোহাম্মদ আলী চৌধুরীকে সহায়তা করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা বরাবর ২৫-০৯- ২০০৭ ইং তারিখে দাখিলকৃত দরখাস্তের মাধ্যমে কলেজিয়েট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৪ তলা কলেজ ভবনটি নির্মিত হয়। যা মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর কর্মময় জীবনকে আলোক উজ্জ্বল করে রেখেছে৷
যার সুত্র ধরে, দিনাজপুর জেলাবাসী এবং প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকবৃন্দের দাবী অত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কলেজ ভবনটি মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর নাম করন করা হোক।
বিশেষ ভাবে উল্লেখ যে, ১৯৫৭ সাল থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর প্রচেষ্টায় এবং কর্মসাধনায় উল্লেখিত যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হয়েছে এবং এগুলো বাস্তবয়ন করার লক্ষ্যে তিনি কোন ভাবে কারো কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা গ্রহণ করেন নি।যা সকলেই অবগত রয়েছেন।
দিনাজপুর জেলা তথা বাংলাদেশের ইতিহাসে মোহাম্মদ আলী চৌধুরী তার জীবনের ৮৩ বছরের ইতিহাসে যে স্বাক্ষ্য রেখে যাচ্ছেন তা সাধারণ মানুষ এর সুবিধা ভোগ করে মোহাম্মদ আলী চৌধুরীকে অনুস্মরন করবেন মর্মে নতুন প্রজন্ম আশা প্রকাশ করছে।