রবিবার , ৬ অক্টোবর ২০২৪ | ৩রা পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. আইন আদালত
  3. আর্ন্তজাতিক
  4. এক্সক্লুসিভ
  5. কৃষি ও কৃষাণ
  6. ক্যাম্পাস
  7. ক্রিকেট
  8. গল্প-সাহিত্য
  9. চাকুরি
  10. জাতীয়
  11. জেলার খবর
  12. টালিউড
  13. টেনিস
  14. তথ্য-প্রযুক্তি
  15. ধর্ম ও ইসলাম

লাশ পোড়ানোর নেপথ্য কারিগর সেই কাফীর ভয়াবহ পাসপোর্ট জালিয়াতি

প্রতিবেদক
admin
অক্টোবর ৬, ২০২৪ ৭:৫০ পূর্বাহ্ণ

(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আন্দোলন দমাতে পুলিশের যে কয়জন কর্মকর্তার নাম বেশি আলোচনায় তাদের অন্যতম ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহীল কাফী। বিশেষ করে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করা সাভারে লাশ পুড়িয়ে গুম করার ‘নির্দেশদাতা’ হিসেবে এসেছে তার নাম। আওয়ামী লীগের পতনের পর সরকারি পাসপোর্টধারী কাফী মিথ্যা তথ্য দিয়ে একদিনে সাধারণ পাসপোর্ট সংগ্রহ করে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করেছিলেন। ভয়াবহ জালিয়াতি করে পাসপোর্ট পেলেও ভাগ্য সহায় হয়নি। গত ২ সেপ্টেম্বর দেশ ছাড়ার সময় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। একাধিক মামলায় কারাগারে থাকা কাফীকে চাকরি থেকে ইতোমধ্যে করা হয়েছে সাময়িক বরখাস্ত।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২৯তম বিসিএসের পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তা কাফী সরকারি পাসপোর্টধারী ছিলেন। কিন্তু লাশ পুড়িয়ে ফেলার ভিডিও নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হলে নিরাপদে দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করেন তিনি। এজন্য পাসপোর্ট অধিদফতরের উপপরিচালক পদে কর্মরত তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর শরণাপন্ন হন তিনি। অভিযোগ আছে, তার পরামর্শ ও সহযোগিতায় পাসপোর্ট পেতে নিজেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের স্প্রে-ম্যান সুপারভাইজার পদবি ব্যবহার করেন চতুর এই পুলিশ কর্মকর্তা। জানা যায়, বন্ধুর পরামর্শ অনুযায়ী স্প্রে-ম্যানের সুপারভাইজারের চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়ার অফিস আদেশের চিঠি ফটোশপ করে আব্দুলাহীল কাফী বসিয়ে আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করেন।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, কাফীর সেই পরিচিত কর্মকর্তা অত্যন্ত দ্রুততা ও গোপনীয়তার সঙ্গে আবেদন নিজে গ্রহণ না করে একজন ডিএডিকে দিয়ে জমা করান। আবেদনটি সুপার এক্সপ্রেস হিসেবে জমা হয় গত ১৫ আগস্ট। একদিন পর অর্থাৎ ১৬ আগস্ট কাফী পাসপোর্ট হাতে পান।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৬ আগস্ট সাধারণ পাসপোর্ট হাতে পেয়ে দেশ ছাড়ার সুযোগ খুঁজতে থাকেন কাফী। এর আগে পুরোপুরি আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। পরে সাধারণ পাসপোর্টে ভিসি লাগিয়ে ২ সেপ্টেম্বর বিমান বন্দর দিয়ে পালানোর সময় ধরা পড়েন।এদিকে লাশ পোড়ানোর ঘটনায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাকে জালিয়াতির তথ্য দিয়েও পাসপোর্ট পাওয়ার ঘটনা নিয়ে অধিদফতরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। কারা কারা এই প্রক্রিয়ায় জড়িত তাদের কয়েকজন শোকজ করার কথা জানা গেছে।

পাসপোর্ট অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে আলোচিত এই পুলিশ কর্মকর্তার সাধারণ পাসপোর্টের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। লাশ পুড়িয়ে গুম করার নির্দেশদাতাকে নিরাপদে দেশ ছাড়ার সুযোগ করে দেওয়ার পেছনে যারা জড়িত তাদেরও মুখোশ খুলে দেওয়া উচিত। না হলে রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে।’

জানা গেছে, কাফীকে এই কাজে সহযোগিতা করা কর্মকর্তা ছাত্র আন্দোলনের কিছুদিন আগে উপপরিচালক হিসেবে অধিদফতরে যোগ দেন। এর আগেও ২০১৮ থেকে কয়েকবছর পাসপোর্ট অধিদফতরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন।

যেভাবে সাধারণ পাসপোর্ট পান কাফী

২০১১ সালের আগস্ট মাসে ২৯তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে যোগদান করা কাফী ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর সরকারি পাসপোর্ট পান। পাসপোর্ট নম্বর- BG0017172, এখনো যার মেয়াদ আছে। কিন্তু ছাত্র-জনতার সরকার পতনের আন্দোলন ঘিরে সাভারে পুলিশের গুলিতে একাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে একাধিক লাশ পুড়িয়ে গুম করার চেষ্টা করার ভিডিও ভাইরাল হলে চাপে পড়ে যান কাফী। এরপর তিনি কোনোভাবে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু সরকারি পাসপোর্ট থাকায় ৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে দেশ ছাড়া সম্ভব নয় জেনে সাধারণ পাসপোর্ট নেওয়ার পরিকল্পনা করেন আলোচিত এই পুলিশ কর্মকর্তা।

এমন বিপদকালে বন্ধু এবং ঢাকা বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের একটি চক্র তথ্য গোপন করে সাধারণ পাসপোর্টের কাজে সহযোগিতা করেন বলে জানা গেছে।

তথ্যমতে, এই জায়গাতেও ভয়াবহ জালিয়াতি করেন এই পুলিশ সদস্য। নিজেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের ‘স্প্রে-ম্যান সুপারভাইজার’ পদের কর্মকর্তা পরিচয় দেখান। শুধু তাই নয়, চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি তাকে চাকরি থেকে ইস্তেফা দেওয়া হয়েছে বলে অফিস আদেশ তৈরি করে আবেদন করেন কাফী। চিঠির উপর বিষয়ের জায়গায় তার নাম লেখা হলেও নিচে ইস্তেফার আদেশের জায়গায় একই পদ উল্লেখ করে শফিকুল ইসলাম লেখা দেখা যায়।

bss_2
ভ্যানে বস্তার মতো রাখা হয় লাশ। পরে সেগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে উত্তর সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ করলে চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া যায়। সেখান থেকে নিশ্চিত করা হয়, স্প্রে-ম্যান সুপারভাইজার পদে এই দুই নামের কোনো ব্যক্তি কর্মরত নেই। অতীতেও ছিলেন না।

পরে আবেদনটি সুপার এক্সপ্রেস হিসেবে জমা হয় ১৫ আগস্ট। জমা দিয়ে ১৬ আগস্ট পাসপোর্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। পেশায় প্রাইভেট সার্ভিস হিসেবে আবেদন করা পাওয়া পাসপোর্ট নম্বর হলো (epassport: A08757046)। সেটা নিয়ে দেশ ছাড়তে গিয়ে বিমানবন্দরে ধরা পড়েন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাসপোর্ট অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন,  ‘একজন ই-পাসপোর্টধারীর একাধিক পাসপোর্ট রাখারও কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু কাফীকে সাধারণ পাসপোর্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে। পাশাপাশি তথ্য জালিয়াতিও করা হয়েছে।’

কে এই কাফী?

১৯৮৫ সালে সিরাজগঞ্জ সদরে জন্ম নেওয়া আব্দুল্লাহিল কাফী ২০১১ সালের আগস্ট মাসে ২৯তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে যোগদান করেন। ১৪ বছরের চাকরির জীবনে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি), ঢাকা জেলা পুলিশে কর্মরত ছিলেন। এই সময়ে অর্জন করেছেন বিপুল অবৈধ সম্পদ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাফীর প্রথম পোস্টিং ছিল ধানমন্ডিতে। এই এলাকায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসা। কর্মসূত্রে ঘনিষ্ঠতা হয় মন্ত্রীপুত্র শাফি মোদাচ্ছের খান জ্যোতির সঙ্গে। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় পেছনে ফিরতে হয়নি তাকে। সবশেষ পোস্টিং ছিল ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস)।

জানা যায়, মন্ত্রীপুত্রের সঙ্গে সখ্য থাকায় চাকরি জীবনে অনেকটা বেপরোয়া ছিলেন কাফী।

kafi-3নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা জেলার সাভার সার্কেলের পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা জেলার সাভার সার্কেলে দীর্ঘদিন কাজ করার সুবাদে কাফী বেশ বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন। তিনি একসময়ে ছাত্রলীগ করতেন, এর দোহাই দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। পুলিশের বিভিন্ন প্রোগ্রামে তিনি ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে বক্তব্যও দিয়েছেন।

ভ্যানে লাশ পোড়ানোর নেপথ্য কারিগর

কাফীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে উল্লেখ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, তিনি গত ৫ আগস্ট ঢাকার আশুলিয়ায় ছাত্রজনতাকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগে অভিযুক্ত। যে ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

গত ৩০ আগস্ট ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় আলোচনায় আসে আব্দুল্লাহিল কাফীর নাম। ভাইরাল ওই ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ সদস্যরা রাস্তা থেকে মৃতদেহ একটা ভ্যানে ছুড়ে ফেলছেন। একপর্যায়ে ভ্যানে স্তূপাকার লাশ একটি প্লাস্টিকের ব্যানার দিয়ে ঢেকে দেন পুলিশ সদস্যরা। ভ্যানে তোলা এক ব্যক্তির লাশ শনাক্তের মাধ্যমে জানা যায় ঘটনাটি আশুলিয়ার। যা নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

পরবর্তী সময়ে ফ্যাক্টচেক এই ঘটনার আদ্যোপান্ত তুলে আনে। এরপরই বেশি আলোচনায় আসে কাফীর নাম।

সাময়িক বরখাস্ত কারাবন্দি কাফী

সরকারি পাসপোর্ট থাকাবস্থায় পরিচয় গোপন করে নতুন পাসপোর্ট নিয়ে দেশ ছাড়তে গিয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর বিমানবন্দরে আটক হন কাফী। পরে গত ৫ আগস্ট ঢাকার আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতাকে হত্যার পর লাশ পোড়ানোর অভিযোগে সাভার ও হাজারীবাগ থানায় করা মামলায় তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রিমান্ড শেষে তিনি এখন কারাগারে রয়েছেন।

এরইমধ্যে আব্দুল্লাহিল কাফীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখা থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে তাকে বরখাস্ত করার কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, সাময়িক বরখাস্তকালীন তিনি বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত থাকবেন এবং বিধি অনুযায়ী খোরপোশ ভাতা প্রাপ্য হবেন।

এসব বিষয়ে কথা বলতে তিন দিন ধরে একাধিকবার পাসপোর্ট অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সেলিনা বানুর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। সূত্র : ঢাকা মেইল

সর্বশেষ - রাজনীতি